বৃহস্পতিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার - বাহাউদ্দিন নাছিম

ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে দলকে ক্ষমতায় আনাই চ্যালেঞ্জ

রফিকুল ইসলাম রনি

ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে দলকে ক্ষমতায় আনাই চ্যালেঞ্জ

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেছেন, আসন্ন জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের যে নেতৃত্ব আসবে, সেই নেতৃত্বের সামনে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে উগ্র সাম্প্রদায়িক, দেশবিরোধী শক্তির ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করা। টানা চতুর্থ মেয়াদে দলকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আনা। জাতীয় সম্মেলনে এমন নেতৃত্বই উপহার দেবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল দুপুরে ধানমন্ডি আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের এক বছর পর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। সেই নির্বাচন সামনে রেখে এবারের সম্মেলনে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র সংশোধনী, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, অর্থনীতির পলিসিগত বিষয়গুলো কী হবে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনী ইশতেহারে কী কী অঙ্গীকার থাকবে, সেই বিষয়গুলো দলের সম্মেলনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তিনি বলেন, বিগত সময়ের মতোই এবারও বঙ্গবন্ধুকন্যা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নির্বাচিত হবেন এটা নিশ্চিত। কারণ তিনি আমাদের ঐক্যের প্রতীক হিসেবে দীর্ঘ ৪২ বছর দলের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তার নেতৃত্বে সবাই ঐক্যবদ্ধ। তিনি বলেন, উন্নত, সমৃদ্ধ, আধুনিক, আত্মনির্ভরশীল এবং স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে এবারের সম্মেলনে। নেতৃত্ব নির্বাচনের দায়িত্ব বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। যেহেতু কাউন্সিলররা নেতা নির্বাচিত করার দায়িত্ব শেখ হাসিনাকে দেন, সেহেতু কাউন্সিলরদের মতামতের প্রতিফলনই ঘটে সম্মেলনে। যারাই দায়িত্ব পাবেন তারা আগামীতে দলকে সুসংগঠিত করার পাশাপাশি আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আনতে ভূমিকা রাখবেন। 

এবারের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে নানা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। আসলে কী হতে চলেছে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাছিম বলেন, শুধু সাধারণ সম্পাদকই নয়, সব পদ গুরুত্বপূর্ণ। সম্মেলন আসলে অনেক বিষয় নিয়েই আলোচনা হয়। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা নিয়ে থাকেন। তিনি শুধু দেশের মানুষের স্বপ্নের দিশারীই নয়, তিনি স্বপ্নের বাস্তবায়নকারী। শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্বের কাছেও তিনি রোল মডেল। নেতা থেকে রাষ্ট্রনায়ক।

আগামীর নতুন নেতৃত্বের সামনে কী চ্যালেঞ্জ দেখছেন জানতে চাইলে নাছিম বলেন, বাংলাদেশবিরোধী অপশক্তি, বাংলাদেশবিরোধী জঙ্গিবাদী শক্তি, মৌলবাদী শক্তির নানা ষড়যন্ত্র করে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়। জঙ্গিবাদন্ডসাম্প্রদায়িক দেশ বানাতে চায়। গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা যারা হত্যা করেছে, হত্যা-ক্যু ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করেছে, তাদের মোকাবিলা করে স্বাধীনতার পক্ষের নেতৃত্ব দলকে আবার ক্ষমতায় আনাই আমাদের চ্যালেঞ্জ। আমাদের প্রত্যয় দেশবিরোধী অপশক্তিকে মোকাবিলা করাই নতুন নেতৃত্বের চ্যালেঞ্জ। 

বিএনপি-জামায়াতসহ অভিন্ন কয়েকটি দলের ৩০ ডিসেম্বর রাজধানীতে গণমিছিল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঢাকায় শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করলে আমাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই। আমরা কিছু বলব না। আমরা এটা নিয়ে চিন্তাও করি না। কিন্তু সেদিন যদি তারা গণমিছিলের নামে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী, নৈরাজ্য বা ধ্বংসাত্মকমূলক পথ বেছে নেয় তবে অবশ্যই দেশের মানুষের জানমাল রক্ষায় আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতা-কর্মী তার উপযুক্ত জবাব দেবে। আমরা প্রস্তুত রয়েছি তাদের দাঁতভাঙা জবাব দেওয়ার জন্য। আওয়ামী লীগ তাদের কোনো অপকর্মকে মেনে নেবে না। বাম দলগুলোর তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেন, যারা নিজেদের বাম দল হিসেবে দাবি করেন, সেই দল কীভাবে সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে হাত মেলান? তারা কি বাম রাজনীতি করেন? নাকি নীতিভ্রষ্ট হয়েছেন?

বাহাউদ্দিন নাছিম আরও বলেন, বিএনপি বিনা ভোটে ক্ষমতায় এসে সারা বাংলাদেশে ধ্বংসলীলা ও তান্ডব চালিয়েছিল। সারা দেশে তারা লুটপাট করেছিল। ধ্বংস করে দিয়েছিল পুরো দেশের অবকাঠামো। তারা বহু নারী ও শিশুকে ধর্ষণ করেছে। মন্দির উপাসনালয়ে এমনকি মসজিদে হামলা করেছে। তারা এখনো ধ্বংস হয়নি, এখনো দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তাদের অপকর্মের রাজনীতি চলছে। তারা দেশকে মিনি পাকিস্তান বানাতে চায়। এজন্য তারা সব ষড়যন্ত্রই চালিয়ে যাচ্ছে। তারা বিভিন্ন দূতাবাসে গিয়ে নালিশ করছেন। চিঠি দিয়েও দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। তিনি আরও বলেন, বিএনপির সব কর্মকান্ডকে প্রতিহত করতে হবে। এরা ২০১৩-১৪ সালে হরতালের নামে সারা দেশে পেট্রোল বোমা মেরে বহু মানুষকে হত্যা করেছে। এদের কাছে সাধারণ মানুষ নিরাপদ নয়। এদের পেট্রোল বোমা থেকে ছোট শিশু এমনকি নারীরাও রেহাই পায়নি। আন্দোলনের নামে এরা নিরপরাধ শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। এরা গবাদি পশুবাহী ট্রাকে পর্যন্ত বোমা মেরে পশুদের হত্যা করেছে। এদের যে কোনো মূল্যে প্রতিহত করতে হবে। 

আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত ১৪ বছর বাংলাদেশে উন্নয়ন অগ্রগতিকে যারা মেনে নিতে পারে না, যাদের দেশের অগ্রগতিকে মেনে নিতে কষ্ট হয়, এরাই দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তারা প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চায়। এরাই রাজাকারদের কাছে বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকা তুলে দিয়েছিল। কানাডিয়ান আদালত এদের সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে রায় দিয়েছে। ঘুষখোরের দল হিসেবে আমেরিকার এফবিআই এদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছে।

বাহাউদ্দীন নাছিম বলেন, আমাদের সংগ্রাম বিএনপি জামায়াতের সব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে। আমরা তাদের মানুষ হত্যা করে পুড়িয়ে মারার অপরাজনীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করি। তাদের যে কোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলার জন্য মাঠে ময়দানে আমরা প্রস্তুত আছি। কোনো তারিখ উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে মাঠে আমাদের নামার প্রয়োজন নেই। আমরা সব সময় মাঠে আছি। আমাদের নেতা-কর্মীরা যেখানে অন্যায় দেখবে সেখানেই বলিষ্ঠ কণ্ঠে প্রতিরোধ করবে।

সর্বশেষ খবর