রবিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

দুই টার্গেটে আওয়ামী লীগ বিএনপি

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

দুই টার্গেটে আওয়ামী লীগ বিএনপি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বগুড়ায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাসদসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের তৎপরতা শুরু হয়েছে। নির্বাচনের প্রায় এক বছর বাকি থাকলেও বগুড়া শহরের বিভিন্ন দেয়াল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসনভিত্তিক শুভেচ্ছা জানানো শুরু হয়ে গেছে। বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে কি না তা নিয়ে জেলার রাজনৈতিক পাড়ায় চলছে নানা বিশ্লেষণ। এর মধ্যেই জেলার ৭টি সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি থেকে একাধিক প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। স্থানীয়দের কেউ বলছেন বিএনপি ভোটে আসবে, আবার কেউ বলছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা আসবে না। দলীয় সিদ্ধান্ত যেমনই হোক, বিএনপির মধ্যেও অনেক নেতা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে মুখিয়ে আছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলায় দল গুছিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অপেক্ষা করছে বিএনপি। দলটি বগুড়ায় নিজেদের হারানো দুর্গ পুনরুদ্ধার করতে চায়। আর সেই দুর্গে হানা দিয়ে আবারও নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে চায় আওয়ামী লীগ। আর জাতীয় পার্টি (জাপা), জাসদ তাদের আসন ধরে রাখতেও তৎপরতা চালাচ্ছে। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বগুড়ার ৭টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ দুটি, বিএনপি দুটি, জাতীয় পার্টি দুটি ও একটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়লাভ করে।

২০১৪ সালের নির্বাচন বিএনপির বর্জনের মধ্য দিয়ে বগুড়ার ৭টি আসনের দুটিতে আওয়ামী লীগ, একটিতে জাসদ ও বাকি চার আসনে জাপার প্রার্থীরা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর আগে ২০০৮ সালের নির্বাচনে ৫টিতে বিএনপি ও দুটি আসনে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়েছিল।

বগুড়া- (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) : এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের সাহাদারা মান্নান। আগামী নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী হবেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী হতে চান স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ম. আবদুর রাজ্জাক, ঢাকাস্থ বগুড়া সমিতির সভাপতি ও শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর মুখোশ ছবি প্রকল্পের সদস্য সচিব কে এম মোস্তাফিজার রহমান শ্যামল, সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত সুরুজের পুত্র মুজাহিদুল ইসলাম বিপ্লব।

বিএনপি থেকে সাবেক সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় সদস্য আলহাজ কাজী রফিকুল ইসলাম, বগুড়া জেলা কমিটির সদস্য এ কে এম আহসানুল তৈয়ব জাকির এবং জিয়া শিশু-কিশোর সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন চৌধুরী মনোনয়নপ্রত্যাশী।

জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য ও সারিয়াকান্দি উপজেলা সভাপতি অধ্যক্ষ মো. মোকছেদুল আলম মনোনয়ন পেতে ইচ্ছুক। জামায়াতে ইসলামীর বগুড়া জেলা শাখার সাবেক আমির অধ্যক্ষ মো. শাহাবুদ্দীন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা আমিনুল ইসলাম হিরু নিজ নিজ দলীয় প্রার্থী।

বগুড়া- (শিবগঞ্জ) : এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির জেলা সভাপতি শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ। তিনি আবারও দলের প্রার্থী হবেন। আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট হলেও তিনি মনোনয়ন পাবেন বলে নেতা-কর্মীরা জানান।

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক সাবেক ডাকসু ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না এ আসনে প্রার্থী হতে পারেন। এখানে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী ব্যবসায়ী আকরাম হোসেন ও শিবগঞ্জ পৌর মেয়র তৌহিদুর রহমান মানিক। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী অধ্যক্ষ মীর শাহে আলম। তিনি শিবগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি। আবার একক প্রার্থী হিসেবে জামায়াত এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাওলানা শাহাদাতুজ্জামানকে ইতোমধ্যে মনোনীত করেছে।

বগুড়া- (আদমদীঘি দুপচাঁচিয়া উপজেলা) : এ আসনে আবার প্রার্থী হতে পারেন বর্তমান এমপি জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম তালুকদার। মহাজোট থেকে এই আসনে তিনিই প্রার্থী হবেন বলে এলাকায় গুঞ্জন চলছে। এ ছাড়া আদমদীঘি উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম খান রাজু, সান্তাহার ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নাহিদ সুলতানা তৃপ্তি, আদমদীঘি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অজয় সরকার, আওয়ামী লীগ নেতা জামিল তালুকদার দলীয় মনোনয়ন চান।

আদমদীঘি উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল মহিত তালুকদার, বগুড়া জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ফজলুল বারী তালুকদার বেলাল, বগুড়া শহর বিএনপির সভাপতি হামিদুল হক চৌধুরী হিরু, শ্রমিক দল ঢাকা মহানগর উত্তর কমিটির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক লায়ন ফরিদ আহম্মেদ, বিএনপি নেতা ও সান্তাহার পৌরসভার সাবেক মেয়র ফিরোজ মো. কামরুল হাসান, বিএনপি নেতা আতাউর রহমান খান মুক্তার নাম দলীয় প্রার্থী হিসেবে শোনা যাচ্ছে। ইসলামী আন্দোলন আদমদীঘি উপজেলা নেতা আবদুর রাজ্জাক দলীয় প্রার্থী হবেন।

