রংপুর মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. রাজিবুল ইসলাম বলেছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শহীদ আবু সাঈদের বুক অসংখ্য গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল। মেট্রোপলিটন পুলিশের একাধিক কর্মকর্তাসহ ঢাকা থেকে আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া হয়েছিল ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পরিবর্তনের জন্য। আমি রিপোর্ট যখন চূড়ান্ত দিতে যাই, তার আগে ছয়বার আমাকে রিপোর্ট পরিবর্তন করতে হয়েছে।
গতকাল দুপুরে মুঠোফোনে ডা. রাজিবুল ইসলামের সঙ্গে কথা হলে তিনি এসব তথ্য দেন। তিনি বলেন, আবু সাঈদ গুলিতেই মারা গেছেন। তার মাথায় কোনো আঘাত ছিল না। আমি একটি আঘাতও দেখি নাই মাথায়। এটিই সত্যি।
পুলিশ ও প্রশাসন চেয়েছিল, মাথায় আঘাতের কারণ দেখিয়ে প্রতিবেদন দিলে পুলিশ এবং প্রশাসনের লোকজন বেঁচে যাবেন। কিন্তু একজন চিকিৎসক হিসেবে আমি এটি করতে পারি না এবং করি নাই। ডা. রাজিবুল বলেন, হেড ইনজুরি হলে সাধারণত ব্রেনে রক্তক্ষরণ থাকে। ইন্টারক্রিমিনিয়াল থাকে। স্ক্যামবোল ফ্রাকচার থাকে। সাঈদের ক্ষেত্রে কিন্তু এগুলো কোনোটাই ছিল না। আমি প্রচ- চাপে ছিলাম। ওই সময়টা এমন গেছে আমাকে এটাও ভয় দেখানো হয়েছে আপনার নামে গোয়েন্দা রিপোর্ট হয়ে গেছে ঢাকায়। তারপরও আমি মাথা নত করিনি, সত্য রিপোর্ট দিয়েছি। তিনি বলেন, ‘মিথ্যা তথ্য দিয়ে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করতে বলা হয়েছিল। ছয়বার এই প্রতিবেদন পরিবর্তন করতে বাধ্য করেছিল পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা। আমাকে বলা হয়েছিল, পুলিশের গুলিতে নয়, মাথায় আঘাতজনিত কারণে আবু সাঈদের মৃত্যু হয়েছে মর্মে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য। এভাবে প্রতিবেদন তৈরির জন্য পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তা, এমনকি ওপর মহল থেকেও নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল। এত চাপের মাঝেও আমি সঠিক তথ্য দিয়ে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করেছি। উল্লেখ্য, গত ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেটে পুলিশের গুলিতে নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন। গত ১৮ জুলাই নিহত আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী বাদী হয়ে ১৭ জনের নামে এবং অজ্ঞাত আরও ১৩০-১৩৫ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন।