সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের পরও বাজারে দাম কমছে না। একটার পর একটা পণ্য সিন্ডিকেটের ফলে দাম বাড়ছে। যদিও বাজারে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিভিন্ন পণ্যের শুল্ক প্রত্যাহার করেছে সরকার। এ ছাড়া ভোক্তা অধিদপ্তর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন জেলা পর্যায়ে গঠিত টাস্কফোর্স কমিটি বাজার মনিটর করছে। এরপরও একটার পর একটা পণ্য দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে সিন্ডিকেট। এবার দাম বাড়ছে আলুর। এর আগে গত সপ্তাহে দাম বেড়েছে পিঁয়াজের। বাজারে ৭০ টাকার নিচে আলু মিলছে না। এ ছাড়া দেশে উৎপাদিত নতুন আলু বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মতে, সব ধরনের খরচ মিলে এক কেজি আলুর সর্বোচ্চ দাম হতে পারে ৪৬ টাকা। বাজারের দাম বাড়িয়ে কেজি প্রতি ২৪ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিচ্ছে সিন্ডিকেট। এ ছাড়া পিঁয়াজও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। দাম বাড়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ। বাজার করতে গিয়ে তাদের নাভিশ্বাস উঠেছে।
গত ৫ সেপ্টেম্বর এক প্রজ্ঞাপনে এনবিআর আলু আমদানিতে বিদ্যমান ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে আলু আমদানিতে যে ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আছে, তা সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে। আলু আমদানিতে এ শুল্ক সুবিধা বহাল থাকবে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। সরকারের নানা উদ্যোগের পর আলুর দাম আগের তুলনায় ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর জানায়, ভোক্তা পর্যায়ে আলুর যৌক্তিক দাম ৪৬ টাকা। তাদের মতে বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭০ টাকা। শুল্ক কমানোর আগে এ আলু বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। এক মাস আগেও আলু বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। আর গত বছরের এ সময় আলুর দাম ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা। সরকারের ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ সর্বশেষ তথ্যমতে বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। গত সপ্তাহে ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। এ ছাড়া গত সপ্তাহে পিঁয়াজের দাম বেড়েছে। বাজারে প্রতি কেজি দেশি পিঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায়। আর আমদানিকৃত পিঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকায়। সরকারের ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ সর্বশেষ তথ্যমতে, বাজারে প্রতি কেজি দেশি পিঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। এক মাস আগে এ পিঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১০৫ থেকে ১১৫ টাকায়। এ ছাড়া টিসিবির মতে আমদানি করা পিঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১২০ টাকায়। গত সপ্তাহে ছিল ৮৫ থেকে ১১০ টাকা।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য মতে, বাজারে প্রতি কেজি দেশি পিঁয়াজের যৌক্তিক দাম হলো ৬৫ টাকা। অথচ এর দ্বিগুণ দাম দিয়েও বাজারে দেশি পিঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্যমতে, বাজারে প্রতি কেজি দেশি পিঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায়। এক মাস আগেও এসব পিঁয়াজের দাম ছিল ১০৫ থেকে ১১৫ টাকা। এ ছাড়া আমদানিকৃত পিঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১১৫ টাকা। গত মাসের এ সময়ে বিক্রি হয়েছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা। এ ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহের তুলনায় সব ধরনের সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা কমেছে। তবে শিম ও কাঁচা মরিচ কেজিতে ৪০ টাকা কমে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
গ্রীষ্মকালীন সবজি মুখিকচু প্রতিকেজি ৭০ টাকা, বেগুন ৭০ থেকে ৯০ টাকা, করলা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, পটোল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৬০ টাকা, বরবটি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, পেঁপে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ধুন্দল ৬০-৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, কচুর লতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ঝিঙা ৮০ থেকে ১০০ টাকা, শসা ৬০ থেকে ৮০ টাকা ও কাঁচা মরিচ ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে গত সপ্তাহের তুলনায় সব ধরনের মুরগির দাম কমেছে। গত সপ্তাহের তুলনায় ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ১০ টাকা কমে ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালি কক মুরগি কেজিতে ৪০ টাকা কমে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালি হাইব্রিড ২৯০ টাকা, দেশি মুরগি ৫২০ টাকা, লেয়ার লাল মুরগি ৩০০ টাকা ও সাদা লেয়ার ২৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারগুলোতে শীতকালীন সবজি শিম ১২০ টাকা কেজি, ফুলকপি ৪০ থেকে ৬০ টাকা পিস, বাঁধাকপি ছোট সাইজের ৪০ টাকা পিস, পাকা টম্যাটো প্রকারভেদে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা ও মুলা ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে লেবুর হালি ২০ থেকে ৪০ টাকা, ধনেপাতা কেজিতে ১০০ টাকা কমে ২০০ টাকা, কাঁচা কলা হালি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, চাল কুমড়া ৬০ টাকা পিস ও মিষ্টি কুমড়া ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারগুলোতে এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা, হাঁসের ডিম ২২০ টাকা, দেশি মুরগির ডিমের হালি ৯০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।