একটি নির্দোষ প্রশ্ন থেকে যাত্রা শুরু করে সারা বিশ্বের বিস্ময়ের দলিলে পরিণত হয়েছে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস। একটানা গোসল না করা, দিনে সবচেয়ে বেশি চা খাওয়া, কিংবা দাঁত দিয়ে ভার টেনে তোলার মতো বৈচিত্র্যময় রেকর্ডে ভরপুর এই বই বিশ্বজুড়ে মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে।
১৯৫১ সালের ১০ নভেম্বর, স্যার হিউ বিভার আয়ারল্যান্ডের একটি নদীর ধারে শিকারে গিয়ে বন্ধুর সঙ্গে একটি প্রশ্নে বাজিতে জড়ান—“গোল্ডেন প্লোভার না পারমিগান, কোন পাখি দ্রুত উড়ে?” উত্তর না পাওয়ায় তার মনে হলো এমন একটি বই থাকা দরকার যেখানে বিশ্বের সব রকম রেকর্ড থাকবে। সেখান থেকেই জন্ম নেয় আজকের গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস।
১৯৫৪ সালে দুই ক্রীড়া সাংবাদিক যমজ ভাই—নরিস ম্যাকহুইটার ও রস ম্যাকহুইটার—এর সঙ্গে হিউ বিভারের পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়। কয়েক মাসের মধ্যেই বিশ্বজুড়ে রেকর্ড সংগ্রহের জন্য শুরু হয় অমানুষিক পরিশ্রম। ১৯৫৫ সালের ২৭ আগস্ট প্রকাশিত হয় প্রথম বাণিজ্যিক সংস্করণ দ্য গিনেস বুক অব রেকর্ডস। প্রথমে ছাপা হয় ৫০ হাজার কপি। প্রথম দিনে বিক্রি হয় মাত্র ৬ কপি। তবে বছর শেষে বিক্রি দাঁড়ায় ১ লাখ ৮৭ হাজার কপিতে!
এই বই একদিকে যেমন রেকর্ডের দলিল, অন্যদিকে তেমনি হয়ে ওঠে বিনোদন, কৌতূহল ও উদ্ভাবনী শক্তির উৎস। ১৯৭২ সাল থেকে বিবিসিতে প্রচারিত ‘রেকর্ড ব্রেকার’ শো গিনেসের জনপ্রিয়তাকে আরও বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। অনুষ্ঠানটি চলেছে ২০০১ সাল পর্যন্ত।
প্রথমদিকে গিনেসে থাকত সাধারণ তথ্যের রেকর্ড, যেমন—নদী, ভবন, প্রাণীর গড় উচ্চতা ইত্যাদি। তবে ১৯৭০ সালের পর থেকে শুরু হয় অদ্ভুত ও ব্যতিক্রমী রেকর্ড অন্তর্ভুক্তির ধারা—যেমন সবচেয়ে লম্বা নখ, সবচেয়ে বেশিদিন গোসল না করা বা খুঁটি ধরে বসে থাকা ইত্যাদি।
আর সেই প্রথম প্রশ্ন—সবচেয়ে দ্রুতগামী পাখি কোনটি?—তার উত্তর মিলেছে ২২ বছর পর, স্যার হিউ বিভারের মৃত্যুরও পরে। ১৯৮৯ সালে জানা যায়, পারমিগান ঘণ্টায় ১০৮ কিমি বেগে উড়ে এবং সেটিই দ্রুততম। হিউ বিভার বাজিতে জিতেছিলেন, যদিও নিজ জীবদ্দশায় তা জানেননি।
২০০০ সাল থেকে বইটির নাম পরিবর্তিত হয়ে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস হয়। আজও প্রতিবছর এই বইয়ের নতুন সংস্করণ বিশ্বজুড়ে কৌতূহল ও বিস্ময়ের জগতে আগ্রহী পাঠকদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/আশিক