বিক্ষোভের মুখে শনিবার রাতে দেশ নাটক প্রযোজিত ‘নিত্য পুরাণ’ নাটকের প্রদর্শনী বাতিলের বিষয়ে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেছেন, দর্শকদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই নাটকের প্রদর্শনী বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি।
গতকাল সকালে অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে শিল্পকলার আয়োজনে যাত্রা উৎসব চলছে। আমি এবং নাট্যকলা বিভাগের পরিচালক ফয়েজ জহির সেখানে ছিলাম। নাট্যশালার সামনে বিক্ষোভ হচ্ছে শুনে আমি একাডেমি যাই। ততক্ষণে একাডেমির কর্মকর্তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছিলেন। এমতাবস্থায় আমি ব্যাকস্টেজে গিয়ে দেশ নাটকের সদস্যদের মনোযোগ দিয়ে উৎকৃষ্টমানের প্রযোজনা উপস্থাপনের পরামর্শ দেই। একই সঙ্গে বাবুকে তিরস্কার করি কুরুচিসম্পন্ন পোস্ট দেওয়ার জন্য। এর কিছুক্ষণ পর আবার ফোন আসে। এবার বিক্ষুব্ধ জনতা নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আমি একাডেমি ফিরে গিয়ে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলি।
তারা জানায়, যে সংগঠনের নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছে তাদের দলের একজন সদস্য স্বৈরাচারের দোসর। ওই নির্দিষ্ট ব্যক্তির কারণে নাট্যদলের প্রদর্শনী করতে দেব না। আমি তাদের বুঝিয়েছি, দেশ নাটকের অনেক সদস্যও জুলাই গণ অভ্যুত্থানে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন। তাদের মধ্যে গুলিবিদ্ধও আছেন। আমি তাদের বুঝিয়েছি, শিল্পকলার কণ্ঠ যেন কেউ রোধ না করে।
শেখ হাসিনার মতো স্বৈরাচার আমরা হতে চাই না। ২০১৮ সাল থেকে আমি নাটক করে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছি। আরও সুবিতর্কের পরে তারা উত্তেজিত হয়ে পড়ে। তাদের একজন নিজেকে রিকশাচালক পরিচয় দিয়ে জানায়, জুলাই আন্দোলনে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। পরে শিল্পকলা একাডেমি আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হলে আমি এটাও বলেছি, আমার বুকের ওপর দিয়ে যান। তখন আমাকে পাশ কেটে দেয়াল টপকে কয়েকজন ঢুকে পড়ে। যখন গেট ভেঙে ফেলে, তখন আমরা দেশ নাটকের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে প্রদর্শনী বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ তিনি উল্লেখ করেন, ‘অনেক চেষ্টা করেছি নাটকের প্রদর্শনী যেন হয়। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের ২২ জেলার শিল্পকলা একাডেমিতে হামলা হয়েছে। সেসব বিষয় বিবেচনায় রেখেই দর্শকদের নিরাপত্তার কথা ভেবে আমরা প্রদর্শনী বন্ধ করি। আমি ভিতরে গিয়ে দর্শকের কাছে ক্ষমা চেয়েছি।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সহায়ক হিসেবে আছে, আমরা জনতার সঙ্গে তাদের মুখোমুখি দাঁড় করাতে চাইনি। যারা নাটক করতে চায় তাদের নাটক করতে দিতে হবে। দর্শক তাদের নাটক দেখে বিবেচনা করবে, তাদের নাটক দর্শক দেখবে কি না। কোনো ব্যক্তির কারণে নাটকের দল যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।’