'আগামী নির্বাচনের আগে এটাই শেষ কার্যকর বাজেট জানিয়ে সরকার ও বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যরা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে ব্যাংক আমানতের ওপর আরোপিত আবগারি শুল্ক বাড়ানো ও সঞ্চয়পত্রের সুদ কমানোর সিদ্ধান্ত পুণবিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন। একইসঙ্গে তারা ১৫ ভাগ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাবও পুনর্বিবেচনা করার দাবি জানান তারা। এসময় পার্বত্য অঞ্চলে পাহাড়ি ধসে বিপুল মানুষের প্রাণহানির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন এমপিরা।
জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে আজ বুধবার বৈঠকে প্রস্তাবিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটের ওপর আলোচনা অংশ নিয়ে এমপিরা এসব দাবি জানান। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া এবং প্যানেল চেয়ারম্যান শামসুল হক টুকু।
আলোচনায় অংশ নেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. বীরেন শিকদার, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, সরকারি দলের বিএম মোজাম্মেল হক, শফিকুল ইসলাম শিমুল, অধ্যাপক ডা. হাবিব-এ-মিল্লাত, তানভীর ইমাম, মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী, তালুকদার মোহাম্মদ ইউনুস, মিজানুর রহমান, অ্যাডভোকেট নাভানা আক্তার, শেখ হাফিজুর রহমান, রেজাউল হক চৌধুরী, নজরুল ইসলাম চৌধুরী, জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য স্বপন ভট্টাচার্য, এবং বিরোধী দল জাতীয় পার্টির অধ্যাপক নুরুল ইসলাম মিলন ও ইয়াহইয়া চৌধুরী।
আলোচনায় অংশ নিয়ে সিরাজগঞ্জের এমপি তানভীর ইমাম বলেন, সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমানোর আগে রাজনৈতিকভাবে এটা বিবেচনা করতে হবে। সব দিকে সুদের হার কমানোর আগে বিকল্প বিনিয়োগের ব্যবস্থা করা উচিত। মনে রাখতে হবে ২০১৮ সালে তারা হবে আমাদের সম্মানিত ভোটার। নির্বাচনের আগে এটা হচ্ছে আমাদের শেষ কার্যকর বাজেট। এসময় তিনি নির্বাচন সামনে রেখে আসন ভিত্তিক ৫০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প দেওয়ারও দাবি জানান।
সিরাজগঞ্জের আরেক এমপি হাবিবে মিল্লাত বলেন, অল্প আয়ের মানুষের কথা চিন্তা না করে বেশি আয়ের মানুষের কাছ থেকে কর নেওয়ার বিষয়টি চিন্তা করতে হবে। শুধু খামোশ বা রাবিশ বলে দায় এড়ানো যাবে না। অর্থমন্ত্রী আর মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব আছে, সবাইকে বোঝাতে হবে কর আরোপের ফলে কার ক্ষতি হচ্ছে। সামনে নির্বাচন। এখন অনেকে বিদেশ থেকে টাকা এনে চরিত্র হননের কাজ করছে অনেকে। গণমাধ্যমে রিপোর্ট আসছে। এগুলোর ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
বিরোধী দল জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম মিলন বাজেট বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বলেন, বাজেট বাস্তবায়ন কঠিন। ঘাটতি বাজেট বাস্তবায়ন আরও কঠিন। এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের সক্ষমতা নেই। কি করে এত অর্থ আদায় করবে। অর্থমন্ত্রী সব মানুষের ওপর ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছেন। আগামী বছর ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা ঋণ দাঁড়াবে। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়েছে। সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভরশীলতা বেশি দেখানো হয়েছে। ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ব্যাংক হিসাবে আবগারি শুল্কের কারণে ভালো দিক চাপা পড়ে গেছে।
জাতীয় পার্টির ইয়াহহিয়া চৌধুরী বলেন, সমাজের জন্য ক্ষতিকারক জিনিষের ওপর আবগারি শুল্ক আরোপ করা হয়। আমার প্রশ্ন হলো, আমার বৈধভাবে অর্জিত টাকা কিভাবে পাপকরের আওতায় আনা হলো। ব্যাংক খাতের অনিয়মের কারণে মানুষ যে এখনও ব্যাংক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়নি সেজন্য কি অর্থমন্ত্রী পাপ কর বসালেন। সাধারণ মানুষের টাকা এভাবে কাটতে পারেন না। জাসদের শিরীন আখতার প্রস্তাবিত বাজেটে করকাঠামোয় কার্যকর সংস্কার করার আহ্বান জানান। তিনি ভ্যাটের মতো পরোক্ষ করের মাধ্যমে সাধারণ গরীব ভোক্তাদের ওপর করের বোঝা চাপিয়ে না দিয়ে প্রত্যক্ষ করারোপের সুপারিশ করেন।
সরকারি দলের সদস্যরা বলেন, অতীতের মতোই সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে এ বাজেট বর্তমান সরকারের গত ৭টি বাজেটের মতো সফলভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। প্রস্তাবিত বাজেট জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক।
প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য হলো ২০২১ সালের মধ্যে আইসিটি রপ্তানি ৫ বিলিয়ন ডলার ও আইটি পেশাজীবীদের সংখ্যা ২০ লাখে উন্নীত করা এবং জিডিপিতে আইসিটি খাতের অবদান ৫ শতাংশ নিশ্চিত করা। এ লক্ষ্য পূরণে বিভিন্ন উদ্যোগের বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
তিনি জানান, তার মন্ত্রণালয়ে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের হার শত ভাগের ঊর্ধ্বে অর্থাৎ ১২১ শতাংশ।
পলক বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে একুশ শতকের উপযোগী দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তোলার বিকল্প নেই।সরকার নির্বাচনী ইশতেহারে অঙ্গীকার করেছিল ঘরে ঘরে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে। সে অনুযায়ী ন্যাশনাল সার্ভিস কমিশনের আওতায় কুড়িগ্রাম, গোপালগঞ্জ জেলাসহ দেশের তিনটি জেলায় কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নেয়া হয়। ওইসব জেলায় ৩৫ বছর পর্যন্ত কোনো যুবক এখন আর বেকার নেই।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, অর্থমন্ত্রী জাতির জন্য আশাজাগানীয়া বাজেট দিয়েছেন। বিভিন্ন শ্রেণী- পেশার মানুষ নানা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। সবচেয়ে বেশি আশ্চর্য হয়েছি খালেদা জিয়ার মন্তব্যে। তিনি বলেছেন- 'এটা লুটপাটের বাজেট!' ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত খালেদা জিয়া ও তার পরিবার এই বাংলাদেশকে লুটপাটের রাজত্ব বানিয়েছিল।
তিনি বলেন, এসব কারণে খালেদা জিয়াকে জনগণ আজ আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে তখন খালেদা জিয়া ষড়যন্ত্র করছেন। জাতিকে পেছন দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। জনবিচ্ছিন্ন হয়ে বেসামাল বিএনপি নেত্রীর আশু উন্নত চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন।
বিডি প্রতিদিন/১৪ জুন ২০১৭/এনায়েত করিম