বৃহস্পতিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

নামেই পরিচ্ছন্ন নগরী

রাজশাহীতে দুর্ভোগের শেষ নেই, কর্মসংস্থানের অভাব, মশার কামড়, অটোরিকশায় নাকাল

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

নামেই পরিচ্ছন্ন নগরী

রাজশাহীতে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয়েছে সড়কে -বাংলাদেশ প্রতিদিন

সামান্য বৃষ্টি, তাতেই জলমগ্ন পুরো এলাকা। হাঁটুপানি মাড়িয়ে চলাচল করতে হচ্ছে নগরীর বিভিন্ন এলাকার মানুষকে। নগরীর কোনো কোনো এলাকায় হাঁটুপানি জমে যাওয়ায় অনেকের বাসাবাড়িতেও ঢুকে পড়ে। জলাবদ্ধতায় মানুষের ভোগান্তি চরমে ওঠে।

শুধু জলাবদ্ধতা নয়, খানাখন্দে ভরা সড়ক, মশার কামড় আর ধূলিময় এক শহর এখন রাজশাহী। পাশাপাশি অটোরিকশা দৌরাত্ম্য বাড়ছে। টার্মিনাল ছেড়ে মূল সড়ক দখল করে বাস থাকায় নাগরিকদের চলাচল করতে হয় সতর্কভাবে। কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে ফুটপাত করা হলেও তা নাগরিকদের নয়, দখলে থাকে ব্যবসায়ীদের। পরিচ্ছন্ন নগরীর তকমা পেলেও ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয় সড়কে। রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকায় অবকাঠামো উন্নয়ন শুরু হলেও নাগরিক সুবিধা এখনো ভোগান্তির মধ্যে। মশার কামড়, যানবাহনের জটলা, কর্মসংস্থানের অভাব নগরবাসীকে দিন দিন হতাশার মধ্যে ফেলছে। একদিকে যখন প্রশস্ত সড়কের কাজ চলছে, তখন অন্যদিকে মশার কামড়ে ওষ্ঠাগত নাগরিক জীবন। এখন ওষুধের অভাবে বন্ধ হয়ে আছে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মশক নিধন কার্যক্রম। এ অবস্থায় মশার জীবাণুবাহী রোগ চিকনগুনিয়া ও জাপানি এনকেফেলাইটিস রোগের ঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন নগরীর প্রায় ৩০ লাখ মানুষ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর বেশির ভাগ ড্রেন পরিষ্কারের কোনো কার্যক্রম নেই। বিভিন্ন ওয়ার্ডে ড্রেনের পানি উপচে পড়ে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। এতে নগরীজুড়ে বেড়েছে মশার দাপট। কয়েল কিংবা অন্য কোনো উপায়েও মশার অত্যাচার থেকে রেহাই মিলছে না। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর মশার কামড়ে ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়া করতে সমস্যা হচ্ছে। আর এসব মশা আতঙ্ক ছড়াচ্ছে সময়ের সবচেয়ে আলোচিত রোগ চিকনগুনিয়ার।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক হাছানাত আলী বলেন, নগরীতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে। কিন্তু নাগরিক সুবিধা এখনো মানুষ সেভাবে পাচ্ছে না। গ্যাস আছে, কিন্তু গ্যাসভিত্তিক কোনো শিল্প-কারখানা গড়ে উঠছে না। ফলে মানুষের কর্মসংস্থানের অভাব দিন দিন বাড়ছে। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার কবলে পড়ে পুরো নগরী এখন জঞ্জালে পরিণত হচ্ছে। সেদিকে কোনো খেয়াল নেই সিটি করপোরেশনের। এ ছাড়া শিক্ষানগরী বলা হলেও শিক্ষার্থীদের আবাসন নিয়ে কোনো পরিকল্পনা নিচ্ছে না রাসিক। ফলে পরিকল্পিত আবাসন ব্যবস্থা গড়ে উঠছে না। যেখানে-সেখানে ছাত্রাবাস গড়ে উঠছে। এতে নগরীর সৌন্দর্য দিন দিন নষ্ট হচ্ছে।

নগরীর প্রতিটি সড়ক এখন খানাখন্দে ভরা। গত বছর যে সড়কটি মেরামত করা হয়েছে, এ বছর সেই সড়কে নাগরিকদের চলাচল করতে হয় ভোগান্তি নিয়ে। কারণ সড়কের পিচের আস্তরণ উঠে গিয়ে বের হয়েছে ইট। এমন অবস্থা নগরীর বিভিন্ন সড়কে। এ কারণে সড়ক সংস্কার করে চলাচল উপযোগী করা হচ্ছে। কিছুদিন পর সেই সড়ক ভেঙে নির্মাণ করা হচ্ছে ড্রেন। ফলে নাগরিক ভোগান্তি কমছেই না।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলী বিভাগ জানায়, নগরীর যানজট নিরসনে ১৩২ কিলোমিটারের বেশি নতুন সড়ক নির্মাণ ও বিদ্যমান সড়ক প্রশস্ত করা হচ্ছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে নির্মাণ করা হচ্ছে ৪৯ কিলোমিটারের বেশি পাকা ড্রেনেজ। পথচারীদের চলাচলের জন্য সাড়ে ১৯ কিলোমিটার ফুটপাত এবং নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে সড়কের পাশে দেয়াল নির্মাণ করা হচ্ছে। এতেও ভোগান্তি কমছে না।

তবে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র-১ সরিফুল ইসলাম বাবু বলেন, মানসম্মত ভৌত অবকাঠামো, সড়ক, নর্দমা, কালভার্ট নির্মাণের মাধ্যমে টেকসই ও নাগরিকবান্ধব আবাসস্থল হিসেবে দৃশ্যমান হবে রাজশাহী মহানগরী। এখন কিছুটা ভোগান্তি হচ্ছে। কাজগুলো শেষ হলে ভোগান্তি আর থাকবে না। যানজট নিরসনেও বেশ কিছু উদ্যোগ চলমান আছে। তিনি জানান, শুধু অবকাঠামো উন্নয়ন নয়, মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর