২৪ মে, ২০২৪ ১১:২৮

এমপি আনারের হাড় ও মাংস আলাদা করে হলুদের গুঁড়ো মেশানো হয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

এমপি আনারের হাড় ও মাংস আলাদা করে হলুদের গুঁড়ো মেশানো হয়

ঢাকায় বসে দীর্ঘ তিন মাস ধরে খুনের পরিকল্পনার পর ভারতে নিয়ে খুন করা হয় ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকারদলীয় এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারকে। তাঁকে হত্যা করতে ছোরা, চাকু কেনা হয় কলকাতার নিউমার্কেট থেকে। আনারকে হত্যার পর লাশ টুকরা টুকরা করে হাড় থেকে মাংস আলাদা করা হয়। মাংস হলুদ দিয়ে মিশিয়ে লাগেজে ভরা হয়। এমন সব রোমহর্ষক তথ্য পুলিশকে দিয়েছেন আটক আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল। গোয়েন্দা পুলিশ এসব তথ্য জানালেও লাশের খন্ডিত অংশগুলো কোথায় লুকানো রয়েছে, এ বিষয়ে কোনো তথ্য নেই। এদিকে গ্রেফতারের দুই দিন পর পুলিশ জানতে পারল আমানুল্লাহর আসল নাম শিমুল ভূঁইয়া। পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির একজন নেতা। তিনি একজন পেশাদার খুনি। সব মিলিয়ে এমপি খুনের তদন্তে সংশ্লিষ্টরা রয়েছেন গোলকধাঁধায়। তাঁরা বলছেন, লাশের খন্ডিত অংশ পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ রয়েছে। এ ছাড়া খুনের মোটিভ সম্পর্কেও পুলিশ এখনো পরিষ্কার নয়। এমপি আনার খুনের ঘটনা তদন্ত করতে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের একটি দল এখন ঢাকায়। গতকাল বিকালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে খুনের ঘটনাটি নিয়ে বৈঠক হয়। এ বৈঠকের মধ্য দিয়েই যৌথ তদন্ত শুরু করল বাংলাদেশ-ভারত।

এদিকে আনোয়ারুল আজিম আনারের লাশের খণ্ডিত অংশের সন্ধানে ভাঙড়ের কৃষ্ণমাটি খাল এলাকায় গত রাতে কলকাতা সিআইডি অভিযান শুরু করেছে। অ্যাপ ক্যাবচালক জুবেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই খালের সংবাদ জানতে পেরেছে সিআইডি। এরপরই তাকে নিয়ে সেখানে তল্লাশি অভিযান চালানো হয়। গত রাত ১২টা পর্যন্ত এ অভিযান চলছিল বলে জানা গেছে।

এমপি আনার খুনের মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহিন মুখ খুলেছেন। তিনি খুনের সঙ্গে জড়িত নন বলে একটি বেসরকারি চ্যানেলকে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, খুনের সময় আমি ছিলাম বাংলাদেশে। যেভাবে হত্যাকান্ড : ৩০ এপ্রিল কিলিং মিশন বাস্তবায়নকারী সৈয়দ আমানুল্লাহ ওরফে শিমুলকে নিয়ে ভারতের কলকাতায় যান মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহিন। নিউমার্কেট এলাকা থেকে ছুরি, চাপাতিসহ হত্যাকান্ডের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে নিয়ে রাখেন নিউটাউন অভিজাত এলাকায় সঞ্জীবা গার্ডেনসে। আগে থেকেই হত্যাকান্ডের ছক আঁকা থাকায় আমান দফায় দফায় রিহার্সেল করেন তার সহযোগীদের সঙ্গে। গত ১৩ মে দুপুর ১টা ২৫ মিনিটে কলকাতা নিউটাউন অভিজাত এলাকায় সঞ্জীবা গার্ডেনসে প্রবেশ করেন আনোয়ারুল আজিম আনার। শাহিনের ভাড়া করা এ ভবনেরই অত্যাধুনিক ‘ত্রি-প্লেক্স’ ফ্ল্যাটে আগে থেকেই অবস্থান করছিলেন সৈয়দ আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল, শিলাস্তি রহমানসহ ছয়জন। তবে ‘ব্লক-৫৬ বিইউ’ ফ্ল্যাটের তৃতীয় তলায় ছিলেন মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহিনের সুন্দরী বান্ধবী শিলাস্তি। গোয়েন্দাদের ধারণা, হত্যার আগে এমপি আনারের সঙ্গেও বিশেষ সময় কাটিয়েছেন তিনি। দুপুর ২টা ২০ মিনিটে শুরু হয় হত্যার মূল মিশন।

গোয়েন্দাদের হেফাজতে থাকা আমানের বরাত দিয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছেন, শুরুতে এমপি আনারকে জবাই করে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। কেউ যাতে কোনো কিছু বুঝতে না পারে সেজন্য ফ্ল্যাটে বাজানো হয় কিছুটা উচ্চশব্দের মিউজিক। পর্যায়ক্রমে শরীরের বিভিন্ন অংশ চাপাতি দিয়ে কেটে আলাদা করা হয়। হাড় থেকে খুলে ফেলা হয় মাংস। মাংস যাতে দ্রুত পচে না যায় সেজন্য তাতে দেওয়া হয় হলুদের গুঁড়া। মাথার খুলি টুকরো টুকরো করতে শুরুতে ব্যর্থ হয় পাষণ্ড খুনিরা। তখন কোনোভাবেই মুখ দেখে যাতে চিহ্নিত করা না যায় সেজন্য মুখ থেকে মাংস আলাদা করে তুলে ফেলা হয়। পর্যায়ক্রমে সেগুলো ভর্তি করা হয় চারটি লাগেজে। সবশেষ হত্যাকান্ডের আলামত মুছে ফেলতে ফ্ল্যাটের মেঝে ব্লিচিং পাউডার দিয়ে ধুয়ে ফেলা হয়। লাগেজগুলো আরও কয়েকজনের মতো করে সিয়ামের কাছেও দেওয়া হয়। তবে পর্যায়ক্রমে সেগুলোর হাতবদল হয়। কিন্তু এমপি আনারকে জবাই কিংবা হাড় থেকে মাংস আলাদা করার কাজে সম্পৃক্ত ছিলেন না বলে বারবার দাবি করেছেন আমান।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, দীর্ঘদিনের পরিকল্পনার মাধ্যমে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমকে হত্যা করা হয়েছে। খুনিরা অনেক দিন ধরে এ হত্যাকান্ডের সুযোগ খুঁজছিলেন। গতকাল রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ঢাকার গুলশান ও ধানমন্ডির দুটি বাসায় এক-দুই মাস ধরে সংসদ সদস্য আনারকে হত্যার পরিকল্পনা হয়। ঢাকায় ধরা পড়ার সম্ভাবনা থাকায় হত্যার স্থান হিসেবে বেছে নেওয়া হয় কলকাতাকে। এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, আনারকে কৌশলে কলকাতায় নেওয়া হয়। খুনের পর হত্যাকারীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন। কী কারণে হত্যাকান্ডটি ঘটেছে তা বের করা হবে। তবে এখন মূল কাজ হলো, হত্যাকান্ডে জড়িতদের বের করা। এজন্য কলকাতা পুলিশ ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ একসঙ্গে কাজ করছে। তিনি বলেন, ‘আনারকে হত্যার পর লাশটি গুম করতে শরীর টুকরো টুকরো করে হাড্ডি ও মাংস আলাদা করা হয়। এরপর কেউ যাতে সন্দেহ করতে না পারে, এজন্য হলুদ মিশিয়ে ব্যাগে ভরে ওই বাসা থেকে বের করা হয়েছে। কিন্তু কোথায় লাশের খন্ডিত অংশ ফেলা হয়েছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।’ আনোয়ারুল আজিমের পুরো লাশ না পাওয়া গেলেও খন্ডিত লাশ পাওয়া যাবে বলে মনে করেন গোয়েন্দা কর্মকর্তা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর