বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক ডিলিট (ডক্টর অব লিটারেচর) উপাধিতে ভূষিত করল পশ্চিমবঙ্গের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়। শোষণমুক্ত ও বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে এবং গণতন্ত্র, নারীর ক্ষমতায়ন, দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং অার্থ সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে অসাধারণ ভূমিকা রাখায় তার স্বীকৃতি হিসেবে শেখ হাসিনাকে এ উপাধি দেয়া হয়।
শনিবার রাজ্যটির আসানসোলে অবস্থিত বিশ্বব্যিালয়টির তৃতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তাঁর হাতে সম্মানসূচক এই উপাধি তুলে দেন রাজটির শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি। এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সাধন চক্রবর্তী সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য অধ্যাপকরা। তবে শারীরিক অসুস্থতার কারণে এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেন নি রাজ্যটির রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠি।
ডিলিট উপাধিতে ভূষিত হয়ে শেখ হাসিনা বলেন ‘বাংলাদেশের জাতীয় কবি ১১৯ তম জন্মবার্ষীকির দিনে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, আমি অত্যন্ত গর্বিত। আমাকে যখন দাওয়াত দেওয়া হল আমি তখন রাজি হলাম-একটি মাত্র নামের জন্য সেটি হল কাজী নজরুল ইসলাম। তার নামে একটি সম্মানসূচন ডিগ্রি পাওয়া আমার কাছে বড় পাওয়া। এটা বাংলাদেশর জনগণের কাছেও বিরাট সম্মানের। তিনি শুধুই বাংলাদেশের জাতীয় কবিই নন, দুই বাংলার মানুষের হৃদয়ে, চেতনায় তিনি আছেন। কাজেই এই সম্মান শুধু আমার নয়, সকল বাঙালির। এই সম্মান বাংলাদেশের ও সমস্ত বাঙালিকে আমি উৎসর্গ করলাম’।
নজরুলের দক্ষতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন ‘কবি নজরুল পশ্চিমবঙ্গের চুরুলিয়ায় জন্মগ্রহণ করলেও বাংলাদেশে বেশ কিছুটা সময় কাটিয়েছিলেন। তিনি হলেন বাংলাদেশের জাতীয় কবি। বাংলা সাহিত্যের আকাশে তিনি ধুমকেতুর মতো ছিলেন। তিনি একাধারে ছিলেন কবি, লেখক, উপন্যাসিক, কন্ঠশিল্পী, নাটকার, সাংবাদিক, সৈনিক-সব জায়গায় তাঁর বিচরণ ছিল। তিনি অসাম্প্রদায়িতক চেতনায় বিশ্বাস করতেন। বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেমন দেশের শোষন পীড়িত মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য সংগ্রাম, আন্দোলন করেছেন কারাবরণ করেছেন, আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন ঠিক তেমনি নজরুলও শোষিত বঞ্চিত মানুষের কথা লেখনীর মধ্যে দিয়ে তুলে ধরেছেন-আর এই কারণেই কারাবরণ করতে হয়েছে। তাই একদিকে বাংলা সাহিত্যের কবি কাজী নজরুল ইসলাম তেমনি অন্যদিকে রাজনীতির কবি শেখ মুজিবুর রহমান’। তাঁর অভিমত বাংলা হয়তো ভাগ হতে পারে কিন্তু নজরুল ও রবীন্দ্রনাথ ভাগ হয় নি। তারা সকলের দুই বাংলার। আর সেই কারণেই এখানে ছুটে আসা’।
এদিন মঞ্চ থেকে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমস্যা সমাধানে ভারতসহ প্রতিবেশি দেশগুলিকে পাশে থাকার আহ্বান জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন ‘প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে মানবিকতার খাতিরে বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। আমরা চাই এই সমস্যার দ্রত সমাধান হোক। পাশাপাশি হানাহানি, সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ, মাদক থেকে আমাদেও যুব সমাজকে মুক্ত করতে প্রতিবেশি দেশগুলির সহায়তা কামনা করি’।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত ও এই দেশের জনগণের অবদানের কথাও স্মরণ করেন হাসিনা বলেন সেদেশের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, সেদেশে আশ্রয় নেওয়া প্রায় এক কোটি বাংলাদেশি মানুষকে তাদের খাবার তুলে দিয়েছিলেন, অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন’।
এর আগে পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি বলেন ‘আজকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধে দিয়ে কাজী নজরুল জয়ন্তী পালন করা হচ্ছে। আর সেই দিনেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে এই সম্মানসূচক উপাধি দেওয়া হল-এটা এটা অত্যন্ত গর্বের বিষয়।
তাঁর অভিমত ‘রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল আমাদের সম্পদ। বাঙালির কাছে সারা বিশ্বেকে দেখানার জন্য দুইটি নাম আছে তা হল রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল। বেড়াজাল দিয়ে দুই বাংলাকে কখনও আটকে রাখা যায় নি, যাবে না। যেমনটা রবীন্দ্রনাথ বা নজরুলকেও আটকানো যায় নি’। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য রবীন্দ্র-নজরুলের অবদানের কথা উল্লেখ করে পার্থ চ্যাটার্জি বলেন ‘আমরা মনে করি আজকের দিনে সমাজ যখন নতুন করে চিন্তা-ভাবনা করতে চাইছে, উস্কানিমূলক আচরণের মধ্যে দিয়ে তাদের রক্তকে বিভেদ করার যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, সেখানে এই দুইজন মানুষ শক্ত হযে দাঁড়িয়ে সেই সমাজকে তার লেখা ও কাজের মধ্যে দিয়ে জাগিয়ে তুলেছেন’।
বিশেষ সমাবর্তন ও ডি-লিট প্রদান অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, গওহর রিজভী, তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীসহ বাংলাদেশের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক অঙ্গনের কয়েকজন প্রতিনিধি যোগ দিয়েছেন।
বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন/ ই-জাহান