৮ জুলাই, ২০২০ ১৬:৩৯

করোনা টেস্ট নিয়ে প্রতারণা, রিজেন্ট হাসপাতালের ৭ কর্মকর্তা রিমান্ডে

আদালত প্রতিবেদক

করোনা টেস্ট নিয়ে প্রতারণা, রিজেন্ট হাসপাতালের ৭ কর্মকর্তা রিমান্ডে

করোনা টেস্ট না করে সার্টিফিকেট দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধে করা মামলায় সাত জনকে ৫ দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি অপর একজনকে কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হয়েছে। বুধবার ঢাকা মহানগর হাকিম সাদবীর ইয়াছির আহসান চৌধুরী এ আদেশ দেন। 

এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উত্তরা পশ্চিম থানার পুলিশ পরিদর্শক আলমগীর গাজী ৮ জনকে আদালতে হাজির করেন। তাদের মধ্যে ৭ জনকে সাতদিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন এবং কামরুল ইসলামকে কিশোর সংশোধনাগার কেন্দ্রে পাঠানোর আবেদন করেন। শুনানি শেষে ৭ জনকে ৫ দিন করে রিমান্ডে ও একজনকে কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। 

রিমান্ডে যাওয়া আসামিরা হলেন- আহসান হাবীব, আহসান হাবীব হাসান, হাতিম আলী, রাকিবুল হাসান ওরফে সুমন, অমিত বনিক, আব্দুস সালাম, আব্দুর রশীদ খান ওরফে জুয়েল। এ ছাড়া কামরুল ইসলাম নামে একজন কিশোর হওয়ায় তাকে গাজীপুর কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হয়েছে।

রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, সুষ্ঠ তদন্তের স্বার্থে মামলার এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্য ও পলাতক  আসমিদের গ্রেফতার করতে এবং অভিযান পরিচালনা করতে এই আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। 

এর আগে, মঙ্গলবার রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় বাদী হয়ে মামলাটি করে র‌্যাব। মামলায় হাসপাতালের মালিক শাহেদসহ ১৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রধান আসামিসহ ৯ জন আসামি পলাতক রয়েছে। 

আসামিরা হলেন- রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ পারভেজ, রিজেন্ট হাসপাতালের কর্মী তরিকুল ইসলাম, আবদুর রশিদ খান জুয়েল, মো. শিমুল পারভেজ, দীপায়ন বসু, আইটি কর্মকর্তা মাহবুব, সৈকত, পলাশ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা আহসান হাবীব (১), হেলথ টেকনিশিয়ান আহসান হাবীব (২), হেলথ টেকনোলজিস্ট হাতিম আলী, অভ্যর্থনাকারী কামরুল ইসলাম, রিজেন্ট গ্রুপের প্রকল্প প্রশাসক মো. রাকিবুল ইসলাম, রিজেন্ট গ্রুপের মানবসম্পদ কর্মকর্তা অমিত বণিক, রিজেন্ট গ্রুপের গাড়িচালক আবদুস সালাম ও নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুর রশিদ খান।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, রিজেন্ট হাসপাতালের ওই দুই শাখায় গত মার্চ থেকে কোভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সোমবার র‌্যাবের অভিযানে উত্তরা শাখায় (মূল শাখা) বিভিন্ন অনিয়ম ধরা পড়ে। 

এতে দেখা যায়, হাসপাতাল দুটি রোগীদের কাছ থেকে অন্যায়ভাবে বিরাট অঙ্কের টাকা আদায় করছে। পাশাপাশি অনুমোদন না থাকা সত্ত্বেও আরটি-পিসিআর পরীক্ষার নামে ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়া, তাগিদ দেওয়া সত্বেও লাইসেন্স নবায়ন না করাসহ আরও অনিয়ম প্রমাণিত হয়। পরে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত রিজেন্ট হাসপাতালের দুটো শাখায় (উত্তরা ও মিরপুর) অভিযান চালায়। এ সময় হাসপাতালটির ব্যবস্থাপকসহ ৮ জনকে আটক করে।  

মামলায় আরও বলা হয়, আসামিরা করোনার নমুনা পরীক্ষা না করে ভুয়া রিপোর্ট তৈরি করত। এ ধরনের ১৪টি অভিযোগ র‌্যাবের কাছে জমা পড়ে, যার পরিপ্রেক্ষিতে এই অভিযান। দ্বিতীয়ত, হাসপাতালটির সঙ্গে সরকারের চুক্তি ছিল ভর্তি রোগীদের বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার। সরকার এই ব্যয় বহন করবে। কিন্তু তারা রোগী প্রতি লক্ষাধিক টাকা বিল আদায় করেছে। পাশাপাশি রোগীদের বিনা মূল্যে চিকিৎসা দিয়েছে এই মর্মে সরকারের কাছে ১ কোটি ৯৬ লাখ টাকার বেশি বিল জমা দেয়। রিজেন্ট হাসপাতাল এ পর্যন্ত শ দুয়েক কোভিড রোগীর চিকিৎসা দিয়েছে। রিজেন্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তৃতীয় অপরাধ হলো সরকারের সঙ্গে চুক্তি ছিল ভর্তি রোগীদের তারা কোভিড পরীক্ষা করবে বিনা মূল্যে। কিন্তু তারা আইইডিসিআর, আইটিএইচ ও নিপসম থেকে ৪ হাজার ২০০ রোগীর বিনা মূল্যে নমুনা পরীক্ষা করিয়ে এনেছে।

মামলায় আরও বলা হয়, রিজেন্ট হাসপাতালের লাইসেন্স ২০১৪ সালে শেষ হয়ে গেছে। এরপর আর লাইসেন্স নবায়ন করা হয়নি। এরপরও সরকার এমন একটি হাসপাতালের সঙ্গে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার বেআইনি চুক্তি করেছে। 

বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর