প্রতি বছরের মতো এবারও একুশের প্রথম প্রহরে রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে জেগে উঠেছিল সারা দেশের মানুষ। একুশের প্রথম প্রহর রাত ১২টা ১ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদিতে জাতির পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহান একুশের অমর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তারা কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে মহান একুশের ভাষা শহীদদের প্রতি সম্মান জানান। এ সময় বেজে ওঠে অমর একুশের গানের করুণ সুর। এরপর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মন্ত্রিপরিষদ ও আওয়ামী লীগ নেতারা, রওশন এরশাদের নেতৃত্বে বিরোধী দল, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বে ১৪ দল, মুক্তিযুদ্ধ সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও দূতাবাস। এর আগে রাত ১১টা ৫১ মিনিটে শহীদ মিনারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এ সময় মন্ত্রিপরিষদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপতি রাত ১১টা ৫৬ মিনিটে শহীদ মিনারে পৌঁছলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে অভ্যর্থনা জানান। প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে শহীদ বেদিমূলে নিয়ে যান।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাত ১টা ৪০ মিনিটে কয়েকশ’ নেতা-কর্মী নিয়ে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করেন। এদিকে তিন বাহিনীর প্রধান, পুলিশের মহাপরিদর্শক, মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এর পরই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সাধারণের শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এবং তার নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট ও ডিন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি এবং বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন নেতারা পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। শ্রদ্ধা নিবেদন করেন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা। যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতারা শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন। পরে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক দল ও সংগঠন ছাড়াও ছাত্র, যুব, নারী, শ্রমিক, শিশু-কিশোর সংগঠনগুলো এবং হাজার হাজার মানুষ সারিবদ্ধভাবে একে একে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মধ্য দিয়ে গভীর শ্রদ্ধা জানান মহান ভাষা শহীদদের।
সর্বস্তরের মানুষের ঢল শহীদ মিনারে : হাতে হাতে ফুল, ফুলের তোড়া নিয়ে আসছেন সবাই। সমবেতভাবে ফুলের মালা নিয়ে হাঁটা লোকের সংখ্যাও কম নয়। গালে শহীদ মিনারের আলপনা আঁকা কারও কারও। মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সর্বস্তরের মানুষ এভাবেই আসেন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায়।
একুশের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা জানানো শেষে শহীদ মিনারের বিভিন্ন পয়েন্টে সর্বস্তরের মানুষের ঢল বাড়তে থাকে।
এ সময় ফুল নিয়ে ‘২১ মানে অহংকার’, ‘জয় বাংলা’সহ নানা ধরনের স্লোগান দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন অগণিত মানুষ।
বিডি-প্রতিদিন/২১ ফেব্রুয়ারি, ২১০৬/মাহবুব