১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ১৯:১৫

বসুন্ধরার পৃষ্ঠপোষকতায় শুরু হচ্ছে মেগারিয়ালিটি শো ‘কুরআনের নূর’

নিজস্ব প্রতিবেদক

বসুন্ধরার পৃষ্ঠপোষকতায় শুরু হচ্ছে মেগারিয়ালিটি শো ‘কুরআনের নূর’

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ মুসল্লি কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ও বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীর

বসুন্ধরা গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতায় আগামী রমজানে শুরু হচ্ছে মেগারিয়ালিটি শো এবং দেশব্যাপী হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতা ‘কুরআনের নূর’। ১৫ বছরের কম বয়সী হাফেজরা এতে অংশ নিতে পারবে। হাফেজদের সম্মানিত করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রথম বিজয়ীকে দেওয়া হবে ১০ লাখ টাকা পুরস্কার। দ্বিতীয় বিজয়ী পাবে সাত লাখ টাকা। তৃতীয় বিজয়ী পাবে পাঁচ লাখ টাকা। চতুর্থ ও পঞ্চম বিজয়ী পাবে দুই লাখ টাকা করে।

বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টায় রাজধানীর ইসলামিক ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ মুসল্লি কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়। 

সংবাদ সম্মেলনে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ মুসল্লি কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ও বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীর উপস্থিত ছিলেন।  

আরও উপস্থিত ছিলেন বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি রুহুল আমীন, পেশ ইমাম শায়খুল হাদিস মুহাম্মদ মুহিবুল্লাহিল বাকী, শায়েখ আহমাদ বিন ইউসুফ আল আযহারী, মাওলানা মিজানুর রহমান, মুফতি এহসানুল হক জিলানী, মাওলানা মহিউদ্দিন কাসেমী, মুসল্লি কমিটির সভাপতি হাজি মো. ইয়াকুব আলী, সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান মানিকসহ ইসলামিক স্কলার ও দেশবরেণ্যে আলেম-উলামাগণ।  

সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানান মুসল্লি কমিটির সভাপতি হাজি মো. ইয়াকুব আলী। তিনি বলেন, আসন্ন রমজানে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে হিফজুল কুরআন বিষয়ক মেগারিয়ালিটি শো ও দেশব্যাপী হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতা ২০২৩ ‘কুরআনের নূর’, পাওয়ার্ড বাই বসুন্ধরা।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ঢাকা বিভাগের উত্তর-দক্ষিণ জোনসহ পুরো দেশের মোট ১১টি জোন থেকে অনূর্ধ্ব-১৫ বছর বয়সী ৩০ পারা কুরআনের হাফেজগণ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবে। জোনগুলো হলো―সিলেট, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, ফরিদপুর, বরিশাল, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ।

দেশের ৯টি বিভাগ থেকে সেরা তিনজন হাফেজ দ্বিতীয় রাউন্ড বা ঢাকা অডিশনে যোগ দেবে। এই তিনজনকে অভিভাবকসহ ঢাকায় আনা হবে। আর ঢাকা বিভাগের দুই জোন থেকে ৯ জন করে হাফেজ দ্বিতীয় রাউন্ডে অংশগ্রহণ করবে। এরপর ৪৫ জন প্রতিযোগী নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে বিশুদ্ধ ও সুন্দর কুরআন তিলাওয়াতের শ্রেষ্ঠত্বের প্রতিযোগিতা। দেশবরেণ্য ইসলামিক স্কলার ও অভিজ্ঞ হাফেজদের সমন্বয়ে গঠিত বিচারকমণ্ডলী এখান থেকে ফাইনাল রাউন্ডের জন্য পাঁচজন কুরআনের হাফেজকে বাছাই করবেন। রিয়ালিটি শো ও দেশব্যাপাী হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতার প্রথম বিজীয় একজন পাবে ১০ লাখ টাকা ও সম্মাননা। দ্বিতীয় বিজয়ী পাবে সাত লাখ টাকা ও সম্মাননা, তৃতীয় বিজয়ী পাঁচ লাখ, চতুর্থ ও পঞ্চম বিজয়ী দুই লাখ করে টাকা ও সম্মাননা। সেরা ১০-এ থাকা বাকি পাঁচজনও পাবে আর্থিক পুরস্কার ও সম্মাননা। 

আয়োজকরা জানান, যেসব প্রতিযোগী আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে পুরস্কার পেয়েছে তারা এ প্রতিযোগিতায় বিবেচিত হবে না। 

এই প্রতিযোগিতার বিচারকের প্যানেলে থাকবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম শায়খুল হাদিস মুফতি মুহিব্বুল্লাহিল বাকী আন নাদভী, শায়েখ আহমাদ বিন ইউছুফ আল আযহারী, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি মিজানুর রহমান, পেশ ইমাম শায়খুল হাদিস মুফতি এহসানুল হক জিলানী, পেশ ইমাম শায়খুল হাদিস মুহিউদ্দীন কাসেম ও মেয়র মুহাম্মদ হানিফ জামে মসজিদের ইমাম ইমরান নূর উদ্দিন। 

