দীর্ঘ ৫৬ বছর প্রতীক্ষার পর অবশেষে পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্র নির্মাণকারী দেশগুলোর সমন্বয়ে গঠিত বিশ্ব পরমাণু ক্লাবে ৩২তম দেশ হিসেবে নাম লেখাতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আগামী ৩০ নভেম্বর এ প্রকল্পের মূল স্থাপনার অর্থাৎ রিঅ্যাক্টর ব্লিডিংয়ের (উৎপাদন কেন্দ্র) নির্মাণকাজ শুরু হতে যাচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ এ কাজের উদ্বোধন করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেদিন পাবনার রূপপুরে যাবেন। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্র নির্মাণের এ অংশটিকে একটি ‘মেজর মাইলস্টোন’ বলে মন্তব্য করছেন।
বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ পাবনার ঈশ্বরদীতে প্রকল্পটির ইউনিট-১-এর মূল পর্বের নির্মাণকাজ শুরুর জন্য এর মালিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনকে ডিজাইন ও কনস্ট্রাকশন লাইন্সেল দিয়েছে। আর এ লাইন্সেস প্রাপ্তির প্রস্তুতি হিসেবে অনেক কাজ সম্পন্ন করতে হয়েছে। পরমাণু শক্তি কমিশন সূত্র জানায়, বিদ্যুেকন্দ্র নির্মাণকাজে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, পরীক্ষাগার তৈরি, কেন্দ্রের জন্য জনবল তৈরি, এ জন্য প্রয়োজনীয় প্রকৌশল সমাধান এবং কেন্দ্র নির্মাণের জন্য নির্ধারিত স্থানটিতে আদৌ পারমাণবিক কেন্দ্র নির্মাণ সম্ভব কি না তা যাচাই করার পর গুণগত লক্ষ্য অর্জিত হওয়ার পর প্রকল্পের মূল কাজ শুরুর প্রস্তুতি চলছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী কেন্দ্র নির্মাণের পূর্ব প্রস্তুতির শর্তগুলো পূরণ হয়েছে কি না তা মূল্যায়ন শেষে এই কেন্দ্রটি নির্মাণের সঙ্গে জড়িত রাশিয়া ও ভারতের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং আন্তর্জাতিক অ্যাটোমিক এনার্জি এজেন্সি কর্তৃপক্ষ কেন্দ্রটির ইউনিট-১-এর জন্য ডিজাইন ও কনস্ট্রাকশন লাইন্সেস প্রদান করে। রিঅ্যাক্টর ব্লিডিং নির্মাণকাজ শুরুর আগে কেন্দ্রটির পিট ডেভেলপমেন্ট কাজের অংশ হিসেবে মাইনাস ২০ মিটার মাটি খুঁড়ে এর নির্মাণ অংশের ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এরপর মাটির ওপরের অংশে চুল্লির জন্য আরও তিন মিটার ঢালাই করা হয়েছে। পৃথিবীতে একমাত্র পারমাণবিক চুল্লি নির্মাণে এ ধরনের ঢালাইকাজ করা হয় বলে বিশেষজ্ঞরা জানান। তবে পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের সঙ্গে জড়িতদের পৃথিবীর অন্য দেশগুলোতে যে ধরনের নিরাপত্তা ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়া হয় তা বাংলাদেশে দেওয়া হচ্ছে না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিচালক ড. মোহাম্মদ শওকত আকবর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আসছে ৩০ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বিদ্যুেকন্দ্রের মূল স্থাপনা নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। এর পরই পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্র নির্মাণকারী নতুন দেশ হিসেবে বাংলাদেশ নিউক্লিয়ার ক্লাবে অন্তর্ভুক্ত হবে। মূল স্থাপনার কাজ শুরুর আগে এর ভৌত অবকাঠামোগত সুবিধাদি নিশ্চিত, কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ে মূল্যায়ন শেষে বিশেষজ্ঞ মহল কেন্দ্রটির ইউনিট-১ নির্মাণের জন্য লাইন্সেস প্রদান করে। ৩০ নভেম্বরে অনুষ্ঠানে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক সংস্থা রোসাটমের মহাপরিচালকসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, আন্তর্জাতিক অ্যাটোমিক এনার্জি এজেন্সির মহাপরিচালক, ভারতের অ্যাটোমিক এনার্জি কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং ঢাকায় নিযুক্ত এই দুই দেশের রাষ্ট্রদূতরা উপস্থিত থাকবেন বলে পরমাণু শক্তি কমিশন কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে। প্রধানমন্ত্রী সেদিন বেলা ১১টায় এর মূল কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করবেন। এ উপলক্ষে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রস্তুতি এখন শেষ পর্যায়ে। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের এরই মধ্যে দাওয়াতপত্র পাঠানো হয়েছে। প্রকাশ করা হচ্ছে বিশেষ ক্রোড়পত্র ও ম্যাগাজিন।
এগিয়ে চলেছে অন্যান্য কাজ : প্রকল্পের কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা ও স্থানীয় বিষয়াদি তদারকির জন্য সরকার রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে একটি দল গঠন করেছে। দলটি একই সঙ্গে নির্মাণ এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে। এর বাইরে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ), বাংলাদেশ রেলওয়ে ও সড়ক বিভাগ বিদ্যুেকন্দ্রটি নির্মাণে ব্যবহূত যন্ত্রপাতি নির্মাণস্থলে পৌঁছে দেওয়ার কাজে নিয়োজিত আছে। গণপূর্ত অধিদফতর কেন্দ্রটির পাশেই আবাসিক ভবন নির্মাণকাজে জড়িত। বাংলাদেশ পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি কেন্দ্রটির গ্রিড ব্যবস্থাপনার কাজ করছে। কেন্দ্রটির পরিবেশগত নিরাপত্তা, বিদ্যুতের ব্যবহার ও পারমাণবিক বিকিরণ নিরাপত্তা বিষয়ে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি পাবলিক কাউন্সিল গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। বিদ্যুেকন্দ্র বিষয়ে তথ্য সরবরাহে প্রকল্প এলাকায় একটি কাউন্সেলিং অফিস স্থাপনের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। জনবল প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনের ৮৮ জন কর্মকর্তাকে ভারতে ফাউন্ডেশন কোর্স অন নিউক্লিয়ার এনার্জি বিষয়ে শিক্ষা প্রদান করা হয়েছে। এই কর্মকর্তারা বর্তমানে প্রকল্প এলাকায় কাজ করছেন। এ ছাড়া দক্ষ জনবলের জন্য একটি জয়েন্ট ট্রেনিং অ্যাডভাইসরি কমিশন গঠন করা হয়েছে। জানা যায়, এর বাইরে দেশের পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্র পরিচালনাকারী সংস্থা রূপপুর পাওয়ার প্লান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের আওতায় পর্যায়ক্রমে দুই হাজার ৭০০ জনবল (২০১৭-২০২২) এই কেন্দ্রটির নির্মাণকাজসহ অন্যান্য কাজের জন্য নিয়োগ দেওয়া হবে। বর্তমানে প্রকল্পের প্রথম অংশের কাজে ৮০ জন কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আর প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট কাজ তদারকির জন্য প্রকল্পের জাতীয় কমিটি, টেনকিন্যাল কমিটি, একটি ওয়ার্কিং গ্রুপসহ আটটি সাব-গ্রুপ গঠন করা হয়েছে। প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নে ‘রূপপুর উইং’ নামে একটি বিশেষ শাখাও গঠন করা হয়েছে।
 
                         
                                     
                                                             
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                        