দেশের কিছু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এখন ‘চারুকারু’ বিষয়টির নামে নাম্বার দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে নেওয়া হচ্ছে কসমেটিক্স আর নগদ টাকা। পাশাপশি নেওয়া হচ্ছে শলার ঝাড়ু। বছরের প্রতিটি পরীক্ষাতেই শিক্ষার্থীদের নাম্বারের প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ম বহির্ভূতভাবে এসব জিনিস হাসিল করছেন কিছু স্বার্থন্বেষী শিক্ষক। এ নিয়ে সাভারের মাদারটেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাধিক শিশু ও তাদের অভিভাবকরাও অভিযোগ করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৩-৪ বছর ধরেই ঐ স্কুলের অনেক শিক্ষার্থী ‘চারুকারু’ তথা ‘হাতের কাজ’ এর অংশ হিসেবে নাম্বার পাওয়ার লোভে প্রতিটি সাময়িক পরীক্ষাতেই শিক্ষকদের হাতে কসমেটিক্স সামগ্রী (সাবান, ওয়াসিং পাওডার ইত্যাদি) বা নগদ টাকা তুলে দিচ্ছেন। আর তা নিতে দ্বিধাবোধ করছেন না শিক্ষকরা। সম্প্রতি সরেজমিনে স্কুলে গেলে একধিক শিক্ষার্থী এ তথ্য দেন। এছাড়া কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিভাবকও একই অভিযোগ করেন।
এদিকে স্কুলের নাম সংশ্লিষ্ট কোন সাইনবোর্ড বা ব্যানার ঐ স্কুলে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া স্কুলের ১৯৪ জন শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে মাত্র ৫ জন শিক্ষক। নেই কোন কর্মচারী। অন্যদিকে একই অভিযোগ পাওয়া গেছে পার্শ্ববর্তী আরও ৩টি (সিন্দুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সন্দীপ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ডেইরি ফার্ম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়) বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে। এসব স্কুলের একাধিক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক একই অভিযোগ করেছেন।
এদিকে শুধু সাভার নয় দেশের বিভিন্ন জেলার অনেক স্কুলেই ‘চারুকারু’র অংশ হিসাবে নাম্বার পাওয়ার লোভে শিক্ষার্থীরা ঝাড়ু, বারুনসহ নানা উপকরণ শিক্ষকদের হাতে তুলে দিচ্ছেন। নিয়ম বহির্ভূত এসব জিনিস অনেক শিক্ষার্থী বাজার থেকে ক্রয় করেই স্কুলের শিক্ষকদের হাতে তুলে দিচ্ছেন। আর সেই উপকরণগুলোর কিছু অংশ স্কুলের ব্যবহারের জন্য রেখে বাকিগুলো ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন শিক্ষকরা।
এসব ব্যাপারে মুঠোফোনে বিস্তারিত জানতে সাভার থানা শিক্ষা অফিসারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি এনসিটিবি ওয়েবসাইট থেকে জেনে নিতে বলেন এবং সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। সঠিক ধারণা পেতে রাজবাড়ী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, 'শিক্ষাথীদের জন্য চারুকারু বিষয়ের কোন বই নেই তবে শিক্ষকদের এ ব্যাপারে দিক নির্দেশনা দেওয়া আছে। চারুকারুতে শ্রেণী ভেদে ২৫ থেকে ৫০ নম্বর রয়েছে। আর চারুতে অঙ্কন থাকলেও কারুতে শিক্ষার্থীদের কাগজ, কাপড় বা মাটি দিয়ে সৃষ্টিশীল কিছু নিজের হাতে বানাতে বলা হয়। তবে এমন কিছু তাদেরকে বানাতে বলা উচিত নয় যা তারা বানাতে পারবেনা।' এদিকে বিষয়টি জানতে এনসিটিবির ওয়েবসাইটে গিয়ে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য চারুকারু নামে কোন বিষয় খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে সব অভিযোগ অস্বীকার করে মাদারটেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যলয়ের প্রধান শিক্ষক সোহেলা পারভিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এগুলো ভিত্তিহীন, আমি ইন্ডিয়া থেকে কিছু বিদেশি সাবান এনেছিলাম সহকর্মীদের দেয়ার জন্য, সেগুলই আমার টেবিলে ছিলো। আর সেটা দেখেই কেউ হয়তো ভুল ভেবে মিথ্যা অভিযোগ করেছে।’ এ ব্যাপার মুঠোফোনে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আলমগীরের সাথে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এদিকে শিক্ষাবিদরা বলছেন, সৃজনশীলতা বাড়াতে চারুকারুতে শিশুদের বাড়ি থেকে বানিয়ে আনার পূর্বে তাদেরকে স্কুলেই বিভিন্ন উপকরণ বানানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত। উপকরণ পাওয়ার লোভে এখনই যদি শিশুদের মাঝে নাম্বার পাওয়ার প্রলোভন দেখানো হয় তবে তা হবে চরম অন্যায়। আর যে উপকরণ একজন শিশুর জন্য বানানো সম্ভব নয় তা তার উপর চাপিয়ে দেওয়াটাও অনৈতিক।
বিডি প্রতিদিন/ ৫ অক্টোবর ২০১৬/হিমেল