‘কুরআনের নূর’ মেগারিয়ালিটি শোটি নিউজটোয়েন্টিফোর চ্যানেলে সম্প্রচার হবে। এ ছাড়া এটির মিডিয়া পার্টনার হিসেবে আছে বাংলাদেশ প্রতিদিন, কালের কণ্ঠ, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর ও ক্যাপিটাল এফএম রেডিও। 

অনুষ্ঠানে শায়খুল হাদিস মুহাম্মদ মুহিব্বুল্লাহিল বাকী বলেন, বসুন্ধরা প্রত্যেকটি কাজ সুনিপুণভাবে করে থাকে। যখন তারা কোনা কাজ করতে যায় তখন সঠিক লোক নির্বাচন করে।

তিনি আরো বলেন, এমন একটা রিয়ালিটি শো হবে, বহুদিনের আকাঙ্ক্ষা ছিল; হয়নি। আজ বসুন্ধরার জন্য সেটা সম্ভব হচ্ছে। সেটা ভালো হবে, এতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। বসুন্ধরা গ্রুপ গত রমজানে জাতীয় মসজিদে ইফতারের ব্যবস্থা করেছে। তারা দরিদ্র মুসল্লিদের ওমরাহ পালনের ব্যবস্থা করেছে।

তিনি আরো বলেন, গতকাল (৩১ জানুয়ারি) উনার (মুসল্লি কমিটির প্রধান উপদেষ্টা সায়েম সোবহান আনভীর) জন্মদিন গেছে। উনি সারা দেশে এক লাখ ১১ হাজার এতিমকে উন্নত মানের খাবার খাইয়েছেন। অনেকে আছেন বড় বড় হোটেলে গিয়ে জন্মদিন করেন। তিনি (আনভীর) বলেছেন, ‘আমি বড় বড় হোটেলে করতে চাই না। আমি এতিমদের সাথে থাকতে চাই।’

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বসুন্ধরা গ্রুপের সহযোগিতায় ৮৬ জন ওমরাহ পালন করে এসেছেন। তারাও গতকাল এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তাদের মাধ্যে থেকে খাদেম আবদুল মান্নান তার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, ‘মক্কায় যাওয়ার জন্য আমার মনটা কাঁদত। কিন্তু আমার সেই সক্ষমতা ছিল না। আমি বসুন্ধরার সহযোগিতা পেয়ে মক্কা-মদিনাতে যেতে পেরেছি। রাসুল (সা.)-এর রওজায় নামাজ পড়ে তাদের জন্য দোয়া করেছি।’

আপন জুয়েলার্সের স্বত্বাধিকারী ও জাতীয় মসজিদের মুসল্লি কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট গুলজার উদ্দিন বলেন, “দীর্ঘ ৪০ বছর মুসল্লি কমিটি পরিচালনা করা হচ্ছে, মূল্যায়ন হয়নি। সায়েম সোবহান আনভীর সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার পর এটা পরিচিতি পেয়েছে। গত রমজানে ৪৭ হাজার লোককে ইফতারি করিয়েছি। উপদেষ্টা সাহেব একদিন ইফতার করেন। অনেক অতিথি ছিলেন। সেদিন তিনি বলেছিলেন, ‘দরিদ্রদের ওমরাহ করতে পাঠাব।’ এরপর অনেকেই ওমরাহ করে এসেছেন; আগামী সপ্তাহে আরো ১০৪ জন মুসল্লি ওমরাহ করবেন।”

তিনি আরো বলেন, মুসল্লি কমিটির প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, আগামী রমজানে প্রতিদিন দুই হাজার লোকের ইফতার করাবেন। পুরো রমজানে ৬০ হাজার লোককে ইফতার করানো হবে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পবিত্র কুরআন নাজিলের মাস আমাদের বহুল প্রতীক্ষিত সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র মাহে রমজানে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে নিবেদন করা হচ্ছে কুরআনের নূর। এই আয়োজনের মাধ্যমে কুরআনের শ্রেষ্ঠ হাফেজদের সম্মাননা ও আর্থিকভাবে পুরস্কৃত করবে বসুন্ধরা গ্রুপ। দেশের কুরআনে হাফেজদের পাশে বরাবরই আন্তরিকতার সঙ্গে পাশে থেকেছে বসুন্ধরা গ্রুপ। তবে এবার হাফেজদের জন্য বসুন্ধরা গ্রুপ সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। যার শুভ সূচনা হচ্ছে পবিত্র কুরআন নাজিলের মাসে কুরআন প্রতিযোগিতা মেগারিয়ালিটি শো ‘কুরআনের নূর’ দিয়ে।

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর