৯৫ মিলিয়ন বছর আগের ডাইনোসরের দাঁত মাত্র ১০০ ডলারে অনলাইনে কিনে বাসায় নিলেন এক ক্রেতা। তবে দাঁতটি হাতে পাওয়ার পরই তার মনে প্রশ্ন ওঠে—এটা সত্যিই আসল নাকি নকল?
প্রথমে দাঁতটি দেখে সন্দেহ হলেও লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের গবেষক স্যুজানা মেইডমেন্ট নিশ্চিত করেন যে, দাঁতটি আসল এবং এটি স্পাইনোসরাস নামের এক ডাইনোসরের দাঁত। স্পাইনোসরাস ছিল একধরনের বিশালাকৃতির মাংসাশী প্রাণী, যার দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় ১৮ মিটার।
তবে এই দাঁত বিশেষ বিরল কিছু নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, মরক্কোর কেম কেম নামের এলাকায় প্রচুর স্পাইনোসরাস দাঁত মেলে। কারণ, ডাইনোসররা জীবদ্দশায় অনেকবার দাঁত বদলাত। তাই এ ধরনের দাঁত সহজলভ্য। তবে এই দাঁতের দাম অনেক বেশি রাখা হয়।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো—দাঁতটি সম্ভবত অবৈধভাবে খনন ও রপ্তানি করা হয়েছে। মরক্কোসহ অনেক দেশেই ফসিল খনন ও রপ্তানির জন্য সরকারিভাবে অনুমতি (লাইসেন্স) লাগে। তবে বাস্তবে প্রায় সব ফসিলই বাজারে চলে আসে কালোবাজারি ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফসিল বিক্রি এক ধরনের ব্যবসা ও বিনিয়োগে পরিণত হয়েছে। ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এক স্টেগোসরাস কঙ্কাল ৪৪.৬ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হয়, যা ইতিহাসে সবচেয়ে দামি ফসিল বিক্রি। এর আগেও টি. রেক্স ‘স্ট্যান’ ৩১.৮ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হয়েছিল। এ ধরনের নিলাম ফসিলকে ব্যক্তিগত মালিকানায় নিয়ে যাচ্ছে, যা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
তবে শুধু ব্যবসা নয়, এর সঙ্গে জড়িত আছে মানবিক দিকও। মরক্কোতে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ ফসিল খনন ও বিক্রির সঙ্গে যুক্ত। শ্রমিকরা পাহাড়ি গুহায় ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে, অনেক সময় প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে। অথচ তাদের দৈনিক মজুরি মাত্র ১৩ থেকে ২০ ডলার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছোট ও সাধারণ ফসিল কিনলে তেমন বৈজ্ঞানিক ক্ষতি নেই। কিন্তু মূল্যবান ও বিরল ফসিল অনলাইনে কেনা উচিত নয়। কারণ এগুলো শুধু বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য নয়, বরং বিশ্বমানবের ঐতিহ্যের অংশ।
সবশেষে প্রশ্ন থেকে যায়—ফসিল কি ব্যক্তিগত সংগ্রহের জিনিস, নাকি মানবজাতির যৌথ সম্পদ? কেউ মনে করেন সাধারণ মানুষও একটি প্রাচীন দাঁত সংগ্রহ করে ইতিহাসের অংশ অনুভব করতে পারে। আবার কেউ বলেন, এটি সবার সম্পদ, যা জাদুঘরে সংরক্ষণ করা উচিত।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল