করোনাভাইরাসের প্রভাবে কাঁচামাল সংকটের কারণে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়তে যাচ্ছে দেশের গার্মেন্ট বা তৈরি পোশাকশিল্প। দেশের গার্মেন্ট শিল্পের মূল কাঁচামাল ফেব্রিক্স এবং এক্সেসরিজ প্রায় পুরোটা চীন নির্ভর। এই শিল্পের ৯৫ থেকে ৯৮ শতাংশ কাঁচামাল আমদানি হয় চীন থেকে। চীনে চলমান করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের ঘটনা আরও দীর্ঘায়িত হলে চলতি মাসের শেষদিকে বাংলাদেশের গার্মেন্টসহ বিভিন্ন শিল্পে বড় ধরনের সংকট তৈরি হবে এবং এর মন্দ প্রভাব পড়বে দেশের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক খাতে। এমন আশঙ্কা করছেন বিজিএমইএ ও বিজিএপিএমইএ-সহ সংশ্লিষ্টরা। এদিকে চীনের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। বিগত এক মাসে চীন থেকে যে কয়টি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়েছে ভাইরাস পরীক্ষা ছাড়া জাহাজের একটি পণ্যও খালাস না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বন্দর-কাস্টমস। গার্মেন্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, ইতিমধ্যে প্রায় সব ধরনের গার্মেন্ট এক্সেসরিজের দাম বেড়ে গিয়েছে। চলতি মাসের শেষদিকে কাঁচামালের ভয়াবহ সংকটের মুখে পড়তে হবে। এ নিয়ে গভীর শঙ্কায় রয়েছেন গার্মেন্ট মালিক ও সরবরাহকারীরা। বিজিএমইএ-এর দেওয়া তথ্যমতে- বাংলাদেশে ৪ হাজার ৫৬০টি গার্মেন্ট শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিদায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩ হাজার ৪১৩ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এর জন্য কাঁচামাল আমদানি হয়েছে ১ হাজার ২১৭ কোটি ডলারের। আমদানি হওয়া এই কাঁচামালের বড় অংশ চীন থেকে আসে। সে অনুযায়ী চলতি বছরেও খোলা হয়েছে চাহিদার বিপরীতে প্রয়োজনীয় এলসি। এর মধ্যে গত ২২ জানুয়ারি থেকে শুরু হয় চাইনিজ নববর্ষের আনুষ্ঠানিকতা। যে কারণে চীনে ১০ দিন বন্ধ ছিল সব ধরনের লেনদেন। তার ওপর করোনাভাইরাসের প্রভাবে পুরো চীন এখন এক প্রকার বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে দেশের গার্মেন্ট শিল্পে। বিজিএমইএ পরিচালক সাইফুল্লাহ মনসুর বলেন, চীননির্ভর গার্মেন্ট শিল্পের কাঁচামালের যেসব এলসি খোলা হয়েছিল গত মাসখানেক আগে, সেসব এলসির বিপরীতে কোনো পণ্যই শিপমেন্ট হয়নি করোনাভাইরাসের কারণে। সামনে আসছে রমজান মাস, এ অবস্থায় কাঁচামালের অভাবে উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটবে এ শিল্পের। বন্দরের আউটারে কোনো জাহাজ নেই, আগের আনা পণ্য দিয়ে আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারির বেশি চালানো যাবে না। তাই মারাত্মক ঝুঁকির মুখে রয়েছে গার্মেন্টশিল্প। বিজিএপিএমইএ-এর বন্দর-কাস্টমস এবং শিপিং কমিটির আহ্বায়ক খোন্দকার লতিফুর রহমান আজিম বলেন, করোনার প্রভাবে ইতিমধ্যে গার্মেন্টের কাঁচামালের দামে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। প্রতি পাউন্ড সুইং সুতার দাম ৯৪ টাকার স্থলে ১৫২ টাকা পর্যন্ত উঠে গেছে। এরকম সব কাঁচামালেরই দাম বাড়তে শুরু করেছে। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে বিকল্প দেশ হিসেবে আমরা ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম ও ইন্ডিয়া থেকে গার্মেন্ট পণ্যের কাঁচামাল আমদানির কথা চিন্তা করছি। তবে এসব দেশে দাম একটু বেশি হওয়াতে অর্ডার নিয়ে সাপ্লাইয়াররা সংকটে পড়বে। তবে যেসব বিদেশি অর্ডার নিয়ে কাজ চলছে, সেগুলো নিয়ে কোনো বায়ারই চাপাচাপি করছে না আপাতত। কিন্তু তাদেরও সময়সীমা পার হয়ে গেলে অর্ডার বাতিল ছাড়া কিছুই করার থাকবে না। তাই দ্রুতই রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে বিকল্প ব্যবস্থা খুঁজে নিতে হবে। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, চীনের মতো উৎপাদনমুখী অর্থনীতিতে এ ধরনের ঘটনা দীর্ঘায়িত হলে তা সবাইকেই নাড়িয়ে দেবে। বাংলাদেশে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। দেশের প্রধান শিল্প বস্ত্র ও পোশাক খাতের কাঁচামাল আমদানি ব্যাহত হবে; যা প্রধান রপ্তানি আয়ের খাতে ঝুঁঁকি তৈরি করবে।