পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার দ্বিতীয় দফায় ছাপ্পা ভোটের অভিযোগে এক প্রিসাইডিং অফিসারকে রীতিমতো ধমক দিলেন পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার ময়ুরেশ্বর কেন্দ্রের বিজেপি সেলিব্রেটি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়।
তৃণমূল কংগ্রেসের সাথে হাত মিলিয়ে ময়ুরেশ্বর কেন্দ্রেরএকটি বুথে প্রিসাইডিং অফিসারের বিরুদ্ধে ভোট করানোর অভিযোগ ওঠার পরই রবিবার দুপুরের দিকে দলীয় কয়েকজন কর্মীকে নিয়ে ময়ুরশ্বরের প্রচন্দ্রপুর স্কুলের ৩০ নম্বর বুথে আসেন লকেট। এরপর ওই প্রিসাইডিং অফিসারের সাথে কার্যত বচসায় জড়িয়ে পড়েন লকেট। একসময় ওই কর্মকর্তার সামনে দাঁড়িয়ে রীতিমতো আঙুল উঁচিয়ে টেবিল চাপড়ে ধমকাতে শুরু করেন লকেট।
লকেট বলেন, আমরা এই ভিডিওটি নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠাবো এরপর আপনি বুঝতে পারবেন। তৃণমূলের হয়ে আপনি বাংলার মানুষকে আঘাত করছেন। আপনি কত রুপি নিয়েছেন? আপনি অপেক্ষা করুন, আপনি এর ফল বুঝতে পারবেন’। আর লকেটের সামনে দাঁড়িয়ে কার্যত হতভম্ব হয়ে পড়েন ওই কর্মকর্তা।
বুথের মধ্যে ঢুকে একজন প্রিসাইডিং অফিসারকে ধমকানোর অভিযোগে বিজেপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে পারে কমিশন। কোনো প্রার্থী এভাবে বুথের মধ্যে ঢুকে প্রিসাইডিং অফিসারকে ধমকাতে পারেন কি না সে বিষেযে রিাপোর্ট তলব করা হয়েছে। কমিশন মোটেই বিষয়টিকে ভালভাবে দেখছে না বলে জানা গেছে।
এদিকে, বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ছাড়া দ্বিতীয় দফার ভোট মোটামুটি শান্তিপূর্ণ। এদিন রাজ্যটির সাত জেলার ৫৬টি আসনে নির্বাচন হয়। সকাল ৭টায় শুরু হয়ে ভোটগ্রহণ চলে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। তবে মাওবাদী অধ্যুষিত সাতটি কেন্দ্রে বিকেল ৪টায় শেষ হয় ভোট। ভোট সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে নির্বাচন কমিশন একাধিক ব্যবস্থা নিলেও বীরভূমের একাধিক জায়গা থেকে রাজ্যটির শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ছাপ্পা ভোট, রিগিং, বিরোধী দলের এজেন্টদের পেটানোর অভিযোগ উঠেছে। প্রথম দফার মতো দ্বিতীয় দফাতেও একাধিক বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর না থাকার অভিযোগ উঠেছে। তাছাড়াও ইভিএম মেশিন খারাপ হয়ে যাওয়ার দরুণ কয়েকটি বুথে ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া ব্যহত হয়। যদিও বড় কোন সহিংসতার ঘটনা ছিল না।
এই দফায় মোট ভোটারের সংখ্যা ছিল ১,২১,৭৪,৯৪৭। ভাগ্য পরীক্ষা হয়েছে ৩৮৩ প্রার্থীর। এরমধ্যে হেভিওয়েট প্রার্থীরা হলেন শিলিগুড়ি কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী, ভারতীয় ফুটবলের সাবেক অধিনায়ক বাইচুং ভুটিয়া, ওই কেন্দ্রেরই সিপিআইএম প্রার্থী সাবেক মন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য, সুজাপুর কেন্দ্রে তৃণমূলের আবু নাসের খান চৌধুরী, ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি কেনেদ্র উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তৃণমূলের গৌতম দেব, ইংলিশ বাজার কেন্দ্রে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী তৃণমূলের কৃষেন্দু নারায়ন চৌধুরী, ময়ুরেশ্বর কেন্দ্রে বিজেপির সেলিব্রিটি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ।
২০১১ সালের বিধানসভার নির্বাচনে কংগ্রেসকে সাথে নিয়ে নির্বাচনে লড়াই করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। সেবার কংগ্রেস ও তৃণমূল দুইটি দলই ১৮ টি করে আসনে জয় পেয়েছিল। সিপিআইএম জয়ী হয়েছিল ১৫টি আসনে। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা পেয়েছিল ৩টি এবং স্বতন্ত্র পার্টি ২ টি আসনে জয়ী হয়েছিল। কিন্তু এবারে বামেদের সাথে জোট করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে কংগ্রেস। স্বভাবতই এই দফায় রাজ্যটির শাসকদলকে কিছুটা কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি হতে হয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। মোট ছয়দফার ভোট পর্ব শেষ হবে আগামী ৫ মে। গণনা ১৯ মে।
বিডি-প্রতিদিন/ ১৭ এপ্রিল, ২০১৬/ রশিদা