শীতের হাওয়ায় ঝাঁক বেঁধে ডানা মেলছে অতিথি পাখির দল। তাদের কিচিরমিচির শব্দে মুখর চারপাশ। প্রতি বছর শীতকাল এলেই বাহারি রঙের এমন অতিথি পাখিতে ভরে যায় এ গ্রাম। এ ছাড়া শীত মৌসুম ছাড়াও প্রায় সারা বছরই দেশিবিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে গ্রামটি। বলা চলে, পাখিরাই বদলে দিয়েছে এই গ্রামের নাম। ইতোমধ্যে পাখির জন্য সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করায় এক যুগ আগে থেকেই নড়াইলের পানিপাড়া গ্রামটিকে পাখিদের গ্রাম বলেই সম্বোধন করেন স্থানীয়রা।
নড়াইল শহর থেকে প্রায় ৪০-৪৫ কিলোমিটার পূর্বে নড়াগাতি থানার গোপালগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম পানিপাড়া। এ গ্রামেই প্রায় ৫০ একর জমির ওপর কৃষিভিত্তিক পরিবেশবান্ধব পর্যটন কেন্দ্র অরুণিমা রিসোর্ট গলফ ক্লাব ও ইকোপার্ক। ঝড়বৃষ্টি, তুষারপাতসহ প্রকৃতির প্রতিকূলতা থেকে বাঁচতে হাজার হাজার মাইল পাড়ি জমিয়ে এখানে আসছে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখি। এর সঙ্গে রয়েছে দেশীয় পাখি। সব মিলিয়ে ২০০১ সাল থেকে বছরের আট মাস বিভিন্ন প্রজাতির পাখির কলতানে মুখর থাকে পার্কটি। তবে পাখিদের জন্য সংরক্ষিত ঘোষণা করায় এলাকাটি পরিচিত ‘পাখি গ্রাম’ নামে। সরেজমিন দেখা গেছে, অরুণিমা ইকো-পার্কে বিভিন্ন গাছের ডালে ডালে গড়ে উঠেছে দেশিবিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির পাখির কয়েক হাজার বাসস্থান। পাখির এ অভয়ারণ্যের মধ্যে রয়েছে সাদা বক, হাঁসপাখি, পানকৌড়ি, শামুকখোলা, শালিখ, টিয়া, দোয়েল, ময়না, মাছরাঙা, ঘুঘু, শ্যামা, কোকিল, টুনটুনি, চড়ুইসহ নাম না জানা দেশিবিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির পাখি।
বিশেষ করে ২০০১ সাল থেকেই শীত মৌসুমে অতিথি ও দেশীয় পাখি আসাযাওয়া করছে এখানে। প্রজননের নির্ভার সুযোগসুবিধা থাকায় ক্রমান্বয়ে বাড়ছে পাখির সংখ্যা।
অতিথি পাখি আর দেশি পাখি মিলে নড়াইলের অরুণিমা রিসোর্ট গলফ ক্লাব ও ইকোপার্ক এখন পাখির রাজ্যে পরিণত হয়েছে। দর্শনার্থী নির্জনা হাবীব বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জেনেছি এই গ্রামে সারা বছরই বিভিন্ন জাতের পাখি থাকে। বিশেষ করে শীতের মধ্যে এখানে পাখির রাজ্যে পরিণত হয়। পাখিদের বসবাসের কথা অনেক দিন থেকে শুনছি। তাই আজ দেখতে এলাম। পাখিদের ডাক শুনতে ও আকাশে দল বেঁধে উড়তে দেখতে বেশ ভালো লাগছে।’ নড়াইল জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. সিদ্দীকুর রহমান জানান, ‘এই অভয়ারণ্যে কয়েক হাজার দেশিবিদেশি পাখি থাকে। বিকাল থেকে রাত যত গভীর হয় পাখিদের আগমন তত বাড়তে থাকে। ভোর হলেই পাখির কলতানে মুখর হয় গোটা এলাকা। আবার বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই বেশির ভাগ ছুটে যায় খাবারের সন্ধানে। আবার বিকাল হলে এখানে চলে আসে। পাখিগুলোর যাতে কোনো রোগবালাই না হয় সেজন্য প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে তদারকি করা হচ্ছে।’