বুধবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা

গৌরনদীতে সরকারদলীয় নেতা-কর্মীদের তাণ্ডব

মন্দিরে ভাঙচুর, আহত ২০, গ্রেফতার ৪

গৌরনদীতে সরকারদলীয় নেতা-কর্মীদের তাণ্ডব

নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে স্কুল ভবনের নির্মাণ কাজে বাধা দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোমবার সন্ধ্যায় সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা বরিশালের গৌরনদী উপজেলার সংখ্যালঘু অধ্যুষিত দোনারকান্দি গ্রামে দুই দফা হামলা চালিয়ে সার্বজনীন একটি দুর্গা মন্দিরের সাতটি প্রতিমা ও সাতটি বাড়ি ভাঙচুর করেছে। গৌরনদী উপজেলা ছাত্রলীগের নেতা শাওন হাওলাদারের নেতৃত্বে সরকারি দলের শতাধিক নেতা-কর্মী এ হামলা চালায়। হামলা ও পাল্টা হামলায় দুই শিক্ষক ও নির্মাণ শ্রমিকসহ উভয় পক্ষের ২০ জন আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত তিনজনকে গৌরনদী ও কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করায় ওই এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে এক এসআইকে ক্লোজড করেছেন জেলা পুলিশ সুপার। সরেজমিনে প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকাবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাব-ঠিকাদার হিসেবে গৌরনদী উপজেলার ছাত্রলীগের নেতা শাওন হাওলাদার নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে উপজেলার দোনারকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ করে আসছিলেন। স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অভিনাশ সরকার সোমবার বিকালে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে স্কুল ভবনের নির্মাণ কাজ করতে ছাত্রলীগের নেতা শাওনকে বাধা দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে শাওন লোহার রড দিয়ে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অভিনাশ সরকারের ওপর হামলা চালায়। তাৎক্ষণিক সভাপতির স্বজনরা প্রতিবাদ করলে উভয় গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে নির্মাণ শ্রমিক যুবলীগ কর্মী সাইফুল রক্তাক্ত জখমসহ উভয় পক্ষের পাঁচজন আহত হন। এ খবর মোবাইল ফোনে ছাত্রলীগ নেতা শাওন হাওলাদার উপজেলার মাগুরা গ্রামে ও শ্রমিক লীগ নেতা শাহআলম লস্কর কালকিনির ডাসার গ্রামে পৌঁছায়। খবর পেয়ে ওই দুই গ্রাম থেকে তিনটি ট্রাক যোগে সরকারি দলের শতাধিক নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা লাঠিসোঁটা, দেশীয় ধারালো অস্ত্র নিয়ে সোমবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত দোনারকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জড়ো হয়। এরপর উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা শাওন হাওলাদার, ডাসার গ্রামের শ্রমিক লীগ নেতা শাহআলম লস্কর, যুবলীগ নেতা টিপু মৃধা, আরাফাত শরীফের নেতৃত্বে সরকারি দলের শতাধিক নেতা-কর্মী সংখ্যালঘু অধ্যুষিত দোনারকান্দি গ্রামে হামলা চালায়। হামলাকারীরা সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ওই গ্রামে তাণ্ডব চালিয়ে সরকার বাড়ি সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরের দুর্গা, সরস্বতী, কার্তিক, অশুর, মহাদেব, গণেশ, লক্ষ্মী প্রতিমা ও গণেশ সরকার, সুশেন সরকার, কিরণ বিশ্বাস, কেশব বিশ্বাস, অনিল বিশ্বাস, গৌতম সরকার, চিন্ময় সরকারের বাড়ি ব্যাপক ভাঙচুর করে। এ সময় গৌতম সরকার ও সুশেন সরকারের ঘরের ভিতরের ঠাকুর মন্দিরের রাধাকৃষ্ণ প্রতিমা ভাঙচুর ও মালামাল লুটপাট করে তারা। এ সময় হামলায় চিন্ময় সরকারের মায়ের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠান পণ্ড হয়ে যায়। অনুষ্ঠানে আগত ২ শতাধিক নারী পুরুষ ও এলাকার অধিকাংশ মানুষ প্রাণের ভয়ে ছোটাছুটি করে আত্মরক্ষা করেন। হামলায় শিক্ষক শঙ্কর সরকার, শিক্ষিকা দিপু সরকার, প্রতিবেশী অসিম সরকার, উজ্জ্বল মল্লিক, অনিমেষ মল্লিক, বীরেণ মল্লিক, গৌরী অধিকারীসহ ১৫ জন আহত হয়েছেন। গতকাল সকালে দোনারকান্দি গ্রামের নসিমন চালক নরোত্তপ বিশ্বাসকে বাকাই হাটে বসে আসামি পক্ষের লোকজনে মারধর করে। খবর পেয়ে রাতেই বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার এ কে এম এহসানউল্লাহ, গৌরনদী ইউএনও মাসুদ হাসান পাটোয়ারী, পৌর মেয়র মো. হারিছুর রহমান, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান মিজান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। গৌরনদী থানার ওসি আবুল কালাম বলেন, এ ঘটনায় স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অভিনাস সরকার বাদী হয়ে ২৪ জনের নাম উল্লেখ করে ৬৪ জনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। রাতেই সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে টিপু মৃধা, কামরুল সরদার, হারুন মোল্লা, সাইফুলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। দায়িত্ব অবহেলার জন্য থানার এসআই মো. হাসানুজ্জামানকে বরিশাল পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়েছে বলে তিনি জানান। এদিকে জনতা ব্যাংকের পরিচালক অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দেন। অন্য দিকে উপজেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি কালিয়া দমন গুহ ও সাধারণ সম্পাদক প্রণব রঞ্জন বাবু দত্ত ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানান।

সর্বশেষ খবর