বগুড়া- (নন্দীগ্রাম কাহালু) : এ আসনে সম্প্রতি উপনির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন বগুড়া জেলা জাসদের সভাপতি ১৪ দলের নেতা এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন। স্বাভাবিকভাবেই তিনি আগামীতেও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট ১৪ দলের মনোনয়ন চাইবেন। এ ছাড়া নন্দীগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন রানা, জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য অধ্যক্ষ আহসানুল হক, জেলা কার্যনির্বাহী সদস্য তৌহিদুল করিম কল্লোল, কাহালু উপজেলা সভাপতি ও পৌরসভার সাবেক মেয়র হেলাল উদ্দিন কবিরাজ, নন্দীগ্রাম উপজেলার সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রফিকুল ইসলাম রফিক, নন্দীগ্রাম উপজেলা সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইউনুস আলী ও কাহালু উপজেলা সহসভাপতি কামাল উদ্দিন কবিরাজ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান।

এ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে প্রার্থী হতে চান দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা যুগ্ম আহ্বায়ক শাহীন মোস্তফা কামাল ফারুক এবং সাবেক কেন্দ্রীয় সদস্য আবদুস সালাম বাবু।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রার্থীরা হলেন- সাবেক সংসদ সদস্য মো. মোশারফ হোসেন। জামায়াত নেতা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাওলানা তায়েব আলী দলীয় প্রার্থী হবেন বলে শোনা যাচ্ছে। এ ছাড়া আলোচিত অভিনেতা আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম, ইসলামী আন্দোলনের নেতা ইদ্রিস আলী, তরিকত ফেডারেশনের কাজী এম এ কাশেম এবং বিএনএফের জীবন রহমান এ আসনে নিজ নিজ দলের হয়ে নির্বাচন করতে আগ্রহী।

বগুড়া- (শেরপুর ধুনট) : এ আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন বর্তমান জাতীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ হাবিবর রহমান, বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ মজিবর রহমান মজনু, ধুনট উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি টি আই এম নুরুন্নবী তারিক, সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী আসিফ ইকবাল সনি এবং মহিলা আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌসী রুপা।

বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ, শেরপুর উপজেলা বিএনপির সদস্য আসিফ রব্বানী সানভি, পৌর বিএনপির সভাপতি স্বাধীন কুমার কুন্ডু। এ ছাড়া বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা শেরপুর পৌরসভার মেয়র জানে আলম খোকা দলীয় সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার মাধ্যমে দলীয় প্রার্থী হতে চান। জামায়াতের একক প্রার্থী হিসেবে ধনাঢ্য ব্যবসায়ী মাওলানা দবিবুর রহমানকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আর জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে শেরপুর উপজেলা সভাপতি আবদুল কুদ্দুস কুদু ও সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুকের নাম শোনা যাচ্ছে। কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী হিসেবে সন্তোষ সাহা এবং শেরপুর উপজেলা সভাপতি হরিশংকর সাহার নাম শোনা যাচ্ছে।

বগুড়া- (সদর উপজেলা) : জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ আসনের বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি প্রার্থী না হলে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এই আসনে প্রার্থী হতে পারেন। বরাবরই এই আসনে বিএনপির প্রার্থীরা জয়ী হয়ে আসছেন। এ ছাড়া সাবেক এমপি গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ, বিএনপি নেতা এ কে এম মাহবুবর রহমান, জেলা বিএনপির সভাপতি এবং বগুড়া পৌরসভা মেয়র রেজাউল করিম বাদশা, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম প্রার্থী হতে পারেন।

এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী হতে পারেন সম্প্রতি উপনির্বাচনে জয়ী সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হতে পারেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি টি জামান নিকেতা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মোহন, কোষাধ্যক্ষ মাছুদুর রহমান মিলন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সুলতান মাহমুদ খান রনি।

মহাজোট থেকে প্রার্থী হতে পারেন সাবেক সংসদ সদস্য জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব নূরুল ইসলাম ওমর, জাসদের কেন্দ্রীয় নেতা এ বি এম জাকিরুল হক টিটন ও জাসদ নেতা ইমদাদুল হক ইমদাদ। জামায়াতের প্রার্থী হবেন বগুড়া শহর জামায়াতের আমির আবিদুর রহমান সোহেল। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ব্যবসায়ী আবদুল মান্নান আকন্দ নির্বাচনে লড়তে চান।

বগুড়া- (গাবতলী শাজাহানপুর) : এ আসনেও বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। আবার আইনগত সমস্যা না থাকলে প্রার্থী হতে পারেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বর্তমানে এই আসনের সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু আবারও স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন। এই আসনে গত নির্বাচনে রেজাউল করিম বাবলু স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটে জয়লাভ করেন।

এ ছাড়া বিএনপি থেকে প্রার্থী হতে পারেন সাবেক এমপি হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু এবং গাবতলী পৌরসভার সাবেক মেয়র মোরশেদ মিল্টন। মহাজোট থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হতে পারেন জাতীয় পার্টির নেতা সাবেক এমপি আলতাফ আলী।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে পারেন বিএমএ বগুড়া জেলা শাখার সভাপতি ডা. মোস্তফা আলম নান্নু, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক এ কে এম আসাদুর রহমান দুলু, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ শাহাদৎ আলম ঝুনু এবং বগুড়া শহর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক রফি নেওয়াজ খান রবিন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর