মক্কার মুশরিকদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বহুসংখ্যক মুসলিম মদিনায় হিজরত করেন। হিজরতের পর মদিনার মুসলিমরা তাঁদের আশ্রয় দেন। মুহাজির সাহাবিদের তাঁরা সর্বক্ষেত্রে নিজের ওপর প্রাধান্য দিতেন। তবু ঘর, পরিবার ও স্বদেশ হারানো সাহাবিরা অন্যের ওপর নির্ভর না করে স্বনির্ভর হওয়ার প্রত্যয় গ্রহণ করেন।
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, তোমরা বলো—রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে আবু হুরায়রা (রা.) বেশি বেশি হাদিস বর্ণনা করেন। তিনি আরো বলেন, মুহাজির ও আনসারদের কী হলো যে তারা তো আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর হাদিস বর্ণনা করে না? আমার মুহাজির ভাইয়েরা বাজারে ক্রয়-বিক্রয়ে ব্যস্ত থাকত আর আমি কোনো প্রকারে আমার পেটের চাহিদা মিটিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দরবারে পড়ে থাকতাম। তারা যখন অনুপস্থিত থাকত তখন আমি উপস্থিত থাকতাম। তারা যা ভুলে যেত আমি তা মুখস্থ করতাম।
আর আমার আনসার ভাইয়েরা নিজেদের ক্ষেত-খামারের কাজে ব্যস্ত থাকত। আমি ছিলাম সুফফার মিসকিনদের অন্যতম। তারা যা ভুলে যেত, আমি তা মুখস্থ রাখতাম। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০৪৭)
আবদুর রহমান ইবনু আউফ (রা.) বলেন, আমরা যখন মদিনায় আসি, তখন আল্লাহর রাসুল (সা.) আমার ও সাআদ ইবনু রাবি (রা.)-এর মধ্যে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন সৃষ্টি করে দেন।
পরে সাআদ ইবনু রাবি বললেন, আমি আনসারদের মধ্যে অধিক ধনাঢ্য ছিলাম। আমার অর্ধেক সম্পত্তি তোমাকে বণ্টন করে দিচ্ছি এবং আমার উভয় স্ত্রীকে দেখে যাকে তোমার পছন্দ হয়, বলো আমি তাকে তোমার জন্য পরিত্যাগ করব। যখন সে (ইদ্দত পূর্ণ করবে) তখন তুমি বিয়ে করবে। আবদুর রহমান (রা.) বললেন, এসবে আমার কোনো প্রয়োজন নেই। বরং (আপনি বলুন) ব্যবসা-বাণিজ্য করার মতো কোনো বাজার আছে কি? তিনি বললেন, কায়নুকার বাজার আছে।
পরদিন আবদুর রহমান (রা.) সে বাজারে গিয়ে পনির ও ঘি কিনে আনলেন। এরপর ক্রমাগত যাওয়া-আসা করতে থাকেন। কিছুকাল পরে আবদুর রহমান (রা.)-এর কাপড়ে বিয়ের হলুদ রঙের চিহ্ন দেখা গেল। এরপর আল্লাহর রাসুল (সা.) তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি বিয়ে করেছ? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, সে কে? তিনি বললেন, জনৈকা আনসারি মহিলা। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কী পরিমাণ মোহর দিয়েছ? আবদুর রহমান (রা.) বললেন, খেজুরের এক আঁটি পরিমাণ স্বর্ণ। নবী (সা.) তাঁকে বললেন, একটি বকরি দিয়ে হলেও ওলিমা করো। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০৪৮)
উল্লিখিত হাদিসদ্বয়ে কয়েকটি শিক্ষা আছে— ১. মুহাজির ও আনসারি সাহাবিদের উভয় দল কর্মোদ্যমী ছিলেন, ২. মুহাজির সাহাবিরা অন্যের ওপর নির্ভর না করে স্বনির্ভর হওয়াকে পছন্দ করেছেন, ৩. স্বনির্ভরতা চাইলে আল্লাহ স্বনির্ভর করে দেন। যেমন আবদুর রহমান (রা.) অল্প দিনেই স্বনির্ভর হন এবং স্বর্ণ মোহর দিয়ে বিয়ে করার সক্ষমতা অর্জন করেন, ৪. দুর্বল ব্যক্তিকে স্বনির্ভর হওয়ার আগ পর্যন্ত আশ্রয় দেওয়া আবশ্যক, ৫. দুর্বল ব্যক্তিকে স্বনির্ভর হতে অন্যরা যথাসাধ্য সহযোগিতা করবে, ৬. জ্ঞানচর্চায় আত্মত্যাগকারী ব্যক্তিকে মর্যাদাশীল করে। ইত্যাদি।
আল্লাহ সবাইকে স্বনির্ভর হওয়ার তাওফিক দিন। আমিন।
বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