সুনামগঞ্জ-৪ আসনে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ বলেছেন, দেশে সুশাসন নিশ্চিত করা না গেলে বাজেট বরাদ্দের অধিকাংশ টাকা দুর্নীতিবাজদের হাতে চলে যাবে। লুটপাট হয়ে যাবে সরকারি বরাদ্দ। এ অর্থ খেটে খাওয়া গরিব মানুষের কোনো কাজে আসবে না। সংসদ অধিবেশনে গতকাল সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন। পীর মিসবাহ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, 'জনগণের ট্যাক্সে টাকা যেন অপচয় না হয়। এজন্য বাজেটের বরাদ্দ ব্যবহারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।' স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বাজেট অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। ২০১৩-১৪ অর্থ বছরের সম্পূরক বাজেট নিয়ে আলোচনা করেন সংসদ সদস্যরা।
গত ৫ জুন সংসদে আগামী অর্থ বছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করা হয়। শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দের পরও মন্ত্রণালয় ১,১৯৩ কোটি সম্পূরক বরাদ্দ দাবি করায় বিস্ময় প্রকাশ করে পীর মিসবাহ আরো বলেন, বিপুল বরাদ্দ পাওয়ার পরও সব পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন পরীক্ষার আগের রাতে ফেসবুকে পাওয়া যায়। এই মন্ত্রণালয় প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে পারে না। এত অতিরিক্ত বরাদ্দ কিসে ব্যয় হবে?
তিনি বলেন, সুনামগঞ্জ একটি প্রবাসী অধ্যুষিত জেলা। সেখানে পাসপোর্ট অফিসে মেশিন রিডেবল যন্ত্র নেই। সুনামগঞ্জে চার মাসে একটি পাসপোর্ট প্রিন্টের মেশিন সরবরাহ করতে পারেনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাহলে বাজেট কার জন্য? ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ৪৪১ কোটি টাকা অতিরিক্ত দাবি প্রসঙ্গে বলেন, এই বিশাল দাবি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকবে। বলা হয়েছে, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সহায়তা তহবিলের জন্য অতিরিক্ত বরাদ্দ প্রয়োজন। অথচ পুঁজিবাজারে ৩০ লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী পথে বসেছে। নিঃস্ব হওয়া লাখ লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর হৃদয়ের রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়নি। রক্তক্ষরণ বন্ধ করার কোনো ব্যবস্থা বাজেটে নেই। যারা পুঁজিবাজারে লুটপাট করেছে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
তিনি সংসদের বাইরের বিরোধী দলকে নিয়ে সরকারের মন্ত্রীদের সাম্প্রতিক বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, তাদের বক্তব্য যেন বিএনপি-জামায়াতের প্রতিধ্বনি। তিনি বলেন, একজন মন্ত্রী দাবি করেছেন, প্রয়াত নাসিম ওসমানকে জোর করে জাতীয় পার্টি করানো হয়েছে। এ কথাও সঠিক নয়। তিনি বলেন, নাসিম ওসমান বীর মুক্তিযোদ্ধাই নন, জাতির জনকের হত্যার প্রতিরোধ যোদ্ধাও। ১৯৯০ সালের পর জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় নেই তবু তিনি জাতীয় পার্টিটেই ছিলেন।
পীর ফজলুর রহমান বলেন, সুনামগঞ্জের ২০ লাখ মানুষের জেলা সদর হাসপাতালে হার্টের প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। বছরের পর বছর মেডিসিনের কনসালটেন্ট নেই। তারপর বাজেটে এত বরাদ্দের পর সম্পূরক বরাদ্দ কার স্বার্থে মানুষ জানতে চায়। তিনি বলেন, সুশাসনের অভাবে সুনামগঞ্জের প্রশাসনের দুর্নীতির কারণে সরকার বছরে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দুর্নীতির লাগাম টেনে সুশাসন নিশ্চিত করা না গেলে জনগণের টাকা দুর্নীতিবাজদের বিত্তশালী করবে। গরিবের, মানুষের ও দেশের কল্যাণে আসবেনা। তার বক্তব্য সাংসদরা টেবিল চাপড়িয়ে সমর্থন জানান।