শনিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

পরিকল্পিত উন্নয়নে পুরান ঢাকা

জানুয়ারি থেকে রাজউকের পুনরুন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু, আর্থিক সহযোগিতায় এআইআইবি

হাসান ইমন

পরিকল্পিত উন্নয়নে পুরান ঢাকা

পুরান ঢাকাকে বাসযোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে ভূমি পুনরুন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। ইতোমধ্যে পুরান ঢাকার বংশাল, চকবাজার, ইসলামবাগ, মৌলভীবাজার, লালবাগ, কামরাঙ্গীর চর ও হাজারীবাগ এলাকা চিহ্নিত করেছে সংস্থাটি। আর্থিক সহযোগিতা দেবে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি)। আসছে জানুয়ারিতে প্রকল্পের কাজ শুরু হবে বলে জানালেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

রাজউকের নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের মধ্যে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা তৈরিতে রাজউক উদ্যোগ নিয়েছে। তাই পুরান ঢাকার সাতটি এলাকার ঐতিহ্য সমন্বয় করে নাগরিক সুবিধা, নিরাপদ-টেকসই নগর তৈরির পরিকল্পনাই নগর পুনরুন্নয়ন প্রকল্পের মুখ্য উদ্দেশ্য। এ প্রকল্পটি মূলত পুরান ঢাকার জনগণের জন্য, যাতে তারা একটি পরিকল্পিত, বাসযোগ্য ও টেকসই নগরের সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারেন। এ প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য এআইআইবি ৩৫০ মিলিয়ন ডলার আর্থিক সহযোগিতা দেবে। এর মধ্যে ৩ মিলিয়ন ডলার অনুদান হিসেবে দেওয়া হবে।

তিনি আরও জানান, জানুয়ারিতে পুরান ঢাকার সাতটি এলাকা নিয়ে স্টাডি               শুরু হবে। পরে তা পর্যালোচনা করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যে-কোনো একটি এলাকা নিয়ে কাজ শুরু হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ পরিকল্পিত নগরায়ণে নতুন মাত্রা যোগের মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জনে এক ধাপ এগিয়ে যাবে।

প্রকল্পসূত্রে জানা যায়, নগর পুনরুন্নয়নের জন্য পুরান ঢাকার সাতটি এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে বংশালা পুরান ঢাকার সুপরিচিত এলাকাগুলোর অন্যতম। আয়তনে প্রায় ১২.৭১ একর। আবাসিক ভবন, বাণিজ্যিক ভবন, মিশ্র ব্যবহারসহ এলাকাটিতে প্রায় ৫০০ অবকাঠামো রয়েছে। এ এলাকার ভবনগুলো ইমারত নির্মাণের বিধান মেনে নির্মিত হয়নি। রাস্তাগুলো খুব সংকীর্ণ। তাই এখানে বসবাসকারী নাগরিকরা খুব কমই প্রাকৃতিক আলো-বাতাস পান। সরু রাস্তা থাকায় জরুরি ও দুর্যোগের সময় ভোগান্তি তৈরি হয়। নগর পুনরুন্নয়নের মাধ্যমে মৌলিক চাহিদাগুলো নিশ্চিত করে সুন্দর আবাসিক এলাকা নির্মাণের মাধ্যমে পুরান ঢাকার ঐতিহ্য আবারও পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব।

এ ছাড়া পুরান ঢাকার চকবাজারের আয়তন প্রায় ১.৪৬ একর। এটি একটি পাইকারি ব্যবসাপ্রধান এলাকা। এ অঞ্চলে প্রায় ১ হাজার ১০০ দোকান রয়েছে। এখানকার মার্কেট ও স্থাপনাগুলো পুরনো-জরাজীর্ণ। মার্কেটগুলোর ভিতরের অবকাঠামো অনিরাপদ ও ভূমিকম্পের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। পুনরুন্নয়ন হলে যুগ যুগ ধরে চলে আসা চকবাজারের বাণিজ্যিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ করে এ এলাকাটি ব্যবসাবান্ধব সুবিধা দিয়ে আরও প্রাণবন্ত করে তোলা যায়।

এ ছাড়া ইসলামবাগের আয়তন ১৪.১৪ একর। এসব এলাকায় যারা বাস করেন তাদের বেশির ভাগই নিম্ন আয়ের পরিবার। এ ছাড়া এখানে অনেক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে; যার বেশির ভাগই প্লাস্টিকের ওয়ার্কশপ বা প্লাস্টিক শিল্প। প্লাস্টিকের বোতল, ব্যাগ, পলিথিন ও অন্যান্য পণ্য তৈরি হয়। আর এ এলাকার বেশির ভাগ রাস্তা সরু থাকায় সব সময় যানজটে আটকে থাকতে হয় বাসিন্দাদের। ফুটপাত না থাকায় পথচারীরা রাস্তায় ঝুঁকি নিয়ে চলাফেরা করেন। পুনরুন্নয়নের মাধ্যমে এসব সমস্যা সমাধান করা যেতে পারে। পুরান ঢাকার সাতটি এলাকার মধ্য মৌলভীবাজার সবচেয়ে ছোট। এ এলাকার ভিতরে দুটি ভিন্ন বাজার রয়েছে। মৌলভীবাজার বিভিন্ন ধরনের মসলার জন্য প্রসিদ্ধ। পুনরুন্নয়ন আর্থিক সুবিধা, নতুন কাজের সুযোগ তৈরি করবে এবং পথচারী চলাচলে সুবিধা দেবে। পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারের বাণিজ্যিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ করবে। অন্যদিকে লালবাগের আয়তন ৩৩ একর। সেখানে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ প্রায় ১ হাজার ১০০ অবকাঠামো রয়েছে। এ এলাকাটিতে মিশ্র, শিল্প ও আবাসিক ব্যবহার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার উপস্থিতিও রয়েছে। অপরিকল্পিতভাবে অবকাঠামো উন্নয়নের কারণে পরিবহন যাতায়াতের অনুপযোগী। এ এলাকাটি বসবাস উপযোগী করতে হলে অবশ্যই পুনরুন্নয়ন করতে হবে। এ ছাড়া কামরাঙ্গীর চরের আয়তন প্রায় ৩৩.৬৩ একর। যার মধ্যে কাঠামো সংখ্যা ১ হাজার ৫০০। এলাকাটির বেশির ভাগ কাঠামোই মিশ্র-ব্যবহারের। এ এলাকার বেশির ভাগ ভবনের নিচতলা মুদি ও দর্জির দোকান হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। যেহেতু এলাকাটি অন্য এলাকার তুলনায় দ্রুত বিকশিত হচ্ছে তাই সংস্কার জরুরি। আর হাজারীবাগের আয়তন ১৯১.০৩ একর। এটি মূলত ট্যানারি শিল্পের জন্য বিখ্যাত ছিল। এখন সেগুলো নেই। বর্তমানে মোট জমির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ অবহৃত বা খালি। শহরের মধ্যে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে পুনরুন্নয়নের ক্ষেত্রে হাজারীবাগ একটি সম্ভাবনাময় এলকা। তাই সবুজ মনোরম পরিবেশকে প্রাধান্য দিয়ে এ এলাকার সংস্কার করা যেতে পারে।

সর্বশেষ খবর