দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সমুদ্রভিত্তিক আদিবাসী সম্প্রদায় বাজাউ লাউত কয়েক শতাব্দী ধরে সাগরে জীবনযাপন করছে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন, অতিরিক্ত মৎস্য আহরণ এবং পরিবেশগত ক্ষতির কারণে তাদের ঐতিহ্যবাহী জীবনপ্রণালী হুমকির মুখে পড়েছে। ফলে তারা এখন স্থলে নতুন বাস্তবতায় মানিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছে।
২০ বছর বয়সী বিলকুইন জিমি সালিহ, বাজাউ লাউত সম্প্রদায়ের একজন প্রতিনিধি। তিনি তার শৈশবের স্মৃতিচারণা করেন। মালয়েশিয়ার বোর্নিওর সেম্পোর্নার উপকূলে একটি লেপা নামক নৌকা-বাড়িতে তার জন্ম। তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই ডাইভ করা শিখেছি, যা আমাদের প্রজন্মের বিশেষ দক্ষতা। আমরা সাগরে বসবাস করি বলে পানির নিচে অনেকক্ষণ থাকার ক্ষমতা অর্জন করি।
বাজাউ লাউত সম্প্রদায়ের বিশেষ শারীরবৃত্তীয় অভিযোজন তাদের সাগরে দীর্ঘ সময় ডুব দিয়ে সামুদ্রিক শসা, অ্যাবালোন এবং সামুদ্রিক ঝিনুক সংগ্রহে সাহায্য করে। তবে অতিরিক্ত মৎস্য আহরণ এবং পরিবেশের অবনতি তাদের ঐতিহ্যবাহী পেশাকে কঠিন করে তুলেছে। বিলকুইন বলেন, আগে আমরা সহজেই এক বালতি সামুদ্রিক শসা পেতাম। কিন্তু এখন তা প্রায় অসম্ভব। মাছের মজুতও কমে গেছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সাগরের উষ্ণতা বৃদ্ধি, মহাসাগরের অম্লীকরণ এবং প্রবাল শৈলক্ষয়ের কারণে সামুদ্রিক বাস্তুসংস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে বাজাউ লাউত সম্প্রদায়ের অনেকেই তাদের লেপা ছেড়ে মাচার বাড়িতে বসবাস শুরু করেছে। বিলকুইন বলেন, এখন আমরা নির্দিষ্ট দ্বীপ বা প্রবাল শৈলের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি, যা আমাদের অভিযোজন ক্ষমতাকে সীমাবদ্ধ করছে।
অবৈধ মাছ ধরার পদ্ধতি, যেমন বিস্ফোরক দিয়ে মাছ ধরা, এই অঞ্চলে সাধারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে মাছের মজুত কমার পাশাপাশি প্রবাল শৈলেরও মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এছাড়া প্লাস্টিক দূষণ বাড়ছে, যার জন্য দায়ী স্থানীয় পর্যটন কার্যক্রম।
বাজাউ লাউতের প্রায় ৭৮ শতাংশই অশিক্ষিত। নাগরিকত্বের অভাবে তারা শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং অন্যান্য মৌলিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তাদের ঐতিহ্যগত জ্ঞান সংরক্ষণে মূল্যায়িত না হওয়ায় অনেক সংরক্ষণ প্রকল্পে তাদের ভূমিকা নেই।
রিফ চেক মালয়েশিয়ার প্রোগ্রাম ম্যানেজার আদজমিন ফাট্টা বলেন, নাগরিকত্বের অভাবে বাজাউ লাউতরা সংরক্ষণ উদ্যোগে নিজেদের ভূমিকা খুঁজে পায় না। তবে বাজাউ লাউতদের এই সংগ্রাম তাদের ঐতিহ্যগত জীবনের প্রতি এক অনন্য দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করে। সূত্র : এনডিটিভি
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল