পবিত্র শবে বরাতের রাতে বাজি ফোটানোকে কেন্দ্র করে রাজধানীর পল্লবী এলাকার কালশীতে শনিবার ভোরে দুই পক্ষের মধ্যে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে অন্তত নয় জন মারা গেছেন। এর মধ্যে চারজন একই পরিবারের। আরেক পরিবারের আছেন আরো দুই সদস্য।
লাশগুলো রাখা হয়েছে কালশীর মোনাপাড়া বিহারি ক্যাম্পের ভিতরের একটি ক্লাবে। সেখানে শত শত নারী-পুরুষ লাশ ঘিরে রেখেছে।
পুলিশ সেই ক্যাম্পে অভিযান শুরু করেছে। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে মিরপুর ডিওএইচএস এর পাশের রাস্তা থেকে প্রায় ১৫ জন বিহারি যুবককে একসঙ্গে ধরে প্রিজন ভ্যানে উঠিয়ে নেয় পুলিশ। এছাড়াও ক্যাম্পের ভেতর থেকে বিচ্ছিন্নভাবে আরো ৫ জনকে আটক করেছে।
এলাকায় বিহারিরা সংঘবদ্ধ হয়ে অবস্থান নিয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। দুইপক্ষের মুখোমুখি অবস্থানে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে মোনাপাড়া ক্যাম্প ঘিরে। যে কোনো সময় সংঘর্ষ শুরু হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা।
প্রথমে বিহারীদের দুটি পক্ষের মধ্যে এ সংঘর্ষ বাঁধলেও পরে স্থানীয়রা ও পুলিশ এতে জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে এ সংঘর্ষ ব্যাপক আকার ধারণ করে।
এর আগে সকালে এলাকায় বেশ কিছু বাড়িঘরে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘরে বাসিন্দারা আটকা থাকতে পারেন বলে স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন। কালশী ও আশপাশের বেশ কয়েকটি রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
মোনাপাড়া ক্যাম্পের ভেতর লাশের পাশে থাকা বিহারি যুবক নবাব হুসাইন জানান, তার আত্মীয় আব্দুল কাদের (৯) সহ একই পরিবারের চারজন মারা গেছেন। আরেকটি পরিবারের দুইজন সদস্য অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন বলে জানান নবাব।
পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি) ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, কয়েকদিন আগেও একই এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগকে কেন্দ্র করে স্থানীয়দের সঙ্গে বিহারিদের কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলে তাদের সঙ্গেও সংঘর্ষ হয় বিহারি ও স্থানীয়দের।
শনিবার ভোরেও এ ধরনের বিষয় নিয়েই স্থানীয় ও বিহারিদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে রাস্তার পাশে থাকা দুটি বিহারি বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ আগুন দুর্ঘটনার নাকি, ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ লাগিয়েছে তা জানা যায়নি।
এদিকে এ ঘটনায় মো. আসলাম (৫০), বদর উদ্দিন (৪৫), আরজু (১৬) নামে গুলিবিদ্ধ তিন ব্যক্তিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) ভর্তি করা হয়েছে।
এছাড়াও ফারজানা নামে এক অগ্নিদগ্ধ নারী ঢামেকে এসেছেন। তার মুখ, শরীরসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ পুড়ে গেছে। তিনি মিরপুর-১২ এর কুর্মিটোলা ক্যাম্পে বসবাস করেন।
ফারজানাকে ঢামেকে নিয়ে আসা প্রতিবেশী নুরুদ্দিনসহ কয়েকজন জানান, ফারজানার ঘরে আগুন দেওয়া হয়েছে। তারা শুনেছেন, ফারজানার মা—বোনসহ পরিবারের চারজন ঘরে আটকা পড়ে মারা গেছেন।
তবে এ কথা বললেও, তারা এ ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু জানাতে পারেননি।