ব্যাপকভাবে ডেঙ্গুজ্বরের প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু রোগের কোনো ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়নি। সামগ্রিকভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার প্রতি সবিশেষ মনোযোগী হলেই কেবল ডেঙ্গু প্রতিরোধ সম্ভব। কালজয়ী জীবনাদর্শ ইসলামে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার সবিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। পবিত্র এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন জীবনযাপনের ব্যাপারে কোরআন ও হাদিসের বিভিন্ন জায়গায় বারবার উৎসাহিত করা হয়েছে এবং যারা পূতপবিত্র থাকবে তাদের জন্য প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে প্রভূত কল্যাণ ও সওয়াবের।
মদিনার নিকটবর্তী কুবা এলাকার লোকজন পরিচ্ছন্ন জীবনযাপন করত। তাদের ভূয়সী প্রশংসা করে মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘সেখানে এমন লোকেরা রয়েছে, যারা ভালোভাবে পবিত্রতা অর্জন করতে পছন্দ করে। আর আল্লাহতায়ালা পবিত্রতা অর্জনকারীদের পছন্দ করেন।’ (সুরা তওবা, আয়াত : ১০৮)।
আরও বর্ণিত আছে, নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা তওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং ভালোবাসেন অধিক পবিত্রতা অর্জনকারীদের। (সুরা বাকারা, আয়াত : ২২২)।
প্রিয় নবী (সা.) বলেন, তোমরা তোমাদের উঠান ও আঙিনা পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি করে রাখ। (জামে তিরমিজি-৭৭৬৯)।
ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো নামাজ, এ নামাজের জন্য পূর্বশর্ত আরোপ করা হয়েছে পবিত্রতা (অজু) অর্জনকে। আরেক হাদিসের মধ্যে পবিত্রতাকে ইমানের অর্ধেক বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
হজরত আবু মালেক আশআরি (রা.) বলেন, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ইমানের অর্ধেক।’ (মুসলিম, হাদিস : ২২৩)।
আল্লাহতায়ালা বলেন, হে মুমিনগণ, তোমরা যখন নামাজের জন্য প্রস্তুত হবে তখন নিজেদের মুখমণ্ডল ও হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করবে, মাথা মাসেহ করবে এবং পা গ্রন্থি পর্যন্ত ধৌত করবে; যদি তোমরা অপবিত্র থাক তবে বিশেষভাবে পবিত্র হবে। তোমরা যদি পীড়িত হও, কিংবা পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করে নেবে। (সুরা : মায়িদাহ, আয়াত : ৬)।
আল্লাহতায়ালা পবিত্রতা অর্জনের সরাসরি নির্দেশনা দিতে গিয়ে বলেন, হে বস্ত্রাচ্ছাদিত, উঠুন, সতর্ক করুন এবং আপনার প্রতিপালকের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করুন। আপনার কাপড় পবিত্র রাখুন, অপবিত্রতা পরিহার করে চলুন। (সুরা : মুদ্দাছছির, আয়াত : ১-৪)।
পশ্চিমা দেশগুলোতে মানসিক রোগী ও হতাশাগ্রস্ত লোকের সংখ্যা ক্রমে বেড়েই চলেছে। পাগলাগারদের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই মানসিক রোগ ও হতাশাগ্রস্ত লোকদের নিয়ে গবেষণাও হচ্ছে অধিক পরিমাণে। এক মার্কিন গবেষক তাঁর প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘আমি ডিপ্রেশন (মানসিক রোগে) আক্রান্ত কয়েকজন রোগীকে প্রতিদিন পাঁচবার মুখ ধৌত করিয়েছি। কিছুদিন পরে তাদের রোগ কমে যায়। অতঃপর, আরও কিছু রোগীর ক্ষেত্রে একই পদ্ধতি অনুসরণ করলাম এবং সেই সঙ্গে দিনে পাঁচবার হাত, মুখ ও পা ধোয়ার ব্যবস্থা করলাম। এবার তারা অনেকটাই সুস্থ হয়ে গেলেন।’ এ গবেষক তাঁর প্রবন্ধের উপসংহারে অকপটে স্বীকার করেছেন, মুসলমানদের মধ্যে মানসিক রোগ কম দেখা যায়। কারণ তারা দিনে কয়েকবার হাত, মুখ ও পা ধুয়ে থাকে। উচ্চ রক্তচাপের সহজ ওষুধ হলো অজু। এক হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অত্যন্ত আত্মপ্রত্যয় ও দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন, উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীকে প্রথমে অজু করিয়ে দিন, তারপর ব্লাড প্রেসার পরীক্ষা করুন, দেখবেন প্রেসার নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। এক মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ মুসলিম গবেষক বলেন, মানসিক রোগের কার্যকরী চিকিৎসা হলো অজু। পশ্চিমা দেশের মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞরা রোগীদের শরীরে অজুর মতো করে দিনে কয়েকবার পানি ঢেলে দেন। এতে রোগের উপশম হয় দ্রুত। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার আরেকটি উপায় হলো, গোসল। এটিও ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি নির্দেশিকা ও ইবাদত। সপ্তাহে ন্যূনতম একবার হলেও গোসল করাকে আবশ্যক করে দেওয়া হয়েছে ইসলামে। হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, রসুল (সা.) বলেছেন, জুমার দিন (শুক্রবার) গোসল করা প্রতিটি সাবালক ব্যক্তির জন্য ওয়াজিব। (বুখারি, হাদিস : ৪৭৯)। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালার জন্য প্রতিটি মুসলমানের অবশ্য কর্তব্য হলো (অন্তত) প্রতি সাত দিনের মাথায় নিজের মাথা ও শরীর ধৌত করা। (বুখারি, হাদিস : ৮৯৭; মুসলিম, হাদিস : ৮৪৯)।
সপ্তাহে একবার নখ কাটা, শরীরের অতিরিক্ত পশম পরিষ্কার করা মুমিনদের আবশ্যকীয় কাজ। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মানুষের স্বভাবজাত বিষয় পাঁচটি : ১. সুন্নতে খতনা। ২. নাভির নিচের পশম কাটা। ৩. বগলের নিচের পশম কাটা। ৪. নখ কাটা, ৫. গোঁফ ছোট করা। (বুখারি, হাদিস : ৫৮৮৯)।
তাই আসুন ইসলামের অনন্য নির্দেশনা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা আমাদের যাপিত জীবনের অপরিহার্য অনুষঙ্গরূপে গ্রহণ করে ডেঙ্গুসহ অপরিচ্ছন্নতাকেন্দ্রিক সব ধরনের রোগব্যাধি থেকে বেঁচে আনন্দময় জীবনযাপন করি।
♦ লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া গাফুরিয়া মাখজানুল উলুম টঙ্গী, গাজীপুর। খতিব, আউচপাড়া জামে মসজিদ টঙ্গী, গাজীপুর