২৬ মে, ২০২২ ০৭:৫৪

ভুলে ভরা কর্মকর্তাদের এসিআর

♦ বিধি লঙ্ঘন করে নিজ এসিআর অগ্রায়ণ করছেন পিএসরা, জমা দিতেও গড়িমসি ♦ যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করার নির্দেশ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের

উবায়দুল্লাহ বাদল

ভুলে ভরা কর্মকর্তাদের এসিআর

প্রতীকী ছবি

নিজেদের ‘বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদন’ (এসিআর) নিজেরাই ডোসিয়ারে প্রেরণ করছেন মন্ত্রী-সচিবদের অনেক একান্ত সচিব (পিএস), যা বিদ্যমান এসিআর অনুশাসনমালার লঙ্ঘন। এ ছাড়া মন্ত্রী-সচিবদের প্রতিস্বাক্ষরিত এসিআরসমূহ নির্দিষ্ট সময়েও পাচ্ছে না ডোসিয়ার সংরক্ষণকারী কর্তৃপক্ষ। আবার যারা এসিআর জমা দিচ্ছেন, সেগুলোতেও পাওয়া যাচ্ছে অনেক ভুল-ত্রুটি ও অসামঞ্জস্য। এমতাবস্থায় নিজের এসিআর নিজেই ডোসিয়ারে প্রেরণের জন্য ফরোয়ার্ডিং না করার নির্দেশনা দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। অর্থাৎ বিদ্যমান অনুশাসনমালা অনুযায়ী যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এসিআর অগ্রায়ণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ২৪ মে এ-সংক্রান্ত নির্দেশ-সংবলিত চিঠি সব মন্ত্রী-সচিব ও বিভাগীয় কমিশনারের পিএসদের কাছে পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে জানানো যাচ্ছে যে, মন্ত্রী/ প্রতিমন্ত্রী/ উপমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব/ সচিবদের প্রতিস্বাক্ষরিত এসিআরসমূহ সিআর অধিশাখা/ডোসিয়ার সংরক্ষণকারী কর্তৃপক্ষের নিকট বিলম্বে পৌঁছাচ্ছে। ফলে সিআর অধিশাখা/ডোসিয়ার সংরক্ষণকারী কর্তৃপক্ষ এসব এসিআর ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে জটিলতার সম্মুখীন হচ্ছে। এতে অনেক এসিআর বাতিলও হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সিআর অধিশাখার নিকট প্রতীয়মান হচ্ছে,  গোপনীয় অনুবেদন অনুশাসনমালা-২০২০ এর ২.৬.৫ নম্বর অনুচ্ছেদ প্রতিপালনের ক্ষেত্রে একান্ত সচিবদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রসঙ্গত, গোপনীয় অনুবেদন অনুশাসনমালা-২০২০ এর ২.৬.৫ নম্বর অনুচ্ছেদ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ‘বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদন’ (এসিআর) জমা না দেওয়াকে ‘অসদাচরণ’ গণ্য করে বিভাগীয় শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, আরও লক্ষ্য করা যাচ্ছে, মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী/উপমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব/সচিবদের একান্ত সচিবদের মধ্যে কেউ কেউ তাঁদের নিজ এসিআর নিজেই অগ্রায়ণ করছেন, যা গোপনীয় অনুবেদন অনুশাসনমালা অনুযায়ী যথাযথ নয়। এমতাবস্থায় মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী/উপমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব/সচিবদের অনুস্বাক্ষরিত/প্রতিস্বাক্ষরিত এসিআরসমূহ যথাসময়ে সিআর অধিশাখা/ডোসিয়ার সংরক্ষণকারী কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণে সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার জন্য এবং একান্ত সচিবদের এসিআর নিজে অগ্রায়ণ না করে প্রতিস্বাক্ষরকারী/সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কিংবা বিভাগের প্রশাসন শাখার কর্মকর্তার স্বাক্ষরে অগ্রায়ণ করার জন্য অনুরোধ করা হলো। এসিআর দাখিল, অনুস্বাক্ষর ও প্রতিস্বাক্ষরের ক্ষেত্রেও অনেক ভুল-ত্রুটি ও অসামঞ্জস্য থাকে উল্লেখ করে ১৬ মে সব সচিব, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের পিএসকে চিঠি দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। চিঠিতে বলা হয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিআর অধিশাখায় (সংরক্ষণকারী কর্তৃপক্ষ) প্রাপ্ত গোপনীয় অনুবেদনসমূহ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দাখিল/অনুস্বাক্ষর/প্রতিস্বাক্ষরের ক্ষেত্রে অনেক ভুল-ত্রুটি ও অসামঞ্জস্য রয়েছে। অন্যান্য মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও দফতর/সংস্থার ডিপিসির সভায়ও গোপনীয় অনুবেদনে অসংখ্য ত্রুটি-বিচ্যুতিসহ ব্যাপক অব্যবস্থাপনা দেখা যায়। এ ছাড়া অন্যান্য ক্যাডার থেকে উপসচিব হিসেবে পদোন্নতির জন্য কর্মকর্তাদের এসিআর যাচাইকালেও একই রকম ভুল-ত্রুটি ও অব্যবস্থাপনা লক্ষ্য করা যায়। এতে অনেক সময় কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হন, যা প্রত্যাশিত নয়। বিদ্যমান এসিআর অনুশাসনমালা যথাযথভাবে অনুসরণ করা হলে এ ধরনের অব্যবস্থাপনা দেখা যেত না। এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দফতর ও সংস্থা প্রধানদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে।

২০২০ সালে জারি করা অনুশাসনমালায় বলা হয়েছে, কোনো কর্মকর্তা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এসিআর জমা না দিলে বা তাতে প্রতিস্বাক্ষর করা না হলে তা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ‘অসদাচরণ’ হিসেবে গণ্য করা হবে। এ ক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। অনুবেদনযোগ্য বছর শেষে একজন কর্মকর্তা পরবর্তী বছরের ৩১ জানুয়ারির মধ্যে তার নিজস্ব কর্মকাণ্ডের মূল্যায়নের জন্য একটি বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদন (এসিআর) তৈরি করবেন। প্রতিবেদন তৈরির পর তা নিয়ন্ত্রকারী কর্মকর্তা বা অনুবেদনকারী কর্মকর্তার স্বাক্ষরের জন্য জমা দেবেন। অনুবেদনকারী কর্মকর্তা স্বাক্ষর করে পরবর্তী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তা প্রতিস্বাক্ষরকারী কর্মকর্তার কাছে জমা দেবেন। প্রতিস্বাক্ষরকারী কর্মকর্তা ৩১ মার্চের মধ্যে নথিপত্রে সই করে সিল করা খামে গোপনীয় এ অনুবেদন সংরক্ষণকারী কর্তৃপক্ষ বা ডোসিয়ারের দফতরে পাঠাবেন। কোনো কর্মকর্তা নির্দিষ্ট সময়ের এক বছরের বেশি সময় পরে তার বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদন জমা দিলে তা বাতিল বলে গণ্য হবে। এ ধরনের অনুবেদনে অনুবেদনকারী কর্মকর্তা বা প্রতিস্বাক্ষরকারী কর্মকর্তার স্বাক্ষর দেওয়া চলবে না। এ ক্ষেত্রে দেরিতে অনুবেদন জমা দেওয়া কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অসদাচরণের দায়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। তবে কেউ নির্দিষ্ট সময়ে অনুবেদন জমা দেওয়ার পরও অনুবেদনকারী বা প্রতিস্বাক্ষরকারী কর্মকর্তা এক বছরের বেশি সময় পরে তা সংরক্ষণকারী কর্মকর্তার দফতরে পাঠালে সে জন্য এসিআর জমাকারী কর্মকর্তার কোনো দায় থাকবে না। এ ক্ষেত্রে তাকে দায় থেকে অব্যাহতি দিয়ে গড় নম্বর দিতে হবে। বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদনে ‘ঘষামাজা, কাটাছেঁড়া বা ফ্লুইড’ ব্যবহার করা যাবে না। তবে জরুরি প্রয়োজনে একটানে কেটে সংশোধনের পর সেখানে অনুস্বাক্ষর দিতে হবে।


বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর