বাজেটে ১৫ ভাগ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব পুনর্বিবেচনা করাসহ ব্যাংক আমানতের উপর আবগারি শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি অব্যাহত রেখেছে সরকারি ও বিরোধী দলের সদস্যরা। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ব্যাংকের টাকা ও বিমানের টিকেট কাটার ওপর কর বাড়ানো হয়েছে। যারা বিদেশে টাকা পাচার করে তাদের বিরুদ্ধে কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বেশিরভাগ মানুষ এই বাজেটে খুশি হতে পারেনি। আবগারি শুল্ক আর ১৫ ভাগ হারে ভ্যাট বাড়ানোর ইস্যুতে চাপা পড়ে গেছে বাজেটের আরও অনেক দিক। অতিরিক্ত ভ্যাটের কারণে অনেক কোম্পানি ও কল-কারখানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। বাড়বে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম। তবে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান প্রস্তাবিত বাজেট সংশোধনের ঈঙ্গিত দিয়েছেন বলেন, অর্থমন্ত্রী বোবা-কানা নন, আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হবে।
জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে মঙ্গলবারের বৈঠকে প্রস্তাবিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে এমপিরা এসব কথা বলেন। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া এবং প্যানেল চেয়ারম্যাম শামসুল হক টুকু। আলোচনায় অংশ নেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান, অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নানসহ সরকারি দলের খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, শামসুল হক টুকু, নজরুল ইসলাম বাবু, বেগম সফুরা বেগম ও শামসুল হক চৌধুরী এবং বিরোধী দলীয় প্রধান হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী ও স্বতন্ত্র সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী।
আলোচনায় অংশ নিয়ে এমপিরা বলেন, বাজেট বাস্তবায়নের পথে বড় বাধা হলো স্বাধীনতা বিরোধী, জঙ্গী-সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। এরা এখনো ষড়যন্ত্র করছে। তবে এদের মোকাবেলা করেই অতীতের ৭টি বাজেটের মতো এ বাজেটও সফলভাবে বাস্তবায়ন করা হবে।
সদ্য সরকারি দলে যোগ দেয়া স্বতন্ত্র সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী বলেন, সংসদে এবং সংসদের বাইরে যখন বাজেট নিয়ে আলাপ-আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আবগারি শুল্ক। মাননীয় অর্থমন্ত্রী আবার আবগারি শুল্কের পক্ষে অবস্থান নিয়ে যেন আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছেন। এছাড়া নির্বাচনের আগে ভ্যাট আইন কার্যকর করার বুদ্ধি ভোটের রাজনীতির সাথে কি সাংঘর্ষিক নয়? এটি তো ৮১-৮২ সালে মুহিত সাহেবের প্রণীত সেনাপ্রধানের বাজেট নয়, যে মনে চাইল আর প্রস্তাব করে দিলাম, আর সেনাপ্রধান সাহেবও জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এককভাবে পাশ করে ফেললেন। এটি একটি রাজনৈতিক সরকারের বাজেট, যাকে দেড় বছর পরে আবার জনগণের কাছ থেকে ম্যান্ডেট চাইতে হবে।
বিরোধী দলীয় প্রধান হুইপ তাজুল ইসলাম বলেন, এবারের বাজেটে অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি পড়েছে সাধারণ মানুষের ওপর। তাই আবগারি শুল্ক নিয়ে দেশে প্যানিক তৈরি হয়েছে। আগেরটা তিনি যদি বজায় রাখেন তাহলে জনমনে স্বস্থি ফিরে আসবে। জনগণের সঞ্চয়ের ওপরও অর্থমন্ত্রীর নজর পড়েছে। এর ওপর যেনো উনার কাঁচি না পড়ে। সুদহার না কমানোই এক্ষেত্রে ভালো। দুর্নীতি সহায়ক, অবিবেচক এবং অতিরিক্ত কর আরোপের পথ থেকে অর্থমন্ত্রীকে সরে আসার আহ্বান জানান তিনি।
