রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা মুসলমানেরা যাতে নির্ভয়ে নিজ বসতভিটায় ফিরতে পারে তেমন পরিবেশ তৈরীর জন্য।
২৩ জুলাই সোমবার অপরাহ্নে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মহাসচিবের মিয়ানমার বিষয়ক নতুন বিশেষ দূত ক্রিস্টিনে শ্র্যানার বারগেনার (Christine Schraner Burgener ) সম্প্রতি মিয়ানমার সফরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন নিরাপত্তা পরিষদের কাছে। এটি ছিল নিরাপত্তা পরিষদের সামনে মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণের প্রথম ঘটনা। সেখানে বিদ্যমান সংকট এবং পূর্বাপর পরিস্থিতির ধারা বিবরণী দেন।
এ সময় উদ্বাস্তু বিষয়ক সহকারি হাই কমিশনার (UNCHR) ভলকার টার্ক, ইউএনডিপির এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের সমন্বয়কারি এবং কান্ট্রি অফিসের লিঁয়াজো সংক্রান্ত পরিচালক ক্লেয়ার ভ্যান ডারভিরেনও নিজ নিজ অভিজ্ঞতা বিবৃত করেন এবং বিশেষ দূতের সাথে ঐক্যমত পোষণ করেন। বিদ্যমান সংকট এবং তার ভয়াবহতা উপলব্ধিতে নিয়ে জাতিসংঘের যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর আলোকপাত করা হয় এ সময়।
নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যগণ জাতিসংঘের মানবাধিকার, ইউএনডিপির সাথে মিয়ানমারের সমঝোতা-স্মারক অনুযায়ী বাংলাদেশের সাথে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বিশেষভাবে উল্লেখ করেন।
মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা মুসলমানদের মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ নৃশংসতার যে অভিযোগ রয়েছে সে ব্যাপারে স্বাধীন এবং স্বচ্ছতায় পূর্ণ তদন্তের ওপরও জোর দেন নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা (Security Council members again stressed “the importance of undertaking transparent and independent investigations in allegations of human rights abuses and violations)। এ সময় মিয়ানমার সরকার ৩১ মে স্বাধীন একটি তদন্ত কমিশন গঠনের যে ঘোষণা দিয়েছে সে বিষয়টিও উল্লেখ করেন সদস্যরা।
নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা আরো মনে করেন যে, রাখাইন স্টেটে বর্বরোচিত আক্রমণে গৃহত্যাগে বাধ্য হওয়া লোকজনসহ দেশ ত্যাগী রোহিঙ্গা মুসলমানেরা যাতে নিরাপদে সসম্মানে বসতভিটায় স্বেচ্ছায় ফিরতে আগ্রহী হন, তেমন পরিবেশ তৈরী করতে হবে মিয়ানমারকে (The council stressed the need to step up efforts, including through providing assistance to the social and economic development, in order to create conditions conducive to the safe, voluntary and dignified return of Rohingya refugees and internally displaced persons to their homes in Rakhine state)। একইসাথে হামলায় ক্ষতি হওয়া সহায়-সম্পদ ফিরিয়ে দেয়া তথা পুনর্বাসিত হবার প্রয়োজনীয় অর্থ সহায়তার ব্যবস্থাও নিশ্চিত করার ব্যাপারে নিরাপত্তা পরিষদ একমত পোষণ করেন। রোহিঙ্গা মুসলমানদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথ সুগম করার ব্যাপারেও মিয়ানমারকে অঙ্গিকারাবদ্ধ হতে হবে।
মিয়ানমার বিষয়ক মহাসচিবের এই বিশেষ দূত বলেছেন, মিয়ানমারের নেতারা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে আগ্রহী। তবে রাখাইন প্রদেশে শুধুমাত্র রোহিঙ্গা এবং সরকারের মধ্যেই বিরোধ নয়, সংখ্যালঘিষ্ট মুসলমান এবং রাখাইনের অপর জাতি-গোষ্ঠি তথা বৌদ্ধরাও মুসলিম বিদ্বেষী।
বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন