দীর্ঘ দুই দশক পর বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদারে নতুন উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা। আসন্ন যৌথ অর্থনৈতিক কমিশন (জেইসি) বৈঠকে বাংলাদেশ পাকিস্তানকে বিনিয়োগের জন্য একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) দেওয়ার প্রস্তাব দিতে যাচ্ছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২৭ অক্টোবর ঢাকায় নবম জেইসি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও হালাল খাদ্য উৎপাদনে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়গুলো অগ্রাধিকার পাবে। কর্মকর্তারা জানান, হালাল খাদ্য উৎপাদন ও রপ্তানি বাড়াতে বৈঠকে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) এবং পাকিস্তান হালাল অথরিটির (পিএইচএ) মধ্যে একটি সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে।
এ বিষয়ে ইআরডির অতিরিক্ত সচিব ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, এটি দুই দেশের মধ্যে প্রায় দুই দশক পর একটি ‘ওয়ার্ম-আপ’ বৈঠক। আমরা আশা করি ঢাকা ও ইসলামাবাদ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে নতুন করে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, কৃষি খাতে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা এবং বস্ত্র ও হালাল খাদ্য উৎপাদনে পাকিস্তানের দক্ষতা কাজে লাগিয়ে উভয় দেশ পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে শিল্প ও রপ্তানি খাতে উন্নতি করতে পারবে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে পাকিস্তান বাংলাদেশের চেয়ে প্রায় ১০ গুণ এগিয়ে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে ৭৮ কোটি ৭০ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করেছে, যেখানে রপ্তানি ছিল মাত্র ৮ কোটি ডলার। বাণিজ্য বৈষম্য কমানোও এ বৈঠকের অন্যতম আলোচ্য বিষয় বলে জানিয়েছেন ইআরডি কর্মকর্তারা। তারা জানান, বাংলাদেশ বৈঠকে পাকিস্তানের কাছে পাট, ওষুধ, তৈরি পোশাক, ইলেকট্রনিকস ও চাসহ বিভিন্ন পণ্যে বেশি শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার চাওয়ার পরিকল্পনা করছে। বৈঠকে পাকিস্তানকে বিনিয়োগের জন্য একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) প্রস্তাব করতে পারে ঢাকা। ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। তার সঙ্গে থাকবেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী, ইআরডি সচিব শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
অন্যদিকে পাকিস্তান প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন দেশটির অর্থনীতিবিষয়ক মন্ত্রী আহাদ খান চিমা। ২০ বছরের দীর্ঘ বিরতির পর এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর আগে সর্বশেষ অষ্টম জেইসি বৈঠক হয়েছিল ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে। এরপর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার পাকিস্তানের সঙ্গে নতুন বৈঠক আয়োজন করতে অনীহা দেখায়, ফলে সম্পর্ক শীতল হয়ে পড়ে। তবে গত বছর ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর, দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক ধীরে ধীরে উষ্ণ হতে শুরু করে। গত ১৪ মাসে চারজন পাকিস্তানি মন্ত্রী ঢাকায় এসেছেন, যা দুই দেশের সম্পর্কের নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এর মধ্যে গত এপ্রিল মাসে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ ঢাকায় অনুষ্ঠিত সচিব পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেন। এরপর আগস্টে পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান এবং উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার পৃথক সফরে ঢাকায় এসে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করেন। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আশা করছেন, আসন্ন বৈঠকটি দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক পুনর্গঠনে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা ঘটাবে।