আগামী জাতীয় নির্বাচনের সময়ে নিরপেক্ষ সরকার না থাকলে বিএনপি সেই নির্বাচন মেনে নেবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ শনিবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় বিএনপির মহাসচিব সরকারের প্রতি এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
এসময় তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের কোনো জনসমর্থন নাই। রাজনৈতিকভাবে তারা সম্পূর্ণ দেউলিয়া হয়ে গেছে। তারা জানে যে, যদি কোনও সুষ্ঠ নির্বাচন হয় সেই নির্বাচনে তারা ৩০টি আসনও পাবে না। এই কারণে তারা কী করেছে? সমস্ত রাষ্ট্রযন্ত্রকে তারা দলীয়করণ করেছে। বিচার বিভাগ, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভাগ, এমনকি দুর্ভাগ্যজনকভাবে কষ্ট হয় বলতে আমাদের এই যে গণমাধ্যম-এটাকেও তারা নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছে। ফলে আজকে গোটা জাতি কথা বলতে পারছে না, তাদের মতামত দিতে পারছে না।
তিনি আরও বলেন, আমরা সাধারণ মানুষ যারা, প্রজাতন্ত্রের যারা আমরা নাগরিক আমরা একটা দিনই রাজা হই। যেদিন আমি ভোট দিতে পারি। কিন্তু সেই ভোটের অধিকারটা এই সরকার কেড়ে নিয়েছে। এখন কেউ ভোট দিতে যেতে পারে না। এই ভোটের অধিকারটা, কথা বলার অধিকারটা এটা আমরা এমনি এমনি পাইনি। আমাদের দীর্ঘদিন সংগ্রাম করতে হয়েছে, লড়াই করতে হয়েছে, আমাদের দেশকে স্বাধীন করতে একটি রক্তাক্ত যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বিজয়ী হতে হয়েছে।
সরকারের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনাদের (সরকার) দিন ঘনিয়ে এসেছে, দিন শেষ। এখনো সময় আছে, মানুষের ভাষাগুলো পড়েন। দেয়ালের লিখন দেখেন। দেখে নির্বাচনকালীন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান তৈরি করে সরে যান এবং জনগনকে তাদের ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে দিন।
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে সকলে সুশৃঙ্খল হোন, বিশৃঙ্খল হবেন না। শুধু পদের জন্য দৌড়াবেন না। নতুন কমিটি হচ্ছে তার জন্য মাঠ বোঝাই করে দেবেন না। মাঠ বোঝাই করবেন যখন আন্দোলনের ডাক আসবে, মাঠ বোঝাই করবেন যখন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আমরা মাঠে নামব, গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য যখন আমরা মাঠে নামব। তখন মাঠ বোঝাই করবেন, রাস্তায় বোঝাই করবেন। গণআন্দোলন ছাড়া, গণঅভ্যুত্থানের জন্য এই দানবকে সরানো যাবে না। দানবকে সরাতে হলে আমাদের সকল জনগনকে ঐক্যবদ্ধ করে, সকল রাজনৈতিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে আমাদেরকে এই গণঅভ্যুত্থান ঘটাতে হবে। আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই, ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমরা এই দানবকে আমাদের বুকের ওপর থেকে সরিয়ে নিয়ে মুক্ত বাতাস, মুক্ত বাংলাদেশ, মুক্ত গণতন্ত্র সৃষ্টি করি।
রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে ‘১ অক্টোবর ২০০১ : নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সর্বশেষ নির্বাচন’-শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়। দ্বাদশ সংশোধনী অনুযায়ী বিচারপতি লতিফুর রহমানের নেতৃত্বে সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনে বিএনপির সংখ্যাগরিষ্ট আসনে বিজয়ের পর খালেদা জিয়া সরকার গঠন করেছিলেন।
স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ওবায়দুল কাদের বলেন- যারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলে তারা সংবিধান বিরোধী কথা বলে। এই সংবিধানকে শেষ করে দিয়েছে কাটাছেড়া এই সরকার। তারা আবার লম্বা লম্বা কথা বলে। তারা (সরকার) বলছে- সংবিধান অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ফিরে যাওয়ার সুযোগ নাই। এর সোজা ভাষা হলো আওয়ামী লীগের ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার সুযোগ নাই। যে আওয়ামী লীগ চিরজীবন ক্ষমতা থেকে যাবে না।
বিএনপিকে সভা-সমাবেশ করার অনুমতি দিতে হবে দাবি করে তিনি বলেন, আমাদেরকে প্রেসক্লাবে জায়গা দেবেন না, আমাদেরকে ফুটপাতে জায়গা দেবেন না। আমাদের সভা-সমাবেশ করতে দেবেন না। এটা হবে না। সব মানুষের মুখে একটা আওয়াজ- আওয়ামী লীগ বোধহয় গেলো, বিএনপি বোধহয় আসছে। ইন শা আল্লাহ আওয়ামী লীগ যাবে, বিএনপি ইন শা আল্লাহ আসবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে ও সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির এজেডএম জাহিদ হোসেন, আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, যুব দলের সাইফুল আলম নিরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভুঁইয়া, মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান, ছাত্র দলের ফজলুর রহমান খোকন প্রমূখ বক্তব্য রাখেন। আলোচনা সভায় অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, রাষ্ট্র বিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, কেন্দ্রীয় নেতা সিরাজউদ্দিন আহমেদ, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শিরিন সুলতানা, আজিজুল বারী হেলাল, হালিমা নেওয়াজ আরলী, রেহানা আখতার রানু, শাম্মী আখতার, অনিন্দ্র ইসলাম অমিত, আমিনুল হক, মীর নেওয়াজ আলী, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মোরতাজুল করীম বাদরু, রফিকুল আলম মজনু, এসএম জাহাঙ্গীর, ইয়াসীন আলী, আরিফা সুলতানা রুমা, শায়রুল কবির খান প্রমূখ নেতৃবৃন্দ সহাস্রাধিক কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ আল সিফাত