তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য আছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের ১১তম দিনের আলোচনা সভা শেষে তিনি এ কথা জানান।
আলী রীয়াজ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের আজকের আলোচনায় প্রধান বিচারপতি নিয়োগ সংক্রান্ত দুটি বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। এগুলো হলো, সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদের বিদ্যমান ব্যবস্থা পরিবর্তন এবং রাষ্ট্রপতি আপিল বিভাগের বিচারপতিদের মধ্য থেকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করবেন। বিদ্যমান সংবিধানে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তবে, প্রধান বিচারপতি হিসেবে কর্মে নিযুক্ত জ্যেষ্ঠতম একজনকে না কর্মে জ্যেষ্ঠ দুইজনের মধ্যে একজন নিয়োগ করা হবে সেই বিষয়ে দুটি মত পাওয়া গেছে। কমিশন এ বিষয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোকে বলেছে আরেকটু বিবেচনা করে সুনির্দিষ্ট মতামত দেওয়ার জন্য। আশা করি পরবর্তী আলোচনায় এই বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছে যাব।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আলোচনার বিষয়ে তিনি বলেন, এই ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলো যে প্রস্তাব দিয়েছে, তা খানিকটা অগ্রগতি হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক প্রধানকে নিয়োগ করার ক্ষেত্রে আইনসভার মধ্য থেকে প্রস্তাব করা বা নিয়োগের ব্যবস্থা করা... এটাই জাতীয় ঐকমত্য কমিশন থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আজকে এই বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে মতামত পাওয়া গেছে। এই মতামতের ভিত্তিতে আরও সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব মতামত টেবিলে আছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য আছে। প্রতিটি রাজনৈতিক দল চায় তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা এমন হোক যা ত্রুটিহীন হয়। দীর্ঘদিনের আন্দোলন সংগ্রামের যাতে প্রতিফলন হয়। এছাড়া, ভবিষ্যতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা যেন বিতর্কের মধ্যে না পড়ে।
জরুরি অবস্থা ঘোষণা সংক্রান্ত আলোচনার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি বলেন, জরুরি অবস্থার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো দুইটি বিষয়ে একমত হয়েছে। সংবিধানের ১৪১ অনুচ্ছেদের ‘ক’ জরুরি অবস্থা ঘোষণার যে বিধান রয়েছে, তা সংশোধন করতে হবে। জরুরি অবস্থা ঘোষণার বিষয়টি যেন রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার না হয়। এই বিষয়গুলো আরও সুস্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করে রাজনৈতিক দলগুলো। এই কারণে বিষয়টি আরও যেন সুস্পষ্ট করা যায়, আর বিভিন্ন বিষয় সংযুক্ত করা যায়, তা নিয়েও আলোচনা চলছে। যেমন অভ্যন্তরীণ গোলযোগ কথাটি আছে... এখন এটি না রাখার বিষয়ে রাজনৈতিকদলগুলো একমত হয়েছে। তারা এটাও বিবেচনা করছে যে, বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ অন্য কারণে জরুরি অবস্থার বিধান কেমন হতে পারে; কীভাবে জরুরি অবস্থা ঘোষণা হলে অন্য ব্যবস্থাপনাগুলো কার্যকর করা যায় এবং কীভাবে জরুরি অবস্থা ঘোষণা হবে।
তিনি বলেন, বিদ্যমান ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষরে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন রাষ্ট্রপতি। এই বিষয়ে বিভিন্ন প্রস্তাব। ঐকমত্য কমিশন সেগুলো বিবেচনা করছে। কমিশন থেকে মন্ত্রিসভার অনুমতি নিয়ে বিধান যুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। কোনো কোনো রাজনৈতিকদল বলেছে, সংসদের কোনো কমিটি থেকে যেন জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়। এইগুলো আলোচনা চলছে। আগামী সপ্তাহে এই আলোচনাগুলো আরও সুস্পষ্টভাবে জরুরি অবস্থা বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসতে পারব।
আলী রীয়াজ বলেন, ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় অগ্রগতি হচ্ছে। যার থেকে আমরা আশাবাদী এই মাসের মধ্য একটি সনদ তৈরি করতে পারব। প্রতিদিনই আমাদের বেশ অগ্রগতি হচ্ছে। এগুলো তাড়াহুড়োর বিষয় নয়, ক্ষেত্রে বিশেষ শব্দ বাক্য বিবেচ্য হচ্ছে। সেগুলো বিবেচনা করেই অগ্রসর হচ্ছি। রাজনৈতিক দলগুলো খুবই আন্তরিক হৃদ্যতার সঙ্গে আলোচনা করে অগ্রসর হচ্ছে। পরস্পর পরস্পরের মতামত শ্রদ্ধা করছেন।
বিডি প্রতিদিন/কেএ