জমিতে সেচ কম দিতে হয়, উৎপাদনশীলতাও বেশি ও লাভজনক হওয়ায় ধান আবাদের চেয়ে ভুট্টা চাষ দিন দিন বেড়েই চলেছে দিনাজপুরসহ বিভিন্ন দেশে। ধান ও অন্যান্য ফসলের চেয়ে লাভ বেশি হওয়ায়, কম খরচে বেশি লাভের আশায় বিকল্প ফসল হিসেবে ভুট্টা চাষে ঝুঁকছে কৃষকরা। বাম্পার ফলনও হয়েছে। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে রবি ও খরিপ মৌসুমে বাংলাদেশে মোট ৫ লাখ ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টা আবাদ করা হয়, যেখানে প্রায় ৫১ লাখ মেট্রিক টন ভুট্টা উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আর ভুট্টার উৎপাদন বাড়াতে নতুন নতুন ভুট্টার জাত নিয়ে আসছে বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট, দিনাজপুর। দিন দিন ভুট্টার চাহিদা বাড়ায়, এবার ভুট্টার পুষ্টিগুণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ প্রতিষ্ঠান থেকে মানুষের খাদ্য হিসেবে প্রো-ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ ভুট্টার জাত উদ্ভাবনের দ্বারপ্রান্তে। আশা করা যাচ্ছে, আগামী ২০২১-২০২২ সালের মধ্যে প্রো-ভিটামিন এ সমৃদ্ধ ভুট্টার জাত অবমুক্ত করতে সক্ষম হব এবং কৃষকের কাছে বীজ সহজলভ্য করা সম্ভবপর হবে। তখন দানাজাতীয় খাদ্য যেমন, ধান ও গমের সঙ্গে ভুট্টা যুক্ত হয়ে মানুষের খাদ্য চাহিদাপূরণে নতুন মাত্রা যোগ হবে। উপরন্ত ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার খেলে মানুষ অন্ধত্ব (রাতকানা), বামনাকৃতি, বন্ধ্যাত্ব ইত্যাদি রোগবালাই থেকে মুক্ত থাকবে বলে আশা করছেন বলে জানান মহাপরিচালক ড. মো. এছরাইল হোসেন।
বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আসগার আহমেদ জানান, প্রো-ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ ভুট্টার জাত অবমুক্ত হলে তা গবাদিপশু, হাঁস-মুরগির পাশাপাশি মানুষের রাতকানা, বন্ধ্যাত্বসহ ভিটামিন-এ এর অভাবজনিত অন্যান্য লক্ষণ মোকাবিলায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা যাচ্ছে। মানুষের খাদ্য তালিকায় এক সময় চালের বিকল্প হয়ে দাঁড়াবে এই ভুট্টা। তিনি জানান, দেশে উৎপাদিত ভুট্টার সিংহভাগই পোল্ট্রি, ডেইরি ও মাছের খাবার তৈরিতে ব্যবহৃত হলেও মানুষের খাদ্য হিসেবে ভুট্টা খাওয়ার প্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়াও আজকাল সবজি ও স্যুপ তৈরিতে বেবীকর্ন রেস্টুরেন্টের পাশাপাশি বাড়িতেও বহুলভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর কাছে ভুট্টা একটি জনপ্রিয় খাবার। বর্তমানে বাজারে যে আটা পাওয়া যাচ্ছে, তাতে ক্ষেত্র বিশেষে ৩০-৩৫% ভুট্টার আটা মেশানো হচ্ছে। বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট, দিনাজপুরের মহাপরিচালক ড. মো. এছরাইল হোসেন জানান, পোল্ট্রি, ডেইরি ও মাছের খাবারের পাশাপাশি মানুষের খাবারে ভুট্টার ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেকে চাল ও গমের বিকল্প হিসেবে ভুট্টাকে বেছে নিচ্ছে। ভুট্টার পুষ্টিগুণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট তিন বছর পূর্বে আন্তর্জাতিক ভুট্টা ও গম উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে ১৮টি প্রো-ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ ইনব্রিড লাইন নিয়ে বিভিন্ন কম্বিনেশনে ৫০টির মতো হাইব্রিড তৈরি করে। অত্র প্রতিষ্ঠান থেকে ২-১ বছরের মধ্যে এক বা একাধিক প্রো-ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ ভুট্টার জাত অবমুক্ত করা সম্ভব হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।