শরীয়তপুরের ইদ্রিস আলী সরদার ওরফে গাজী ইদ্রিসের বিরুদ্ধে আনা মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় যে কোনো দিন ঘোষণা করা হবে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল আজ বুধবার উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণা অপেক্ষমান (সিএভি) রেখে আদেশ দেন।
মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারিক কার্যক্রম শেষে এ পর্যন্ত ২৬ মামলায় রায় ঘোষণা করেছে। এটি হবে ২৭তম মামলার রায়।
এ মামলার দুই আসামির মধ্যে গ্রেফতার হয়ে কারাবন্দি অবস্থায় সোলায়মান মোল্লা ওরফে সোলেমান মৌলভী অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ফলে তাকে মামলার দায় থেকে বাদ দেয়া হয়। আসামি ইদ্রিস আলী সরদার পলাতক রয়েছেন।
মামলায় প্রসিকিউটর হৃষিকেশ সাহা ও প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি এবং পলাতক ইদ্রিসের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আব্দুশ শুকুর খান যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন।
গত বছরের ১৪ জুন সোলায়মান ও ইদ্রিসের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। একই বছরের ২৯ অক্টোবর তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। এ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গত বছরের ১৬ নভেম্বর প্রসিকিউশন দুই আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন। গত বছর ২২ ডিসেম্বর অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল।
গত ২ মে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের চারটি অভিযোগে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
মামলায় আনীত-প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২২ মে আসামিরা দখলদার পাক হানাদারবাহিনীর ১০০ থেকে দেড়শ’ জন সদস্যসহ শরীয়তপুর জেলার পালং থানা এলাকায় কয়েকটি গ্রামে হামলা চালিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কৃষক আব্দুস সামাদসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রায় ২০০ মানুষকে গুলি করে হত্যা ও বাড়ির মালামাল লুট করেন।
দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধকালীন ২৬ মে পালং থানার মালোপাড়া ও রুদ্রকর গ্রামে হামলা চালিয়ে মঠের পুরোহিতকে গুলে করে হত্যা ও গ্রামগুলো থেকে মামালাল লুট ও আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করে আসামিরা। ওইদিন মালোপাড়া থেকে ৩০/৪৫ জন নারী ও পুরুষকে ধরে মাদারীপুর পাক হানাদার ক্যাম্পে নিয়ে তিনদিন আটকে রেখে নারীদের ধর্ষণ করে ছেড়ে দেয়। পুরুষদের গুলি করে হত্যা করা হয়।
তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধকালীন ২৬ জুন একই থানার শৈলেন্দ্র কৃষ্ণ পালের বাড়িতে হামলা চালিয়ে দুইজনকে হত্যা করে ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের নির্যাতন করে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুচিঁয়ে হত্যা করে আসামিরা।
চতুর্থ অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত আসামিরা দখলদার বাহিনীর সহায়তায় এলাকায় হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতনসহ বিভিন্ন অপরাধ করেন। এ সময় মানবতাবিরোধী অপরাধ করার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ভয়-ভীতি ও আতঙ্কের সৃষ্টি করে পালং থানার এক থেকে দেড় হাজার মানুষকে দেশত্যাগ করে ভারতের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় গ্রহণে বাধ্য করেন।
বিডি প্রতিদিন/ ০২ নভেম্বর ২০১৬/ এনায়েত করিম-১২