কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে বহির্বিশ্বে সরকারবিরোধী অপপ্রচার চলছে খুব জোরেশোরে। ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং বিবিসি, আলজাজিরা ও সিএনএনসহ বিভিন্ন বিদেশি গণমাধ্যমে প্রচার হচ্ছে নানা ধরনের পক্ষপাতমূলক সংবাদ ও বিভ্রান্তিকর তথ্য। বাদ যায়নি ভারতীয় গণমাধ্যমও। কোথাও কোথাও প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিক্ষোভ করার খবরও পাওয়া গেছে। ‘রেমিট্যান্স শাটডাউন’ নামে সামাজিক মাধ্যমে প্রচারণা চালাতেও দেখা গেছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের টার্গেট করে। তবে এসব অপপ্রচার ঠেকাতে তেমন কোনো তৎপরতাই দেখা যাচ্ছে না বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোর।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটি চক্র গত কয়েক বছর ধরেই বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের মধ্যে নানা ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে তাদের মনে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ তৈরি করছে। এই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলনেও। এ আন্দোলন ঘিরে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনার ছবি ও ভিডিওর সঙ্গে নানা ধরনের স্লোগান, গান যুক্ত করে প্রচার করা হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে। ছড়ানো হচ্ছে নানা ধরনের মিথ্যা তথ্য ও গুজবও। এর বিপরীতে সরকারের পক্ষ থেকে ঘটনাগুলোর সঠিক তথ্য প্রচার না থাকায় ছড়িয়ে দেওয়া ছবি, ভিডিও দেখেই ক্ষোভে ফুঁসে উঠছেন বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা।
বিশিষ্টজনরা বলছেন, সরকারের বিরুদ্ধে হাজারো মিথ্যা তথ্য, গুজব ছড়ানো হলেও প্রবাসীদের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছে দিতে পুরোপুরি ব্যর্থ দূতাবাসগুলো। এখন প্রশ্নে হচ্ছে, কেন তারা ব্যর্থ হচ্ছেন? কোনো সঠিক কারণ আছে? নাকি তারা ইচ্ছা করেই এড়িয়ে যাচ্ছেন সব। এখন সময় হয়েছে দূতাবাসগুলোতে যারা দায়িত্বরত তাদের কমিটমেন্ট যাচাই করার। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যেসব অপপ্রচার চলছে, তা রোধে আমাদেরে দূতাবাসগুলোর কার্যকর কোনো ভূমিকা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। বিবিসি, আলজাজিরাসহ বিভিন্ন বিদেশি মিডিয়া একপেশে সংবাদ প্রচার করছে। সামাজিক মাধ্যমেও প্রবাসীদের টার্গেট করে মিথ্যাচার করা হচ্ছে। এসব প্রতিরোধে দূতাবাসগুলোর কোনো ভূমিকাই নেই। তারা সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ। তিনি বলেন, এখন দেখতে হবে, দূতাবাসগুলোর দায়িত্বে কারা রয়েছেন। তাদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রয়েছে, নাকি অন্য কিছু। যদি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থাকত তাহলে তারা তো কোনো না কোনো ভূমিকা নিতেন। তিনি আরও বলেন, আমাদের দূতাবাসগুলোতে যারা কর্মরত আছেন, এখন সময় এসেছে তাদের কমিটমেন্ট যাচাই করা। তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া জরুরি।
সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন্দ্র করে বাংলাদেশ ছাড়াও বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরবসহ যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা কয়েকটি দেশে বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সৌদিতে প্রায় ৭০-এর মতো বাংলাদেশি নাগরিক আটকের তথ্য এসেছে গণমাধ্যমে। এর মধ্যে আমিরাত সরকার ৫৭ বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করেছে এবং বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছে। এ ছাড়া সৌদিতে ১০ জন আটকের তথ্য শোনা যাচ্ছে। কেন এবং কারা বিক্ষোভ করেছে, তা জানতে বিদেশের বাংলাদেশ মিশনগুলোতে চিঠি দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে মিশনগুলোকে বাংলাদেশের আন্দোলন কেন্দ্র করে হওয়া বিক্ষোভের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের বার্তা দেওয়া হয়েছে। সংগ্রহ করা তথ্যের বিষয়ে ঢাকায় প্রতিবেদন পাঠাতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, কোথাও কোথাও বিক্ষোভ হয়েছে, এমন খবর আমরা জেনেছি। তাই বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোয় চিঠি পাঠিয়েছি। আমরা জানতে চেয়েছি কারা, কী বিষয়ে বিক্ষোভ করছে। এ নিয়ে মিশনগুলো যে দেশে কাজ করে, সেখানকার সরকারের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে আমাদের জানাবে। এতদিন আমরা আমাদের মিশনগুলোর মাধ্যমে এখানকার পরিস্থিতি তাদের অবহিত করেছি, যাতে তারা তাদের দেশের গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত গুজব ও অসত্য তথ্যে বিভ্রান্ত না হয়। এবার আমরা তাদের সহায়তা চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। আন্তর্জাতিক মাধ্যমেও পক্ষপাতমূলক প্রতিবেদন এসেছে। সে প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের বক্তব্য যাতে তুলে ধরে, সেটি চিঠিতে বলা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।