শুক্রবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

চট্টগ্রাম হবে সিঙ্গাপুর

দুই লাখ কোটি টাকার প্রকল্পে লাখো কর্মসংস্থানের হাতছানি

রিয়াজ হায়দার, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম হবে সিঙ্গাপুর

উন্নয়নের পথযাত্রায় চট্টগ্রাম হতে চলেছে সিঙ্গাপুর! নতুন নতুন প্রকল্পে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে সিঙ্গাপুরের মতো বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ মাথাপিছু আয়ের শহর হতে পারে দেশের ‘বন্দর শহর’ বা ‘বাণিজ্যিক রাজধানী’ চট্টগ্রাম। এমন আশাবাদ উন্নয়ন-সংশ্লিষ্টদের। সিঙ্গাপুরের মতো এমনিতেই আলাদা নির্ভরতা রয়েছে বাণিজ্যকেন্দ্র চাটগাঁর। এর ওপর দুই লাখ কোটি টাকার ধারাবাহিক বিনিয়োগ লক্ষ্যমাত্রা আর চীন-ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক সংযোগকে গুরুত্ব দিয়ে নিকট ভবিষ্যতেই এ বন্দর শহর একটি সমৃদ্ধ ও পরিচ্ছন্ন মেগাসিটিতে রূপান্তর হতে পারে। তবে এ জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন উন্নয়ন কাজের গতিশীলতা। পাশাপাশি স্বচ্ছতা নিশ্চিত হলে অগ্রগতিও ত্বরান্বিত হবে বলে মনে করছেন চট্টগ্রামবাসী। চলতি বছরের শুরুতেই চীন ও চট্টগ্রামের সংযোগ ঘিরে জাতীয় অগ্রগতির স্বপ্ন বুনেছিল দেশ। সে সময় ঢাকায় চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং-ইর নেতৃত্বে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে চট্টগ্রাম-মিয়ানমার হয়ে কুনমিং পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগ, রামু-কক্সবাজার, রামু-গুনধুম ডুয়েলগেজ রেললাইন এবং মিরসরাই ও আনোয়ারায় ‘স্পেশাল ইকোনমিক জোন’ স্থাপনে আশাবাদ উঁকি দেয়। আর এই আশাবাদ বছরের শেষান্তে চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের বাংলাদেশ সফরের মধ্য দিয়ে কার্যকর হওয়ার পথ উন্মুক্ত করে। দ্বিপক্ষীয় চুক্তির ভিত্তিতে স্বপ্ন সত্য হতে শুরু করেছে কর্ণফুলী নদীতে টানেল নির্মাণ, আনোয়ারা ও মিরসরাইয়ে স্পেশাল ইকোনমিক জোন স্থাপন, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বেশ কিছু মেগা প্রকল্পের। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) বে-টার্মিনাল নির্মাণ, অনুমোদনপ্রাপ্ত কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা ল্যান্ডিংয়ের জন্য বার্থ তৈরি, ‘গ্রিনপোর্ট’ কনসেপ্টকে ধারণ করে দূষণমুক্ত বন্দর প্রতিষ্ঠায় নানা প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। রয়েছে উড়াল সেতু, সড়ক সংস্কার, খাল-নদী খনন, পানি সরবরাহ প্রকল্পসহ বন্দর, সিটি করপোরেশন, সিডিএ, ওয়াসা ইত্যাদি সংস্থায় হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প। স্পেশাল ইকোনমিক জোন, টানেল নির্মাণসহ বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোতে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলেও আশাবাদ রয়েছে চট্টগ্রামবাসীর। গেল ১৯ নভেম্বর লালদীঘি মাঠে ভার্চুয়াল জনসভায় গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রীর যোগদানের ঠিক আগে একটি সরকারি ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়। এতে দেখানো হয়, চট্টগ্রামে ১০৫টি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। তন্মধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে ৯৯টি এবং ছয়টি রয়েছে বাস্তবায়নাধীন। পরশু অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে মুরাদপুর-লালখানবাজার ফ্লাইওভারের জন্য বর্ধিত ব্যয় ২৩৫ কোটি টাকা অনুমোদন হয়েছে। ক্ষমতাসীন জোটের হয়ে চট্টগ্রাম শহর (আংশিক) ও বোয়ালখালী আসনের সংসদ সদস্য, জাসদ কার্যকরী সভাপতি মঈন উদ্দিন খান বাদল জানান, চট্টগ্রামের উন্নয়নে দুই লাখ কোটি টাকা বিনিয়োগের স্বপ্ন দেখা হচ্ছে। চট্টগ্রামের উন্নয়ন মানেই বাংলাদেশের উন্নয়ন, এটি জাতীয় উন্নয়নের সমার্থক। তবে এ উন্নয়ন প্রক্রিয়ার গতি ‘মন্থর’ এবং ‘ঢিমেতালে’ বলেও নিজের দুঃখবোধের কথা জানান ক্ষমতাসীন জোটের শরিক দলের এই এমপি। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, চট্টগ্রামকে কেন্দ্র করে বিনিয়োগের যে বৈশ্বিক আগ্রহ, এটিকে ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারলে চট্টগ্রাম অবশ্যই সিঙ্গাপুর হবে। আর তা না হলে নাইজেরিয়ার হারানো রাজধানী ‘লেগোস’-এর মতো ‘মরা শহরে’ পরিণত হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।

চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (সিসিসিআই) সভাপতি ও সার্ক চেম্বারের সহ-সভাপতি মাহবুবুল আলমও যথার্থ উন্নয়ন প্রণোদনায় চট্টগ্রাম সিঙ্গাপুরের মতো উন্নত হয়ে উঠবে বলে আশাবাদ জানিয়েছেন। তবে উন্নয়ন প্রকল্পের সময় বৃদ্ধিজনিত কারণে যাতে ব্যয় বেড়ে না যায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখারও তাগিদ দিয়েছেন তিনি। বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মঈনউদ্দিন আহমেদ মিন্টুও অভিন্ন আশাবাদ জানিয়েছেন। তবে তিনি এও বলেন, পোশাকশিল্পের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নিশ্চিতে অবকাঠামো খাতেও সুপরিকল্পিত উন্নয়ন জরুরি। স্বচ্ছতার সঙ্গে টেকসই দ্রুত উন্নয়ন নিশ্চিত করা গেলে হয়তো ১০ বছরের মধ্যেই চট্টগ্রাম সিঙ্গাপুরের মতো হতে পারে বলে আশাবাদ পোশাক উৎপাদনকারী মালিকদের এই নেতার।

সর্বশেষ খবর