মঙ্গলবার, ৫ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

হিমশিম পুলিশ হাসপাতাল

নিজস্ব প্রতিবেদক

হিমশিম পুলিশ হাসপাতাল

করোনা আক্রান্ত রোগী এবং কোয়ারেন্টাইনে থাকা রোগীর চিকিৎসা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল  (সিপিএইচ)। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত ও সন্দেহজনক রোগীর সংখ্যা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলমান করোনা যুদ্ধে দায়সারা ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার করে দায়িত্ব পালনের কারণে কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না কভিড-১৯ সংক্রমণ। ৩৭১ বেডের সিপিএইচে জায়গা না হওয়ায় সন্দেহজনক রোগীদের সিআইডি ট্রেনিং স্কুল (ডিটিএস), সিদ্ধেশ্বরী কলেজসহ রাজধানীর ২২টি আবাসিক হোটেলে রেখে চিকিৎসা দিতে বাধ্য হচ্ছে কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে চলমান এই দুঃসময়ে সিপিএইচে আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত ২৫ জন চিকিৎসক এরই মধ্যে করোনার ভয়ে চাকরি ছেড়েছেন। তবে পুলিশ সদর দফতর বলছে, সংকটের এই সময়ে মেডিকেল সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ডের পুলিশ কর্মকর্তাদের দিয়ে বিশেষ সেল গঠন করা হচ্ছে। এর বাইরেও প্রেষণে আরও চিকিৎসক দিয়ে মন্ত্রণালয় থেকে স্বাস্থ্য অধিদফতরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, ডিটিএইচ এবং সিপিএইচে গতকাল পর্যন্ত ৫৯২ করোনা পজিটিভ রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে সিপিএইচ কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ৩৮৭ জনকে রাখা হয়েছে সিপিএইচ এবং ৯৯ জনকে ডিটিএসে। সিপিএইচের ১০ জন রোগী আইসিইউ এবং ৮ জনকে এইচডিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। রোগীদের মধ্যে ডিএমপি, নৌ-পুলিশ, চুয়াডাঙ্গা, নরসিংদী, ঝিনাইদহ, পুলিশ সদর দফতর, কাউন্টার টেররিজম, নারায়ণগঞ্জ, এপিবিএন, এসবি, ঢাকা জেলা, র‌্যাব সদর দফতর, গোপালগঞ্জ, স্টাফ কলেজ, পাবনা জেলা, সিআইডি, এপিবিএনের সদস্যরা রয়েছেন। গতকাল ২৪ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন। সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৬ জন। এর আগে প্রতিদিন গড়ে ৩৫ থেকে ৪০ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। সম্প্রতি ভাড়া করা আরেকটি পিসিআর  মেশিনে করোনা টেস্ট চালু হয়েছে। কিট এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য সামগ্রী পুলিশ সদর দফতরের মাধ্যমে ওপেন টেন্ডার এবং সরকারি যথাযথ প্রক্রিয়ায় সংগ্রহ করা হচ্ছে। সিপিএইচের পরিচালক উপ-মহাপরিদর্শক হাসান উল হায়দার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গত বছর সিপিএইচে আইসিইউ এবং ডায়ালাইসিস, ব্লাড এনালাইসিস সেবা চালু করা হয়েছে। বর্তমানে আমাদের এই হাসপাতালে ১৫টি আইসিইউ এবং ১৪টি এইচডিইউ বেড রয়েছে। এর সুফল এখন আমরা পাচ্ছি। প্রেষণে এবং চুক্তিভিত্তিক ১০০ জনের মতো চিকিৎসক এবং ১০০ জনের মতো নার্স-টেকনিশিয়ান ফ্রন্টলাইনে থেকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। ২৫০ বেডের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের গাইডলাইন মেনেই আমরা ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে কোনো চিকিৎসককে করোনা চিকিৎসায় রাখছি না। আমরা আমাদের সর্বোচ্চটা দিয়ে রোগীদের সেবা করার চেষ্টা করছি। আমরাই প্রথম দেশে ডিসইনফেকশন বুথ স্থাপন করেছি সিপিএইচে। গত রবিবার রাত সাড়ে ১১টা। ফকিরাপুল মোড়ে আবাসিক হোটেলের সামনে পুলিশের জটলা। রয়েছে দুটি অ্যাম্বুলেন্স। এগিয়ে যেতেই দেখা যায় মতিঝিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার (এসি) জাহিদুল ইসলাম ফোর্সদের নির্দেশনা দিচ্ছেন। জিজ্ঞেস করতেই জাহিদুল বলছিলেন, বাধ্য হয়েই কভিড-১৯ অনেক সাসপেকটেড অনেক পুলিশ সদস্যকে আবাসিক হোটেলে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাদের তদারকি করতেই এখানে আসা। চিকিৎসার জন্য কিছু রোগীকে অন্যত্র স্থানান্তর করা হবে। জানা গেল, সিপিএইচের আশপাশে ফকিরাপুল, পল্টন, রাজারবাগসহ নিকটবর্তী এলাকার আবাসিক হোটেলে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতাল থেকে চিকিৎসক, নার্স নিয়মিত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করছেন। পাশাপাশি তাদের খোঁজখবর রাখতে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছে ডিএমপি সদর দফতর। পুলিশ সদর দফতর বলছে, সারা দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ৬০ জন পুলিশ সদস্য। এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৯১৪ জন। এর মধ্যে ডিএমপিতে ৪৪৯ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৫৮ জন। আইসোলেশনে রয়েছেন ৩১৫ জন। পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) মো.  সোহেল রানা বলেন, যেহেতু পুলিশের প্রধান হাসপাতাল রাজারবাগ তাই সেখানে বেশি রোগী থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তবে পরিস্থিতি সামাল দিয়ে মাঠপর্যায়ের সেবা দেওয়াই আমাদের মুখ্য উদ্দেশ্য। আগের মতোই মানুষের পাশে থেকে সেবা দিয়ে যাচ্ছি।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর