শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ওয়ার্কার্স পার্টিতে বিদ্রোহ থামছে না

আরও ৬ নেতার কংগ্রেস বর্জন

নিজস্ব প্রতিবেদক

দ্বন্দ্ব-বিরোধ-অসন্তোষ ও বিদ্রোহের আগুনে পুড়ছে বাম নেতা রাশেদ খান মেননের দল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি। দলটির আরও ছয় কেন্দ্রীয় নেতা আসন্ন কংগ্রেস বর্জনের ডাক দিয়েছেন। তারা বলেছেন, প্রহসনের এই কংগ্রেস অবৈধ।

ওয়ার্কার্স পার্টির শীর্ষ নেতৃত্ব আজ রাজনৈতিক দুর্নীতির পাশাপাশি অর্থনৈতিক দুর্নীতিতে আক্রান্ত। পার্টির ভাবমূর্তি হারিয়ে গেছে। জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সংগঠন দুর্বল হয়েছে। নেতা, কর্মী ও জনগণের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। ওয়ার্কার্স পার্টি দেউলিয়া হয়ে গেছে।

গতকাল ওয়ার্কার্স পার্টির মতাদর্শ, রাজনীতি ও সংগঠন রক্ষায় দলটির কেন্দ্রীয় ছয় নেতা গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের পক্ষে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন দলটির পলিটব্যুরো সদস্য নুরুল হাসান ও ইকবাল কবির জাহিদ, কন্ট্রোল কমিশনের চেয়ারম্যান ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অনিল বিশ্বাস, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জাকির হোসেন হবি, মোফাজ্জেল হোসেন মঞ্জু ও তুষারকান্তি দাস। এর আগে পলিটব্যুরো সদস্য বিমল বিশ্বাস কংগ্রেস বর্জনের ঘোষণা দেন। বিবৃতিতে বলা হয়, দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিপর্যয়, দুর্নীতি দুর্র্বৃত্তায়ন যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে, তাতে আর ১৪ দল ও সরকার নয়, পার্টির স্বাধীন ভূমিকা নিতে হবে। অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াত, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িক শক্তির সকল প্রকার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সজাগ, সতর্ক ও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ওই বিবৃতিতে কংগ্রেস বর্জনের ডাক দিয়ে বলা হয়, ‘ওয়ার্কার্স পার্টি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে সংস্কারবাদী, সুবিধাবাদী পার্টিতে পরিণত হয়েছে। শীর্ষ নেতৃত্বের লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি ও জোটনীতিতে ওয়ার্কার্স পার্টি অধঃপতিত হয়ে দেউলিয়া হয়েছে। আন্তপার্টি সংগ্রামকে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে। বিভিন্ন জেলায় অবিশ্বাস্য সংখ্যক পার্টি সদস্যপদ প্রদানের মাধ্যমে ভুয়া প্রতিনিধিদের দশম কংগ্রেসের সব আয়োজন ও প্রস্তুতি সম্পূর্ণ হয়েছে। সদস্যপদ যাচাই না করে অবৈধ প্রতিনিধিদের নিয়ে পার্টি কংগ্রেস হলে ওই কংগ্রেস অবৈধ হবে। তাই নতজানু আপোষকামী নীতি পরিহার করে আদর্শের প্রতি অবিচল থাকতে আমরা কংগ্রেসে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সুবিধাবাদকে পরাস্ত করে সত্যিকারের বিপ্লবী পার্টি, কমিউনিস্ট ঐক্য, বাম-গণতান্ত্রিক ঐক্য গড়ে তুলতে সব পার্টি সদস্যকে এই প্রহসনের কংগ্রেসে অংশগ্রহণ না করার আহ্বান জানাই।’ বিবৃতিতে ওই ছয় কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে পার্টির অভ্যন্তরে মতাদর্শগত বিচ্যুতি, বুর্জোয়া লেজুড়বৃত্তি ও বিলোপবাদী রাজনীতির বিরোধিতা করে আসছি। ১৪ দলের সঙ্গে কর্মসূচিভিত্তিক ঐক্য, হাতুড়ি ছেড়ে নৌকা মার্কায় নির্বাচন ও সরকারে মন্ত্রিত্ব গ্রহণের মাধ্যমে পার্টির নীতি-আদর্শ জলাঞ্জলি দেওয়া হয়েছে। ফলে নেতা, কর্মী ও জনগণের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। বরিশালে জেলা সম্মেলনে অগণিত পার্টি কর্মী ও জনগণের দাবির মুখে ২০১৮ সালের প্রহসনের নির্র্বাচন সম্পর্কে রাশেদ খান মেনন যে সত্য উচ্চারণ করেছিলেন, পরদিন তার ইউটার্ন পার্টি-অনুসৃত বর্তমান রাজনীতিরই অনিবার্য ফল।’ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘১৯৯২ সালের ৪ মে ঐক্য কংগ্রেসে গৃহীত মতাদর্শগত, নীতি ও কৌশল থেকে পার্টি ক্রমান্বয়ে দক্ষিণপন্থি, বিলোপবাদী ধারায় অধঃপতিত হয়েছে। ঐক্য কংগ্রেসের লক্ষ্য ছিল কমিউনিস্ট ঐক্য এগিয়ে নেওয়া, বাম গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করা। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামই হবে পার্টির ভিত্তিমূলক কাজ। পার্টির বর্তমান নেতৃত্ব ঐক্য কংগ্রেসের মতাদর্শ, নীতি, কৌশল ও সংগঠন সম্পর্কে গৃহীত ভিত্তি ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে।’

সর্বশেষ খবর