শনিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

হাঁড়িচাচা পাখি

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

হাঁড়িচাচা পাখি

এক সময় অনেক গাছপালা ও ঝোপঝাড় ছিল। সেখানে ছিল বিভিন্ন পাখির আনাগোনা। তখন সকাল-সন্ধ্যা পাখিদের কিচির-মিচির শব্দে মুখরিত থাকত চারদিক। এখন জনবসতি বাড়ায় ক্রমেই কমছে ঝোপঝাড়। পাখিদের বিচরণও কমে যাচ্ছে। নওগাঁ জেলা শহরের আশপাশে আম, কাঁঠাল, পেয়ারা, লেবু ছাড়াও আছে বড় বড় রেইনট্রিসহ নাম না জানা অনেক গাছ। গাছগুলোতে অসংখ্য পাখির আনাগোনা। দেখা যায় অচেনা অনেক পাখিও। এদের আছে বেশ ছন্দ। ফটফট শব্দে গোটা কয়েক ডানার ঝাপটা, ডানা ও লেজ ছড়িয়ে শূন্যে ভেসে চলা, আবার ডানার ঝাপটা, আবার ভাসা। ডানার কয়েকটা পালক সাদাটে। লেজের মাঝের পালকও তাই। দুই পাশে কালোর মাঝে যেন ফ্রেম আঁটা। পাখিটির নাম হাঁড়িচাচা।

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কাকের জ্ঞাতিভাই এই হাঁড়িচাচাকে বেশ কিছু আঞ্চলিক নামে ডাকা হয়। যেমন- কুটুম পাখি, লেজ ঝোলা, ঢেঁকি লেজা প্রভৃতি। হাঁড়িচাচা সুন্দর পাখি। স্ত্রী ও পুরুষ দেখতে একই রকম। লম্বায় লেজসহ ১৬ থেকে ১৮ ইঞ্চি। শুধু লেজটাই লম্বায় প্রায় ১০ থেকে ১২ ইঞ্চি। বাংলাদেশের লেজওয়ালা পাখিদের মধ্যে এটি অন্যতম। এত বড় লেজের কারণে পাখিপ্রেমীদের দৃষ্টি কাড়ে। হাঁড়িচাচার শরীরের পালকের রং বাদামি। মাথা, গলা এবং বুকের কিছু অংশ ফিকে কালো। হাঁড়িচাচার লেজে মোট ১২টি পালক থাকে। লম্বা লেজের মাঝের পালক দুটি বেশ লম্বা। ছোট ডানা ও লেজের রং ধূসর সাদা। বাকিগুলো কালো। লেজের অগ্রভাগ কালচে। কাকের মতো শক্ত মোটা ও ধারালো চঞ্চু। কালচে ধূসর চঞ্চু কিছুটা চাপা ও বাঁকা। পায়ের রং গাঢ় ধূসর। পেছনের নখযুক্ত পা একটু বড়। চোখের মণি লালচে। শহর থেকে পল্লীর অতি পরিচিত পাখি হাঁড়িচাচা। শরীরে রঙের বাহার আর আকর্ষণীয় লম্বা লেজের কারণে ব্যাপক পরিচিত এ পাখি উঠে এসেছে বাংলা সাহিত্য তথা ছড়া, গল্প, কবিতায়। তাই তো যুগে যুগে মা তার শিশু সন্তানকে ঘুম পাড়াতে গিয়ে ছড়া কাটেন- ‘আয়রে পাখি লেজ ঝোলা/ খোকন নিয়ে কর খেলা/ খাবি-দাবি কল কলাবি/ খোকাকে মোর ঘুম পাড়াবি।’ পাখিপ্রেমী প্রাণ ও প্রকৃতির সভাপতি কাজী নাজমুল বলেন, মাটির ভাঙা হাঁড়ির একটি খোলা দিয়ে ইটের ওপর ঘর্ষণ করলে যে শ্রুতিকটু শব্দ উৎপন্ন হয়, তার সঙ্গে এদের স্বরের সাদৃশ্যবশতই এ নাম বা বদনাম লাভ করেছে।

 গ্রীষ্মকালে আমাদের গ্রামে এদের আনাগোনা বেশি। তবে শীতকাল আর বর্ষাকালে যে দেখা যায় না, এমন নয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর