১৯৯৬ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এই ২২ বছরে বাংলাদেশে ৩৫ জন সাংবাদিকে হত্যা করা হয়েছে। যার মধ্যে মাত্র ৮টি মামলার বিচার সম্পন্ন হলেও ৫টির বিচারের রায়কে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা প্রত্যাখান করেছেন বলে এক প্রবন্ধে উঠে এসেছে।
প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী ইউনেস্কো ২ নভেম্বরকে 'সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সংঘঠিত অপরাধ বিচারহীনতা'' দিবস হিসেবে পালন করে থাকে। দিবসটি উপলক্ষে শনিবার রাজধানীর ডেইলি স্টার ভবনে আর্টিকেল নাইনটিন আয়োজিত গোলটেবিল বেঠকে রিপোটার্স উইদাউট বর্ডাস (আরএসএফ) নামের একটি আন্তর্জাতিক সংগঠনের বাংলাদেশ শাখা এ তথ্য জানায়।
বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রিপোটার্স উইদাউট বর্ডাস (আরএসএফ) বাংলাদেশ প্রতিনিধি সেলিম সামাদ। তিনি বলেন, ১৯৯৬ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ৩৫ জন সাংবাদিকে হত্যা করা হয়েছে। যার মধ্যে মাত্র ৮টি মামলার বিচার সম্পন্ন হয়েছে। আশ্চর্যের বিষয় হলো বিচার সম্পন্ন হওয়া ৮টি মামলার মধ্যে ৫টি মামলার বিচারের রায়কে প্রত্যাখান করেছেন পরিবারের সদস্যরা।
মূল প্রবন্ধে সুপারিশ করা হয় যে, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য আলাদা আইন প্রনয়ন করা, সাংবাদিকদের জন্য রাষ্ট্রপক্ষে আলাদা আইনজীবী নিয়োগ করা, ডিজিটাল নিরাত্তা আইন ২০১৮'সহ সাংবাদিকদের হয়রানির শিকার হতে হয় এমন আইনসমূহ প্রত্যাহার করা।
আর্টিকেল নাইনটিন আয়োজিত গোলটেবিল বেঠকে সভাপতিত্ব করেন সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার ড. গোলাম রহমান। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের সংগ্রাম করেই বেঁচে থাকতে হয়। বিচারিক প্রক্রিয়া পুর্নগঠন প্রয়োজন। বিচারহীনতা রোধ করার জন্য বিচারিক প্রক্রিয়ায় জড়িত সবাইকে যুক্ত করতে হবে।
খুন হওয়া সাংবাদিক মেহেরুন্নেছা রুনির ভাই ও রুনি হত্যা মামলার বাদী নওশের আলম রোমান বলেন, রুনি হত্যার আট বছর হয়েছে, অথচ আদালতে ৬৮ বার সময় চেয়ে ও তদন্ত রিপোর্ট দিতে পারেনি আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী। যা হতাশাজনক। সাগর ও রুনির সন্তান মেঘ আজ তের বছর বয়সী। এখন পর্যন্ত তাকে রাষ্ট্র জানাতে পারেনি কে তার পিতা-মাতার ঘাতক।
গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিয়া আমির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর শামীম রেজা, নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী, একাত্তর জার্নালের উপস্থাপক মিথিলা ফারজানা, বাংলাদেশ মানবাধিকার সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক খায়রজ্জামান কামাল, কালের কণ্ঠের মারিয়া সালাম, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার সাংবাদিক সেলিনা শিউলি প্রমুখ। সূচনা বক্তব্য রাখেন আর্টিকেল নাইনটিনের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সল।
গোলটেবিল বেঠকে আন্তর্জাতিক পেক্ষাপট, বাংলাদেশে বিচারহীনতার অবস্থা ও আর্টিকেল নাইটিনের কার্যক্রম তুলে ধরা হয়। এতে সিনিয়র সাংবাদিক ও মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধিসহ প্রায় ৩০ জন পেশাজীবী অংশগ্রহণ করেন।
ইমপিউনিটি নিয়ে আর্টিকেল নাইনটিন এর কার্যক্রম উপস্থাপন করেন আর্টিকেল নাইনটিনের কনসালটেন্ট ইফাত নাওরিন মালিক।
২০১৩ সালের ২ নভেম্বর মালিতে দুইজন ফরাসি সাংবাদিক হত্যার স্মরণে এই তারিখটিকে ইমপিউনিটি ডে হিসেবে ঘোষণা করে জাতিসংঘ।
বিডি-প্রতিদিন/মাহবুব