সোমবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

রাজ্জাক হয়ে গেলেন জাকির

ধর্ষণ ও হত্যায় মৃত্যুদন্ড ২৮ বছর পর গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক

নেত্রকোনার কলমাকান্দায় কিশোরীকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণের পর হত্যার মামলায় মৃত্যুদন্ড পাওয়া পলাতক এক আসামিকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৩-এর সদস্যরা। হত্যাকান্ডের পর ঢাকায় এসে কখনো রিকশা, কখনো অটোরিকশা চালিয়েছেন তিনি। একপর্যায়ে নিজের নাম আবদুর রাজ্জাক পাল্টে জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) হয়ে যান জাকির হোসেন। এভাবেই নিজের নাম আর বেশভূষা পাল্টে দীর্ঘ প্রায় ২৮ বছর পালিয়ে বেড়ানোর পর অবশেষে ধরা পড়েছেন দন্ডিত এই আসামি। গতকাল রাজধানীর টিকাটুলিতে র‌্যাব-৩-এর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৩-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, আবদুর রাজ্জাকের বাড়ি নেত্রকোনার কলমাকান্দার হাপুনিয়া গ্রামে। স্ত্রী সন্তান নিয়ে সেখানেই বসবাস করতেন। ১৯৯৫ সালের এপ্রিলে এক কিশোরীকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ ও হত্যাকান্ডের পর পালিয়ে ঢাকায় চলে আসেন তিনি। একই মামলায় ফাঁসির দন্ড পেয়েছেন আরও পাঁচ আসামি এবং যাবজ্জীবন দেওয়া হয়েছে সাতজনকে। এরই মধ্যে শনিবার গভীর রাতে গাজীপুরের গাছা এলাকায় অভিযান চালিয়ে রাজ্জাককে গ্রেফতার করা হয়। আবদুর রাজ্জাক এক সন্তানের বাবা হওয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকান্ডে লিপ্ত থাকতেন। এ নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে তার ঝগড়া লেগেই থাকত। কলহের জেরে একপর্যায়ে সন্তান নিয়ে তার স্ত্রী অন্যত্র চলে যান। সে সময় রাজ্জাক প্রতিবেশী এক কিশোরীকে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব দেন। এতে রাজি না হওয়ায় মেয়েটিকে হত্যার হুমকি দেন। একপর্যায়ে পরিকল্পনা করে ১৯৯৫ সালের ১৩ এপ্রিল রাতে আবদুর রাজ্জাকসহ তার সহযোগীরা মেয়েটিকে মুখে গামছা পেঁচিয়ে তুলে নিয়ে যায়। পাউরা গ্রামের একটি হাওরে নিয়ে ১২ জন মিলে তাকে ধর্ষণ করে। এ সময় ভুক্তভোগী চিৎকার করতে থাকলে রাজ্জাক তার গলাটিপে ধরে এবং অন্যরা মারধর করতে থাকে। এতে একপর্যায়ে মেয়েটি মারা যায়। পরে লাশ বস্তায় ভরে মাটিতে পুঁতে রেখে পালিয়ে যায় সবাই। ১৯ এপ্রিল কিশোরীর লাশ হাওর থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় আবদুর রাজ্জাককে এক নম্বর আসামি করে ১০ জনের নামে ধর্ষণ ও হত্যা মামলা করেন নিহতের বাবা। মামলার তদন্তে ওই ১০ আসামি ছাড়াও সম্পৃক্ততা পাওয়ায় আরও দুজনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেওয়া হয়। এরপর ২০০২ সালে বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে কিশোরীকে ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে আবদুর রাজ্জাকসহ পাঁচজনকে মৃত্যুদন্ড এবং অপর সাতজনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেন আদালত। আবদুর রাজ্জাক নেত্রকোনা থেকে পালিয়ে কিছু দিন কুড়িলে রিকশা চালিয়েছেন।

এরপর উত্তরায় সপরিবারে ছয় বছর সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেছেন। পরে জাকির হোসেন ছদ্মনাম দিয়ে এনআইডি ইস্যু করে গাছা এলাকায় আত্মগোপনে থেকে বসবাস শুরু করেন। সেখানে তিনি দাড়ি ও চুল বড় রেখে নতুন পরিচয়ে বসবাস শুরু করেন। চালকের পেশার আড়ালে মাদককারবারিতেও জড়িয়েছেন তিনি। ১২ আসামির মধ্যে আট আসামি কারাগারে রয়েছেন। পলাতক রয়েছেন একজন। আর কারাভোগের সময় মারা গেছেন দুজন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর