বস্তায় আদা চাষ করে সফলতার স্বপ্ন বুনছেন আফরোজা খাতুন নামে চুয়াডাঙ্গার এক নারী। বাড়ির পরিত্যক্ত ছায়াযুক্ত স্থানে এ চাষ তাঁর বাড়তি আয়ের পথ খুলে দিয়েছে। জেলার দামুড়হুদা উপজেলার ইব্রাহিমপুর গ্রামের হাসেম আলীর স্ত্রী তিনি। স্বল্পখরচ ও কম পরিচর্যায় আদার ফলন হওয়ায় যে-কেউ এ চাষ করতে পারেন বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত। সরেজমিন ইব্রাহিমপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির এক কোণে পরিত্যক্ত জমিতে প্লাস্টিকের বস্তায় আদা চাষ করা হয়েছে। আফরোজা খাতুনের বাড়িতে ১৫০টি বস্তায় দেখা যায় আদা গাছ। কয়েক মাস পরই এসব আদা আহরণ করা যাবে। কৃষি বিভাগের মতে, একেকটি বস্তা থেকে এক মৌসুমে সাড়ে ৪ থেকে ৫ কেজি পর্যন্ত আদা পাওয়া যায়। সে হিসেবে ১৫০ বস্তা থেকে প্রায় ৬০০ কেজি আদার উৎপাদন হতে পারে। এতে ওই চাষি লক্ষাধিক টাকার আদা বিক্রি করতে পারবেন। আফরোজা খাতুন বলেন, ওয়েভ ফাউন্ডেশনের কর্মীরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বস্তায় আদা চাষের বিষয়টি বুঝিয়ে বলেন। তাদের কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি এ বছর ১৫০ বস্তায় আদা চাষ করেছেন। মৌসুম শেষে নিজের চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি আদা বিক্রি করতে পারবেন বলে প্রত্যাশা করেন আফরোজা খাতুন। আফরোজার স্বামী হাসেম আলী বলেন, বাড়ির এক কোণে কিছু জমি পতিত অবস্থায় পড়ে ছিল। স্ত্রীর জোরাজুরিতে বস্তায় আদা লাগানো হয়েছে। ভালো মানের গাছ দেখা দিয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যেই আদা ওঠানো যাবে। আফরোজা খাতুনের আদা চাষে সার্বিক সহযোগিতা করেছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ওয়েভ ফাউন্ডেশন। এ সংস্থার সিনিয়র সমন্বয়কারী কামরুজ্জামান বলেন, ‘প্রথম পর্যায়ে দুটি বাড়িতে বস্তায় আদা চাষের প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে প্রদর্শনী পাওয়া চাষিদের সফলতা অন্য পরিবারগুলোয় বস্তায় আদা চাষে উদ্বুদ্ধ করবে।’ ওয়েভ ফাউন্ডেশনের উপনির্বাহী পরিচালক নাসিফা আলী বলেন, ‘পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের সমন্বিত কৃষি ইউনিটের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় গ্রামীণ পর্যায়ে পিছিয়ে পড়া পরিবারকে বস্তায় আদা চাষে সহযোগিতা করা হয়েছে। আমাদের বিশ্বাস উপকারভোগী পরিবারগুলোর সফলতা অন্যদের অনুপ্রাণিত করবে।’ দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, ‘এ বছর প্রথম দামুড়হুদা উপজেলায় সরকারিভাবে ১৫ হাজার বস্তায় আদা চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বেসরকারিভাবে ওয়েভ ফাউন্ডেশনও প্রান্তিক পরিবারগুলোকে বস্তায় আদা চাষে সহায়তা করছে। বিশেষ করে বাড়ির পতিত জমিতে আদা চাষ পরিবারগুলোতে কিছুটা আর্থিক সচ্ছলতা এনে দেবে।’ তিনি বলেন, চুয়াডাঙ্গায় দুই জাতের আদা চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে বারি-২ ও পাহাড়ি জাতের আদা রয়েছে। বস্তায় আদা চাষ করলে ‘রাইজম রট’ রোগের বিস্তার রোধ করা যায়। ফলে সহজেই চাষিরা লাভবান হতে পারেন।