শুক্রবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

কথাসাহিত্যিক শওকত আলী আর নেই

সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক

কথাসাহিত্যিক শওকত আলী আর নেই

সাহিত্যের মাধ্যমে গণমানুষের কথা বলেছেন কথাসাহিত্যিক শওকত আলী। সাহিত্যে বিশেষ অবদানের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধ এবং ভাষা আন্দোলনেও

বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন একুশে পদকজয়ী কথাশিল্পী শওকত আলী। অগণিত ভক্ত ও অনুরাগীদের শোকের সাগরে ভাসিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার না ফেরার দেশে চলে গেলেন এই কথাসাহিত্যিক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল সোয়া আটটায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিলাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। তিন ছেলেসহ বহু আত্মীয়স্বজন, ভক্ত ও অনুরাগী রেখে গেছেন। শওকত আলীর মৃত্যুতে দেশের সাহিত্যাঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরসহ শিল্প-সাহিত্যাঙ্গনের বিশিষ্টজনেরা। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা শেষে বাদ মাগরিব টিকাটুলি জামে মসজিদে নামাজে জানাজা শেষে তার ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে রাজধানীর জুরাইন কবরস্থানে স্ত্রী শওকত আরার কবরের পাশে দাফন করা হয়। এর আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল (বিএসএমএমইউ) থেকে শওকত আলীর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় জীবনের অনেকটা সময় কাটানো বাড়ি টিকুটুলীর কে এম দাস লেনের ‘বিরতি ভিলা’য়। স্বজন আর প্রতিবেশীদের আহাজারিতে এ সময় গুমোট হয়ে যায় সমগ্র কে এম দাস লেন এলাকা। এরপর সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য দুপুর ৩টার পরে এই কথাসাহিত্যিকের মরদেহ নিয়ে আসা হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। বাংলাদেশ লেখক শিবিরের তত্ত্বাবধানে এ সময় ফুলেল শ্রদ্ধায় সিক্ত হন বরেণ্য এই কথাসাহিত্যিক। মরদেহে ব্যক্তিগতভাবে শ্রদ্ধা জানান ইমেরিটাস প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, নাট্যাব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক, কমরেড টিপু বিশ্বাস, গণসংগীত শিল্পী ফকির আলমগীর প্রমুখ। সাংগঠনিক ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শ্রদ্ধা জানায় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন, ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট, পাহাড়ি ছাত্র সংসদ, বিশ্ব সাহিত্য ভবন, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, ছাত্র মৈত্রী, স্বভূমি লেখক শিল্পী কেন্দ্র, নাট্যদল বটতলা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, বাংলা একাডেমি। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে পালন করা হয় এক মিনিট নীরবতা। ইমেরিটাস প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, কথাসাহিত্যে প্রান্তিক মানুষের জীবন পরিবর্তনের কথা বলে গেছেন তিনি। তার সাহিত্যের বিষয়বস্তুতে সেই পরিবর্তনটি নিজস্ব ভাষারীতিতে উপস্থাপন করে গেছেন।

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, নিজস্ব পরিমণ্ডলে, নিজস্ব শৈলীতে তিনি সারা জীবনভর গণমানুষের কথা বলেছেন। সেটি তাকে এক অনন্য বৈশিষ্ট্য এনে দিয়েছে।

গত ৪ জানুয়ারি থেকে ল্যাব এইড হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয় শওকত আলীকে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হওয়ার পর ৬ জানুয়ারি ভোরে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। এরপর ১৬ জানুয়ারি বিএসএমএমইউতে তাকে ভর্তি করা হয়। ফুসফুসের সংক্রমণের পাশাপাশি দীর্ঘদিন যাবত তিনি হৃদরোগ ও কিডনিজনিত বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বিএসএমএমইউর নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন।

১৯৬৪ সালে তার প্রথম উপন্যাস ‘পিঙ্গল আকাশ’ প্রকাশিত হয়। ‘প্রদোষে প্রাকৃতজন’ তার সবচেয়ে জনপ্রিয় উপন্যাস। তার ত্রয়ী উপন্যাস ‘দক্ষিণায়নের দিন’, ‘কুলায় কালস্রোত’ এবং ‘পূর্বরাত্রি পূর্বদিন’ও পাঠকপ্রিয়তা পায়। তার লেখা অন্যান্য জনপ্রিয় উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে ‘ওয়ারিশ’, ‘অপেক্ষা’, ‘গন্ত্মব্যে অতঃপর’, ‘উত্তরের খেপ’, ‘অবশেষে প্রপাত’, ‘জননী ও জাতিকা’, ‘জোড় বিজোড়’ ইত্যাদি। কথাসাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯০ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন শওকত আলী। এ ছাড়া ১৯৬৮ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ লেখক শিবিরের হুমায়ুন কবির স্মৃতি পুরস্কার, ১৯৮৩ সালে অজিত গুহ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৮৬ সালে ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৮৯ সালে আলাওল সাহিত্য পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননা ও পুরস্কার পেয়েছেন শওকত আলী।

সর্বশেষ খবর