ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে গচ্ছিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের টাকা চুরির ঘটনায় ২০ বিদেশির সম্প্রক্ততা পাওয়া গেছে। আর এসব বিদেশিদের তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বাংলাদেশে ব্যাংকের কিছু অসাদু কর্মকর্তারা। রবিবার মালিবাগের সিআইডি কার্যালয়ে এসব তথ্য জানানো হয়।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হাতিয়ে নিতে চেয়েছিল হ্যাকাররা। পরে দুই ধাপে প্রায় ১০১ মিলিয়ন ডলার লোপাট করে।
দুপুরে সিআইডির ডিআইজি শাহ আলম সাংবাদিকদের বলেন, ''এ ঘটনায় শ্রীলঙ্কা ও ফিলিপাইনে পুলিশের অপরাধ বিভাগের (সিআইডি) দুটি দল যায়। তারা দেশে ফিরে এসেছে। এক সপ্তাহে দেশ দু'টিতে ব্যাংক, সিনেট এবং বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপে অনেক তথ্য বেরিয়ে এসেছে। টাকা চুরির সঙ্গে জড়িতদের নাম বেরিয়ে এসেছে। চুরির ঘটনায় অনেকে জড়িত থাকলেও আপাতত সন্দেহভাজন ২০ বিদেশির সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। এরা শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন ও চীনের নাগরিক।''
তিনি আরো বলেন, এসব সন্দেহভাজন লোকই দেশগুলোর ব্যাংকে চারটি অ্যাকাউন্ট খোলে। মাত্র ৫০০ ডলার টাকা দিয়ে তারা অ্যাকাউন্টগুলো খোলে। এ ধরণের কাজ এরা আগেও করেছে।
এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, এ দেশ থেকে একটি লিংক গেছে। লিংকের সিগন্যাল পাওয়ার পরই টাকা নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়। এই লিংকআপ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দেওয়া হয়েছে। যার সঙ্গে অবশ্যই ব্যাংকের লোকজন জড়িত। এ কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যেসব তথ্য-উপাত্ত এবং প্রমাণাদি নেওয়া হয়েছে, তারই তদন্ত করা হচ্ছে। এ জন্য ল্যাপটপসহ ব্যাংকের কম্পিউটারের অনেক তথ্য নেওয়া হয়েছে। সেগুলো যাচাই করতে সিআইডির বিশেষজ্ঞদলের সঙ্গে বাইরের তথ্য-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদেরও সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। এসব করা হচ্ছে লিংক আপ কোথা থেকে হয়েছে, তা নিশ্চিত হতে। এরপর কারা জড়িত তা সহজেই বেরিয়ে আসবে।
অপর এক প্রশ্নে সিআইডির এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আরো বলেন, ওইসব দেশগুলোতে মানিলন্ডারিং আইনে যে বিধিবিধান রয়েছে, তা অনেকাংশে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন নয়। এ কারণে টাকা আনতে বা অপরাধীদের গ্রেফতারে পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোলের সহায়তা নেওয়া হবে। এজন্য অপেক্ষা করতে হবে। তদন্ত চলছে। শেষ হলেই বিস্তারিত তুলে ধরা হবে।
২৯ ফেব্রুয়ারি ফিলিপাইনের পত্রিকা ইনকোয়ারারের প্রতিবেদনে জানানো হয়, নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভে গচ্ছিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হাতিয়ে নিতে চেয়েছিল হ্যাকাররা।
প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, সুইফট মেসেজিং সিস্টেমে জালিয়াতির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চুরি করা অর্থ ফিলিপাইন ও শ্রীলঙ্কার ব্যাংকে স্থানান্তরিত হয়। এর মধ্যে ফিলিপাইনের অ্যাকাউন্টে নেওয়া ৮ কোটি ডলার ক্যাসিনোর মাধ্যমে হংকংয়ে পাচার করা হয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/১৮ এপ্রিল ২০১৬/ এস আহমেদ