রঙিন স্বপ্ন চোখে নিয়ে কর্মের সন্ধানে দেশ, পরিবার-পরিজনের মায়া ছেড়ে বিদেশে পাড়ি দেন প্রবাসীরা। নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে ব্যয় করেন মূল্যবান সময়, দিয়ে যান শ্রম। কেউ নিজের প্রচেষ্টায় ছোঁয়া পান সফলতার। আবার কেউবা ছুটতে থাকেন অধরা স্বপ্নের পিছু। স্বপ্ন পূরণের আশায় বিদেশে পড়ে থাকা শ্রমিকরা বিভিন্ন সময় নানা দুর্ঘটনায় চলে যান না ফেরার দেশে। আত্মীয় ও স্বজনদের সঙ্গে অনেকের হয় না শেষ দেখাটুকুও।
বাংলাদেশ দূতাবাস, বাংলাদেশ কনস্যুলেট ও নিকট আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে কোম্পানি-স্পন্সরদের থেকে ক্ষতিপূরণ মিললেও পরিবারের সদস্যদের থেকে চিরতরে হারিয়ে যান এসব শ্রমজীবী মানুষ।
তথ্য সূত্রে পাওয়া গেছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবী থেকেই শুধু গত তিন মাসে লাশ হয়ে দেশে ফিরেছেন অর্ধশত প্রবাসী বাংলাদেশি। আবুধাবী দূতাবাস চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত স্বাভাবিক মৃত্যু, সড়ক দুর্ঘটনা, কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় কবলিত মৃত্যু, খুন ও আত্মহত্যা মিলে মৃত ৪৮ জন প্রবাসীর লাশ দেশে প্রেরণ করেছে। এছাড়াও গত বছর জানুয়ারী থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আবুধাবী থেকে দেশে পাঠানো হয়েছে ২০২ জন প্রবাসীর লাশ।
অন্যদিকে, ভিসা বন্ধ ও ভিসা পরিবর্তন করতে না পারায় ধীরে ধীরে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিক অবৈধ হয়ে যাচ্ছে। অবৈধ হওয়া শ্রমিকরা কোন ভাবে মৃত্যু বরণ করলে ভবিষ্যতে তাদের লাশ দেশে প্রেরণের ক্ষেত্রে বড় ধরণের সমস্যার আশংকা করছে আবুধাবীস্থ দূতাবাস। এমনকি লাশ দেশে প্রেরণে সম্পূর্ণ খরচও বহন করতে হতে পারে দূতাবাসকে, জানালেন আবুধাবীস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম সচিব আরমান উল্লাহ চৌধুরী।
তিনি বলেন, 'ভিসার সমস্যা সমাধান না হলে ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়া অনেক শ্রমিক অবৈধ হয়ে যাবে। যত দিন যাবে প্রবাসীরা ততবেশি অবৈধ হবে। আর অবৈধ প্রবাসীরা মারা গেলে লাশ দেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে স্পন্সার থেকে কোন সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এতে করে সম্পূর্ণ খরচ দূতাবাসকে বহন করতে হবে। কারণ ভিসার মেয়াদ উর্ত্তীণ ও অবৈধ শ্রমিকদের স্পন্সার থাকে না। যদি ভিসার সমস্যা সমাধান না হয়, তবে বিষয়টি আমাদের জন্যে বড় ধরণের সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।'
তিনি আরো বলেন, 'অবৈধ শ্রমিকদের ইন্স্যুরেন্সও থাকে না। তারা কোনো দুর্ঘটনায় কবলিত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে বা চিকিৎসা নিলে সে খরচ নিজেদেরই বহন করতে হবে। আর বড় কোন দুর্ঘটনা হলেও এদেশ থেকে তারা কিছুই পাবে না, এমনকি ব্লাডমানিও না। বিষয়টি আমাদের জন্য খুব খারাপ হচ্ছে। দেখা গেলো কেউ দুর্ঘটনায় মারা গেছে অথচ ব্লাডমানি পেলো না, তখন নিহতের পরিবার শূণ্য হাতেই থাকতে হবে। লাশ ফেরত নিতেও পড়তে হবে তাদের নানা ঝামেলায়।
বিডি-প্রতিদিন/ ২৮ মার্চ ১৫/ সালাহ উদ্দীন