ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে শুরু হয়েছে ইউরোপের সবচেয়ে বড় প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনভিত্তিক মেলা ভিভাটেক ২০২৫। চার দিনব্যাপী এ আয়োজনে উঠে এসেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, নতুন প্রযুক্তি নেতৃত্ব ও নবীন উদ্ভাবকদের সৃজনশীল চিন্তার প্রকাশ।
ভিভাটেক অনুষ্ঠিত হচ্ছে প্যারিসের ১৫ তম অ্যারোন্ডিসমেন্টে অবস্থিত পোর্ত দ্যো ভের্সাই সম্মেলন কেন্দ্রে। এ বছরের মূল বিষয় বাস্তব জীবনে এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ। উদ্বোধনী দিনে বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান, বিনিয়োগকারী, উদ্ভাবক ও নীতিনির্ধারকেরা একত্রিত হন এই গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চে।
প্রথম বক্তব্য দেন এনভিডিয়া-এর প্রধান জেনসেন হুয়াং, যিনি জানান, জার্মানিতে তাদের প্রথম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভিত্তিক মেঘ-অবকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে। আগামী দুই বছরে ইউরোপজুড়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি সক্ষমতা দশগুণ বাড়বে বলেও জানান তিনি।
বিশেষ একটি পর্বে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাঁক্রো-এর সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেন প্রযুক্তি জগতের কয়েকজন শীর্ষ নেতা। তারা নৈতিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা উন্নয়ন, ইউরোপের প্রযুক্তিগত স্বায়ত্তশাসন এবং সরকার ও নতুন উদ্যোক্তাদের মধ্যে সহযোগিতার গুরুত্ব তুলে ধরেন। ম্যাকরোঁ বলেন, "কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শুধু প্রযুক্তির বিষয় নয়, এটি মূল্যবোধের বিষয়।"
বাংলাদেশের গর্বিত উপস্থিতি
বিশ্বমঞ্চে এ বছর গর্বের সঙ্গে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ। প্যারিসের সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশের নিজস্ব প্যাভিলিয়নে ১৪টি নতুন প্রযুক্তিনির্ভর প্রতিষ্ঠান তাদের উদ্ভাবন তুলে ধরেছে। এর মধ্যে রয়েছে এনার্জি, বিডিটাস্ক, কোডমলি, ওয়াইলোলো এবং টাইকন।
প্রতিনিধি দলের মতে, এ প্রদর্শনী শুধু নিজেদের দেখানোর সুযোগ নয়, বরং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ এবং ভবিষ্যৎ সহযোগিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক উন্মোচন করেছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি বৈশ্বিক কোম্পানির সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে বলেও জানান তারা।
এবারের সম্মেলনের একটি বড় আকর্ষণ হচ্ছে এআই এভিনিউ। যেখানে ১০০-এরও বেশি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান পরিবেশ, স্বাস্থ্যসেবা, শহর ব্যবস্থাপনা এবং জ্বালানি খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ভর বাস্তবসম্মত সমাধান প্রদর্শন করছে। দর্শনার্থীদের মতে, এটি আগামী দিনের প্রযুক্তি বাস্তবায়নের পথ নির্দেশ করছে।
আয়োজকদের দেওয়া তথ্যমতে, এ বছর প্রায় ৯৫ হাজার অতিথি এবং দুই হাজার পাঁচশোর বেশি নতুন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ভিভাটেকে অংশ নিচ্ছে। এই বিপুল অংশগ্রহণ ভিভাটেককে বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী প্রযুক্তি মঞ্চে পরিণত করেছে।
টেক বিশ্লেষকদের মতে, এখন ভিভাটেক কেবল একটি প্রদর্শনী নয় এটি একটি দিকনির্দেশক, যেখানে নির্ধারিত হচ্ছে মানবিক ও নৈতিক প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ। আর এই জায়গায় বাংলাদেশের সক্রিয় ও সম্মানজনক অংশগ্রহণ নিঃসন্দেহে এক গর্বের অধ্যায়।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল