দেশের উপকূলীয় জেলার ৪৯ শতাংশ জমি লবণাক্ততার কারণে চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সৃষ্ট খরা বিপদ আরও বাড়াচ্ছে। খরার কারণে বছরে কৃষকের গচ্চা যাচ্ছে ৩ হাজার কোটি টাকা। এসব ক্ষতি পূরণে কৃষকদের শস্য বিমার আওতায় আনার আলোচনা রয়েছে কাগজে-কলমেই।
এ বিষয়ে কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘কৃষকের সুরক্ষার জন্য শস্য বিমা প্রয়োজন। শস্য বিমা দেশে বাস্তবায়ন হোক এ বিষয়ে আমরা নীতিগতভাবে একমত। কৃষক পর্যায়ে এটাকে জনপ্রিয় করতে কাজ চলছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিমার মাধ্যমে কৃষকের সর্বোচ্চ সুবিধা নিশ্চিত করতে মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। আন্তমন্ত্রণালয়ে বৈঠকের মাধ্যমে আমরা এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।’
বিশেষজ্ঞরা জানান, খরাপ্রবণ জেলাগুলোর আবাদি জমির ৬৪ শতাংশ খরায় ক্ষতিগ্রস্ত। প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা কারণে প্রতিবছরই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষক। ক্ষতিপূরণে কৃষকদের শস্য বিমার আওতায় আনা জরুরি। কিন্তু কিছু জটিলতার কারণে কৃষকের মাঝে এখনো জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি শস্য বিমা। এর মধ্যে বিমা কোম্পানিগুলোর সীমিত বাজার তথ্য, দুর্বল পণ্য উন্নয়ন, প্রাযুক্তিক দুর্বলতা, অদক্ষতায় এগোচ্ছে না শস্য বিমার উদ্যোগ। এ ছাড়া কৃষকদের আস্থা অর্জন, উচ্চ প্রিমিয়াম, ক্ষুদ্র কৃষকদের সাশ্রয়ী বিমা কাভারেজে চালু, প্রিমিয়াম দিতে আর্থিক সক্ষমতা বিবেচনায় নেওয়া এবং বিমা দাবি পরিশোধে কালক্ষেপণ বন্ধ করতে হবে। কৃষক ও গ্রামীণ জনগণের মধ্যে বিমা সচেতনতা বাড়াতে হবে।
কৃষি অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএলআরআই) সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রতিবছর আমাদের দেশে লবণাক্ততা, খরা ও বন্যার জন্য কৃষক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে। তাতে প্রায় হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হচ্ছে। এসব ক্ষতির হাত থেকে কৃষকদের বাঁচাতে শস্য বিমার আওতায় আনতে হবে। এ জন্য সরকারকে সর্বপ্রথম এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি আরও বলেন, গুটিকয়েক করপোরেট কোম্পানি শস্য বিমা চালু করলেও তা কৃষক পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেনি। বছর কয়েক আগে সরকার সিলেটের শস্য বিমা প্রকল্প হাতে নিলেও তা আলোর মুখ দেখেনি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এর তথ্যানুসারে, দেশে সব ধরনের ফসলের উৎপাদন ছাড়িয়েছে প্রায় ১০ কোটি টন। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যা, খরা, অতিবৃষ্টি, লবণাক্ততা, শৈত্যপ্রবাহসহ নানা সমস্যায় কৃষক বড় ধরনের ক্ষতির কবলে পড়েন। কৃষকদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে শস্য বিমা বা কৃষি বিমা সহায়ক শক্তি হিসেবে দাঁড়াতে পারে। বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান শস্য ও কৃষি বিমা চালু করলেও তা এখনো কৃষক বা কৃষি ক্ষেত্রে সেভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি।
এ বিষয়ে সিনজেনটা বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেদায়েত উল্ল্যাহ বলেন, ‘শস্য বিমার মাধ্যমে কৃষিতে টেকসই উন্নয়ন করা সম্ভব। এ জন্য সরকারের নীতি সহায়তা বাড়ানো প্রয়োজন। জাতীয় কৃষি নীতিতে এ বিষয়ে একটি স্বতন্ত্র অধ্যায় সংযোজন করতে হবে। এ ছাড়া বিমা বিধিমালায় শস্য বিমা বিষয়ে আলাদাভাবে বিস্তারিত ও সময়োপযোগী অধ্যায় সংযুক্ত করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিমা কার্যক্রম সঠিকভাবে চালাতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে যথাযথ আর্থিক সুবিধা বিশেষ করে ঋণ, ট্যাক্স ও ভ্যাট সুবিধা দিতে হবে। কৃষি, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট সংগঠনের সমন্বিত উদ্যোগে একটি উচ্চতর কমিটি থাকতে হবে।