জাতীয় পার্টির এই এমপি আরও বলেন, বাজেটের আয় অনেকটা মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের ওপর নির্ভর করছে। ব্যাংকে টাকা রাখা ও বিমানের টিকেট কাটার ওপর কর বাড়ানো হয়েছে। যারা বিদেশে টাকা পাচার করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যকরী কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বেশিরভাগ মানুষ এই বাজেটে খুশি হতে পারেনি। এছাড়া এক হাজার ৪৩ টি পণ্য ভ্যাটের আওতার বাইরে রাখাকে শুভংকরের ফাঁকি বলে মনে করি।
আলোচনায় অংশ নিয়ে ব্যাংকে রাখা আমানতের ওপর থেকে আবগারি শুল্ক কমানোর বিষয়টি বিবেচনার ইঙ্গিত করে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, আমাদের অর্থমন্ত্রী জনগণের মধ্যে বসবাস করেন, সংসদে সববাস করেন। তিনি এই সংসদেরই নেতা, তিনি বোবা-কানা নন। বাইরে সেসব আলোচনা হচ্ছে আশা করি আমরা আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়ে একটি সমাধানে পৌঁছাতে পারবো। সরকারের উচ্চ মহলে এ বিষয়ে আলোচনা চলছে। বাজেট আগ্রহ জাগিয়েছে সারা দেশে। সব জায়গায় এটা নিয়ে আলোচনা চলছে। এবারের বাজেট নিয়ে কোনো ভীতির কারণ নেই। আলোচনা আর সমালোচনা রয়েছে। এ মন্ত্রণালয়ের কর্মী হিসেবে কথা দিচ্ছি সবার পরামর্শ ও সুপারিশ বিবেচনা করা হবে। জাতির জন্য যেটা মঙ্গল হবে তাই করা হবে। আমরা উন্নয়ন অর্থনীতির জন্য ঝুঁকি নিয়ে বাজেট দিয়েছি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, জাতির ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য এই বাজেট দেওয়া হয়েছে। সমালোচনা থাকবেই। দেখতে হবে বাজেটের কারণে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে কি না। আমাদের লক্ষ্য টেকসই উন্নয়ন। ১ কোটি ৩০ লাখ শিশুকে উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। তবে হৈ চৈ হচ্ছে মোটা চালের দাম বেশি কেন? খাদ্য সংকটের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু কোথায় খাদ্য সংকট। কৃষকরা এবার ধানের দাম একটু বেশি পেয়েছে। এখন তারা যেনো আতংকিত না হয় চালের দাম কমে যাবে বলে।
দেশে কৃত্রিম খাদ্য সংকটের মিথ্যা গল্প ফাঁদা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন সরকার দলীয় সংসদ সদস্য খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, দেশের কোথাও খাদ্য সংকট নেই। হাওরে এতো বড় বিপর্যয় ঘটার পরও সরকারের পদক্ষেপের কারণে কোন বিপর্যয় ঘটে নাই। সরকার সব কিছু নিয়ে হাওড়বাসীর পাশে দাঁড়িয়েছে। অথচ প্রতিদিন ইফতারের সময় মিথ্যাচার করা হচ্ছে।
ওয়ার্কার্স পার্টির মোস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেন, বাজেট বাস্তবায়নের সবচেয়ে বড় বাধা দুর্নীতি। সারা বছর কাজ না করে এক মাসে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। সাধারণ মানুুষের পকেট কাটা হয়।
শামসুল হক টুকু বলেন, বিএনপি বারবার উন্নয়নে বাধা দিচ্ছে। তার নিজেরা দেশের উন্নয়ন করেনি অন্যদেরও করতে দিতে চায় না। চলতি বাজেটে কিছু সংশোধনী এনে বাজেট পাশ করা হলে দেশ সমৃদ্ধির পথে হাঁটবে বলে তিনি দাবি করেন।
বিডি প্রতিদিন/১৩ জুন, ২০১৭/ফারজানা