মানবিক কারণে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ ক্ষমতায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে জামিন দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য আবারও বিদেশে পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন দলটির সংসদ সদস্যরা।
এ সময় তারা বিদেশ না পাঠানোর ফলে খালেদা জিয়ার কিছু হয়ে গেলে আওয়ামী লীগকে আজীবন এর দায় বহন করতে হবে বলে উল্লেখ করলে সংসদে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে বিএনপির দাবি মানা না হলে তারা সংসদ থেকে পদত্যাগের হুমকিও দেন।
বিএনপির এমপি জি এম সিরাজ বলেন, ‘আমরা ছয়জন এ সংসদে আছি। আওয়ামী লীগের বন্ধুরা বলেন, এটা এ সংসদের জন্য অলঙ্কার। আজকে তাই বলতে চাই, প্রধানমন্ত্রী, যদি আমরা সত্যিকার অর্থে অলঙ্কার হয়ে থাকি, তাহলে এ সংসদ অলঙ্কারবিহীন করবেন না। আমাদের দলীয় সিদ্ধান্ত এমনও হতে পারে, ম্যাডাম যদি চরম অবস্থায় চলে যান, তাহলে আমাদের এই সংসদে থাকা সম্ভব নাও হতে পারে। আমি এটাকে শর্ত দিচ্ছি না।’
এ সময় তার মাইক বন্ধ হয়ে যায়। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গতকাল বৃহস্পতিবার সংসদের ১৫তম অধিবেশনের বৈঠকে এ ঘটনা ঘটে।
এর আগে বিএনপি এমপি জি এম সিরাজ বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়ে আইনমন্ত্রীর ৪০১ ধারার দীর্ঘ বক্তব্য শুনেছি। গত (বুধবার) প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনলাম, যা সব দৈনিক পত্রিকায় শিরোনাম হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শপথ নিয়েছিলেন, ‘রাগ বিরাগের বশবর্তী হবেন না।’ কিন্তু ওনার গতকালের বক্তব্যের সঙ্গে শপথের ভাষা সাংঘর্ষিক। এটা কি সঠিক, না বেঠিক? তার প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, উনার বক্তব্যের সঙ্গে সেটার অসঙ্গতি দেখছি। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিমকে জামিনে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। আ স ম আবদুর রবকে জামিনে জার্মানিতে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছিল। খালেদা জিয়া তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, তাকে কেন যেতে দেওয়া হবে না? চিকিৎসার জন্য সংসদ নেতা বা আমরাও বিদেশে যাই। সে ক্ষেত্রে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে কেন বিদেশে যেতে দেওয়া হবে না? এটা তার মৌলিক অধিকার।
তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। তিনি যদি মনে করেন, তবে অনুমতি দিতে পারেন। প্রধানমন্ত্রী যা চাইবেন, তা-ই হবে। তাই প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করতে চাই, মানবিক কারণে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দু-এক দিনের মধ্যে জামিন দিয়ে বিদেশে পাঠানো হোক। নচেত কিছু একটা হয়ে গেলে এর দায়ভার আওয়ামী লীগকে আজীবন বহন করতে হবে।’
এ সময় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা হইচই করে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সংসদ সদস্যদের চুপ থাকতে বলে থামিয়ে দেন।
জি এম সিরাজ বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে জামিন দিয়ে বিদেশে চিকিৎসার জন্য আবেদন করা হয়েছে। জামিন দিয়ে তাকে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হোক।’
এ বিষয়ে বিএনপির মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া কিডনি, লিভার, ফুসফুস, উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। প্রধানমন্ত্রী অনেক মানবতা দেখিয়েছেন। আরেকটু মানবতা আমরা প্রত্যাশা করি।’
বিএনপির এমপি হারুনুর রশীদও একই দাবি জানান। এ বিষয়ে জবাব দিতে গিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সঠিকভাবে করা হচ্ছে। সেই চিকিৎসায় সন্তুষ্ট কি অসন্তুষ্ট সেটা উনাদের ব্যাপার। কিন্তু ৪০১ ধারায় নিষ্পত্তি হওয়া বিষয়ে আবেদন করার সুযোগ নেই। আমি এটা নিয়ে পুনরায় কথা বলতে চাই না।’
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন