মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের অগ্রাধিকার প্রবেশ সুবিধা জেনারেলাইজ সিস্টেম অব প্রিফারেন্স (জিএসপি) ইস্যু নিয়ে এখনই আলোচনায় সম্মত নয় দেশটির বাণিজ্য দপ্তর (ইউএসটিআর)। দপ্তরটি বলেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে নয় বরং নির্বাচিত সরকারের প্রতিনিধি এ ইস্যুতে আলোচনা করলে তা অধিক কার্যকর হবে। একই সঙ্গে ন্যাগোসিয়েশন করা হবে সহজ।
১৩-১৮ অক্টোবর ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বার্ষিক সভা চলাকালে ইউএসটিআরের সঙ্গে অর্থ উপদেষ্টার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে এ মতামত জানিয়েছে ইউএসটিআর। অর্থ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এ ছাড়া এলডিসি থেকে উত্তরণের সময়সীমা পেছানোর কারণেই আপাতত জিএসপি সুবিধা পাওয়ার যোগ্যতা হারাতে পারে বাংলাদেশ। এর আগে জিএসপি সুবিধা বাতিল করা হয়েছে। এমনকি সংস্থাটি মনে করে অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত নির্বাচিত সরকার এসে বাতিল করে দিতে পারে। এমন আশঙ্কা থেকে এই মুহূর্তে এ বিষয়ে আলোচনায় সম্মত নয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
এ ছাড়া গত আগস্টে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের ভবিষ্যৎ, শ্রম আইন সংস্কার এবং এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী সময়ে জিএসপি প্লাস সুবিধা নিশ্চিতকরণ বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল এবং বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। একই সঙ্গে শ্রম আইনের কয়েকটি ধারার বিষয়ে ইউএসটিআরও আপত্তি জানিয়েছে। বৈঠকে ইইউ প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের শ্রম আইনকে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সনদ অনুযায়ী সংস্কারের ওপর জোর দেয়। তারা জানান, শ্রম আইন সংস্কার সময়োপযোগীভাবে সম্পন্ন হলে তা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক বার্তা বয়ে আনবে। এ বিষয়গুলো সম্পর্কে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে ইউএসটিআর প্রতিনিধিদল।
ইউএসটিআর বলছে, কথা ছিল ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশকে অবাধ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হবে। এ জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন, চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষতা বৃদ্ধি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার এবং কর্মশক্তির সক্ষমতা বৃদ্ধিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এলডিসি উত্তরণের সময়সীমা পেছানোর যে আলোচনা শুরু হয়েছে সেটা ইউএসটিআরের দৃষ্টিগোচর হয়েছে।
যদিও ওয়াশিংটনের বৈঠকে বাংলাদেশের শ্রম খাত উন্নয়নে গৃহীত সময়াবদ্ধ লেবার রোডম্যাপ তুলে ধরা হয় এবং এর বাস্তবায়নের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা হয়। ইউএসটিআর অবশ্য এটাকে আরও সময়োপযোগী, শ্রমিকবান্ধব ও অধিক কার্যকর করতে বলেছে। ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর যেসব কারখানা রাজনৈতিক কারণে বন্ধ হয়েছে এবং এর কারণে যেসব শ্রমিক বেকার হয়েছেন তাদের নিরাপত্তার বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
বেকার শ্রমিকরা রাজনীতির শিকার হয়েছে কি না তারা তাদের চাকরি অবসায়নের সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন কি না তাদের চাকরি বিধি অনুযায়ী বাদ দেওয়া হয়েছে কি না সেখানে শ্রম আইনের বাস্তবায়ন হয়েছে কি না এসব বিষয়েও প্রশ্ন তুলেছে ইউএসটিআর এবং এসব বিষয়ে গ্রহণযোগ্য সমাধানের জন্য নির্বাচিত সরকারের প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা করা প্রয়োজন বলে মনে করে ইউএসটিআর।