স্বায়ত্তশাসিত আঞ্চলিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা দ্য এশিয়ান লিগ্যাল রিসোর্স সেন্টার (এএলআরসি) এক বিবৃতিতে অভিযোগ জানিয়েছে, মানবাধিকার কর্মীদের নিষ্ক্রিয় করে ফেলতে চায় বাংলাদেশ সরকার। 'বিদেশি অনুদান (স্বেচ্ছাপ্রণোদিত কার্যক্রম) নিয়ন্ত্রণ বিল, ২০১৪' শীর্ষক একটি বিল পাস করেছে মন্ত্রিসভা অার এটি খুব শীঘ্রই আইন হিসেবে পাস হয়ে যাবে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো (এনজিও) ও স্বপ্রণোদিত মানবাধিকার কার্যক্রমের ভাগ্য নির্ধারণের জন্য আমলাতান্ত্রিকতার ক্ষমতায়ন সম্পূর্ণ করা হবে এই বিলের মাধ্যমে।
'দ্য এশিয়ান লিগ্যাল রিসোর্স সেন্টার' (এএলআরসি) শুক্রবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানিয়েছে। হংকংভিত্তিক এই সংগঠনটি জাতিসংঘের ইকোনমিক ও সোশ্যাল কাউন্সিলের সাধারণ উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত আছে এবং একইসঙ্গে এটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনেরও একটি অঙ্গসংগঠন।
এএলআরসি জানায়, এই আইনের মাধ্যমে লক্ষ্যবস্তু হিসেবে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ দায়ের করার জন্য প্রশাসনিক কর্মকর্তা নিয়োগ করার ক্ষমতা রাখবে সরকার। এই অভিযোগের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা গোষ্ঠী প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নিযুক্ত সচিবের কাছে ‘আপিল আবেদন’ করতে পারবেন অভিযোগটি দায়ের করার পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে এবং এক্ষেত্রে সচিবের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে।
১৯ নং ধারা অনুযায়ী: "এই আইনটির উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সরকার নতুন কোনো নিয়ম প্রণয়নের আগ পর্যন্ত প্রচলিত নিয়ম অনুসরণ করতে পারবে, প্রয়োজন হলে এই আইন সংশ্লিষ্ট সাধারণ বা বিশেষ আদেশ প্রদানের মাধ্যমে সরকার এই আইনের অধীনে যেকোনো ব্যবস্থা গ্রহণ বা আদেশ প্রদান ও বাস্তবায়ন করতে পারবে।"
এএলআরসির মতে, এই উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য বিলটির মাধ্যমে যাবতীয় ক্ষমতা অর্পণ করা হবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আওতাধীন শাখা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা অ্যাফেয়ার্স ব্যুরোর (এনজিওএবি) মহাপরিচালকের (ডিজি) ওপর। সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা পর্যায়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা থেকে শুরু করে আঞ্চলিক বিভাগীয় কমিশনার পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মকর্তারা থাকবেন এবং তাদের ওপরেই এনজিওগুলোর কার্যক্রম পরিদর্শন, পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নের ভার ন্যাস্ত থাকবে।
মানবাধিকার সংস্থাটির অভিযোগ করে, ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সমঝোতার বিষয়ে যারাই অনাগ্রহ দেখাবে তাদের ধ্বংস অনিবার্য করা হবে। আর যারা সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করবে, তাদের আরো বেশি করে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে যেন পরবর্তী সময়ে কোনো মানবাধিকার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আন্দোলন বা বিদ্রোহ বা সংঘর্ষ ঘটলে সেটার মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়ার কাজটি করতে পারে সরকারের সঙ্গে হাত মেলানো ওই প্রশিক্ষিত দলটি।
এএলআরসির বিবৃতিতে বলা হয়, এই বিল নিয়ে বাংলাদেশে এক ধরনের কৌতুহলী প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। বিলটির মাধ্যমে এনজিওএবি'র নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছেন দেশটির সুশীল সমাজের বেশ কয়েকজন 'অভিজাত' সদস্য, এরই ধারাবাহিকতায় ক্ষতির মুখে পড়বে তাদের লাভজনক উপদেষ্টাবৃত্তি। কিন্তু আইনটির মাধ্যমে দেশটির জনগণ মূলত যে ক্ষতির মুখে পড়বেন তা হলো- তাদের ওপর নেমে আসবে দমননীতির অকল্পনীয় ভারী খড়গ।